|
|
|
|
|
|
for ENGLISH |
আগে ভাবো, তুমি
কী লিখতে চাও
শেখাচ্ছেন জয়ী লাহিড়ী |
|
দেখবে এমন অনেক মানুষ থাকেন যাঁদের ব্যবসায়িক বুদ্ধি রীতিমতো ভাল। কিন্তু ব্যবসা-সংক্রান্ত কোনও মেমো, রিপোর্ট বা চিঠি লিখতে গেলেই তাঁরা কেমন ঘাবড়ে যান। যেটা বলতে চাইছেন সেটা লেখায় প্রকাশ করতে গেলেই তাঁদের সব কিছু কেমন যেন গুলিয়ে যেতে শুরু করে কী লিখবেন, কী ভাবে লিখবেন, লেখার সময়ে বানান, ব্যাকরণ বা বয়ান কী ভাবে ঠিক রাখবেন, এই সব নিয়ে শুরু হয়ে যায় টেনশন।
কোনও ব্যবসায়িক কাজ যদি ছোট ছোট ভাগে ভেঙে নেওয়া যায়, তা হলে সেটা করতে অনেক সুবিধে হয়। ব্যবসার মতো লেখার ক্ষেত্রেও ঠিক একই পন্থা খাটে। ভাল লেখার প্রথম ধারই হল সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং স্বচ্ছ চিন্তাধারা। তবে, এর জন্য চাই তিনটে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ এক, প্রথমে লেখাটার সম্বন্ধে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করো। লেখাটা কী ভাবে লিখবে সেটার একটা ছক কষে নাও। দুই, যা তথ্য তুমি সংগ্রহ করেছ সেগুলিকে গুছিয়ে নিয়ে একটা প্রাথমিক লেখা তৈরি করো। এতে লেখার একটা কাঠামো তৈরি হয়ে গেল। তিন, এ বার নতুন ভাবনা চিন্তা যা কিছু, লেখার মধ্যে তুমি ঢুকিয়ে দিতে পারবে দরকার মতো সম্পাদনা/ কাঁটাছেঁড়া করে। এই বার সেটাকে টাইপ করে প্রুফরিডিং করিয়ে নেওয়ার পর পাঠিয়ে দিতে পারো ছাপাতে।
যে কোনও ব্যবসায়িক লেখায় কয়েকটি বিশেষ দিক থাকে। যেমন, গোড়াতেই ঠিক করে নিতে হবে, লেখাটার উপলক্ষ কী? কেন আমি এটা লিখছি? আমি কী কোনও নতুন সামগ্রীর কথা বলছি, নাকি কোনও পুরনো সামগ্রীর ভোল পাল্টাতে চাইছি? লেখাটার মাধ্যমে কিছু তথ্য পেশ করছি? না কারও কাছে কোনও সাহায্য প্রার্থনা করছি? খুব সংক্ষেপে তোমার উপলক্ষকে লেখার মধ্যে প্রকাশ করতে হবে। কী লিখবে সেই বিষয়ে নিজের ধারণা পরিষ্কার করতে অন্যান্যদের সঙ্গে কথাবার্তাও বলে নিতে পারো।
দুই, তোমার পাঠকদের কথা চিন্তা করো। ভাবো, কারা এই লেখাটা পড়বেন? লেখাটার মাধ্যমে তুমি কাদের প্রভাবিত করতে চাইছ? তাঁরা লেখাটি পড়ে কী জানতে পারবেন? এই বিষয়ে তাঁরা আগে থেকেই কতখানি জানেন? লেখাটার মাধ্যমে তুমি কি তাঁদের কোনও কিছু বোঝাতে চাইছ? তাঁরা কী চান? মুনাফা, স্বাস্থ্য, আরাম, সাশ্রয়? |
|
ছবি: সুমন চৌধুরী |
তিন, সব সময়ে নিজেকে পাঠকের জায়গায় বসিয়ে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিষয়টাকে চিন্তা করার চেষ্টা করবে। তোমাকে বুঝতে হবে, তোমার লেখাটার বক্তব্য কী? কী বলতে চাইছ? ধরা যাক, কোনও সংস্থার বার্ষিক ফল সম্বন্ধে তোমাকে রিপোর্ট তৈরি করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সেলস্-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট, মার্কেটিং ম্যানেজার, সংস্থার প্রেসিডেন্ট এবং শেয়ারহোল্ডার প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা রিপোর্ট তৈরি করা উচিত। কারণ প্রত্যেকেরই বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞানের পরিধি আলাদা। ফলে প্রত্যেকের জন্যেই তোমাকে তাঁদের বোঝার সুবিধা অনুসারে রিপোর্ট তৈরি করতে হবে।
দেখো, প্রথম দুটো প্রশ্নের উত্তর থেকেই কিন্তু তোমার তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর অনেকটাই পাওয়া যাবে আমার লেখার বক্তব্য কী? কী বলতে চাইছি আমি? লেখার সময়ে তোমাকে বুঝে নিতে হবে কোন তথ্যটা তুমি পাঠকদের জানাতে চাইছ আর কোন তথ্যটা এমনিই পেশ করছ। উদাহরণ সংস্থার যে বার্ষিক রিপোর্ট তুমি তৈরি করেছ তার মধ্যে সংশ্লিষ্ট পণ্যের বিক্রির হিসেব দিতেই পার। কিন্তু সেখানে পণ্যের ইতিহাস নিয়ে কোনও কথা উল্লেখ করার দরকার নেই, যদি না কোনও গ্রাহক আলাদা করে সেই সম্বন্ধে জানার আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন। অর্থাৎ তোমার বক্তব্য যেন যথাসম্ভব ছোট এবং বিষয়কেন্দ্রিক হয়।
