সরকারের বরাদ্দ করা টাকা এসে পড়েছিল। কিন্তু প্রকল্প নির্মাণের জন্য জমি পাওয়া যায়নি। এই অভিযোগ তুলে মুকুটমণিপুর জলাধার লাগোয়া এলাকায় কয়েকটি দোকান তৈরির টাকা স্টেডিয়াম তৈরির কাজে ব্যয় করল খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতি।
সিপিএম পরিচালিত খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতির দাবি, দোকান তৈরি করার জন্য কংসাবতী সেচ দফতর তাদের জমি দেয়নি। ফলে সরকারি টাকা পাওয়ার পরেও প্রস্তাবিত প্রকল্প বাতিল করতে হয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির এই দাবি মানতে নারাজ কংসাবতী সেচ দফতর। তাদের পাল্টা দাবি, পঞ্চায়েত সমিতি জমি নেওয়ার জন্য লিখিতভাবে প্রস্তাব দেয়নি। তাই দোকান তৈরি করার ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। মুকুটমণিপুরে দোকান তৈরি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকার বেকার যুবকেরা। তাঁদের বক্তব্য, ওই দোকান তৈরি হলে আমরা দোকানগুলি ভাড়া নিয়ে ব্যবসা শুরু করতাম। কিন্তু, প্রশাসনের আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিদের উদাসীনতার জন্যেই তা হল না। স্থানীয় গোড়াবাড়ি পঞ্চায়েতের সিপিএমের প্রধান চন্দনা মাহাতোর ক্ষোভ, “স্থায়ী দোকান তৈরি হলে এলাকার কিছু যুবকের কর্মসংস্থান হত। পাশাপাশি পর্যটকদেরও সুবিধে হত। কিন্তু সেচ দফতরের আপত্তিতে সমগ্র পরিকল্পনা ভেস্তে গেল।”
মুকুটমণিপুর জলাধারের পাশে বর্তমানে কয়েকটি দোকান রয়েছে। সেখানে জেলার বিভিন্ন শিল্প সামগ্রী বিক্রি করা হয়। অধিকাংশ দোকান অস্থায়ীভাবে তৈরি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জলাধার লাগোয়া এলাকায় ১২টি দোকান ও তিনটি ‘ডর্মিটরি’ তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০০৪ সালে এই জলাধার লাগোয়া তিন একর জায়গার উপরে ১২টি স্টল তৈরি করার জন্য আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছিল প্রায় ২৩ লক্ষ টাকা। ২০০৬ সালে সাড়ে ১৩ লক্ষ টাকা সরকার বরাদ্দ করে। কিন্তু তারপরে কাজ একটুও এগোয়নি। পঞ্চায়েত সমিতির দাবি, জমি নিয়ে বিপত্তির জন্যই স্টল তৈরি করার কাজ দীর্ঘদিন আটকে ছিল। বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রশাসন তাই ওই স্টল তৈরি করার প্রকল্প করে দেয়। সেই টাকা ব্যয় করা হয় খাতড়ায় স্টেডিয়াম নির্মাণের কাজে। খাতড়ার বিডিও বুদ্ধদেব পান বলেন, “মুকুটমণিপুরে স্টল তৈরি করার জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। ওই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হওয়া সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা খাতড়ায় স্টেডিয়াম তৈরির কাজে ব্যয় করা হয়েছে।” খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের রিনা চৌধুরী বলেন, “বরাদ্দ টাকা ফেরত চলে যেত। সে জন্য ওই টাকা স্টেডিয়াম নির্মাণের কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।” তিনি জানান, এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন সম্মতি দিয়েছিল।
এই প্রকল্পের টাকা বরাদ্দ হয়েছিল তৎকালীন খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের ভাগ্যবান হেমব্রমের আমলে। তাঁর অভিযোগ, “স্টল তৈরি করার জন্য টাকা আসার পরে সেচ দফতরের কাছে জমি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেচ দফতরের কংসাবতী বিভাগ জলাধার লাগোয়া জমি ব্যবহার করা নিয়ে আপত্তি জানায়। তাই কাজ শুরু করা যায়নি।” খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতির বর্তমান সভাপতি সিপিএমের রিনা চৌধুরীও ভাগ্যবানবাবুর তোলা অভিযোগ সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, “জমি না পাওয়ার জন্যেই স্টল তৈরির কাজ শুরু করা যায়নি।” পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন ও বর্তমান সভাপতি জমি চেয়ে সেচ দফতরের কাছে আবেদন করা হয়েছিল বলে দাবি করলেও, কবে করেছিলেন তা জানাতে পারেন নি। কংসাবতী সেচ দফতরের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার ২ স্বপন রায় বলেন, “জলাধারের লাগোয়া জমি ব্যবহার করার জন্য সেচ দফতরের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন। খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতি দোকান তৈরি করার জন্য জমি চেয়ে আবেদন করেছিল বলে জানা নেই। তাই বিনা অনুমতিতে তাঁরা ওই জমিতে কোনও নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারেন না। সরকারি নিয়মেই তাতে বাধা পড়েছে। আমাদের কোনও দোষ নেই।” খাতড়ার মহকুমাশাসক দেবপ্রিয় বিশ্বাস বলেন, “ওই প্রকল্পটি বাতিল হয়েছে। তবে পরবর্তীকালে সেচ দফতর অনুমতি নিয়ে মুকুটমণিপুরে দোকান তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হবে।” |