সব শেষে, তোমার লেখার থেকে কী প্রতিক্রিয়া তুমি আশা করো? মেমো, রিপোর্ট বা চিঠি তুমি যেটাই লেখো না কেন সেটার বক্তব্যে যেন এটা স্পষ্ট থাকে যে পাঠকদের তুমি কী করতে বলছ। বা তাঁদের কাছে তুমি কী আশা করছ। উদাহরণস্বরূপ, কোনও গ্রাহকের কোনও পণ্য পৌঁছোতে দেরি হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে তুমি সংশ্লিষ্ট পরিবহণ অধিকর্তার কাছে একটা চিঠি লিখছ। তোমার লেখার বয়ানে তুমি কী দেবে সমস্যাটার তদন্তের জন্য আবেদন, না সেটার মীমাংসার পথ? সমস্যার বিশ্লেষণ চাইছ নাকি কোনও পরিকল্পনা চাইছ যার সাহায্যে গ্রাহকের পণ্যটি চিহ্নিত করা সম্ভব? আমরা কেউ কারও মনের কথা পড়তে পারি না। তাই পাঠককে যেটাই বলতে চাও না কেন, সেটা স্পষ্ট করে লেখো যাতে সে বুঝতে পারে তুমি তার কাছ থেকে কী চাইছ।
আজকের দিনে যে কোনও সংস্থায় বিভিন্ন স্তরের বিভিন্ন পদে পুরুষ এবং মহিলা, দুজনকেই কাজ করতে দেখা যায়। ফলে, এমন ভাষা এবং প্রসঙ্গ ব্যবহার করাই ভাল, যেটি লিঙ্গ-নিরপেক্ষ। যেমন,
বাদ দাও ----------------লেখো
Salesman/lady---------- Salesperson
Chairman--------------Chairperson
Fireman---------------Firefighter
Watchman-------------Guard/Security officer
Newsman--------------Reporter
Foreman---------------Supervisor
Policeman--------------Police-officer
Man-made--------------Artificial
Mankind----------------Humanity
বাণিজ্যিক চিঠি সম্পর্কে কয়েকটি কথা
বাণিজ্যিক সংযোগের একটি অপরিহার্য অঙ্গ হল চিঠি। কোনও তথ্য বা জিনিসের জন্য আবেদন থেকে শুরু করে পণ্য বা পরিষেবা বিক্রি, জনসংযোগ, গ্রাহকদের প্রশ্ন, যে কোনও বাণিজ্যিক কাজ সম্পন্ন করতে এই চিঠি ব্যবহার করা যায়।
এখন তো জনসংযোগের যুগ। ফোনে অথবা লোকের সাহায্যে এই সব কাজ তো করিয়ে নেওয়া যায় অনায়াসেই। কিন্তু খুব কম লোকেরই সময় থাকে নিজেদের গ্রাহকদের সঙ্গে দেখা করার। আবার দূর পাল্লায় টেলিফোন ব্যয়সাপেক্ষও বটে। তার চেয়েও বড় কথা, মানুষ যা কিছু শোনে তার মোটে এক চতুর্থাংশ মনে রাখে। ফলে তুমি মৌখিক ভাবে কিছু বললে সেটা গ্রাহক যে ঠিক শুনবেন বা বুঝবেন তার কিন্তু কোনও নিশ্চয়তা নেই। তাই কোনও টেকনিক্যাল বা বিস্তারিত তথ্য সংক্রান্ত লেখার ক্ষেত্রে লিখিত পদ্ধতিই হল সবচেয়ে সুরক্ষিত উপায়।
এ ছাড়া এই ধরনের চিঠি স্থায়ী নথি হিসেবে থেকে যায়। সংস্থার গুদামে কত পণ্য রয়েছে তা চিঠির মাধ্যমে নির্ধারণ যেতে পারে। কোনও গ্রাহকের অর্ডার সম্বন্ধে যদি কোনও প্রশ্ন ওঠে অথবা কোনও বাণিজ্যিক চুক্তি বিষয়ে জানতে হবে। সে ক্ষেত্রে কোম্পানির ফাইল দেখে আমরা সেই চিঠির কপি বার করে নিতেই পারি। কিন্তু ফোনে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এটা সম্ভব নয়।
অনেক সময় চিঠি লিখিত চুক্তি হিসেবেও কাজ করে। চিঠির মাধ্যমে যখন কোনও চাকরির অফার দেওয়া হচ্ছে, সেটা মানতে প্রাপক আইনত বাধ্য।
এ ছাড়া এই ধরনের চিঠি তোমার সঙ্গে গ্রাহক বা অন্যান্যদের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি করতে সাহায্য করে। কারণ ওটাই হল তোমার এবং তোমার সংস্থার পক্ষের প্রতিনিধি, তুমি যে ভাবে চিঠি লিখবে সেটাই তো পাঠকের মনে তোমার এবং তোমার বাণিজ্য সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি করবে।
প্রতি চিঠিই কোনও একটা বিশেষ উপলক্ষে লেখা হয়। তাই লেখার সময়ে চাই মনোযোগ ও যত্ন।
|
শ্রীলাহিড়ী ইউনাইটেডওয়ার্ল্ড স্কুল অব বিজনেস-এ কমিউনিকেশন স্কিল-এর শিক্ষক |
|
|
|
|
|