|
|
|
|
|
|
সাধারণ জ্ঞান, চেতনা, আর যথাযথ আচরণ |
জি ডি পি আই বেশ কঠিন ব্যাপার ঠিকই। প্রতিযোগিতাও তীব্র। তবে আসল কথা হল,
তোমার ধৈর্য ও নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ পরখ করে দেখা হয় এতে। ফলে ঠাণ্ডা
মাথায় পরিস্থিতি সামলাও। জানাচ্ছে প্রস্তুতি |
গ্রুপ ডিসকাশন আর পার্সোনাল ইন্টারভিউ। সংক্ষেপে জি ডি পি আই। ম্যানেজমেন্ট-এর প্রবেশিকা পরীক্ষার পরে এর মাধ্যমেই বিভিন্ন ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান বেছে নেবে আগামী দিনের ম্যানেজারদের। দেখে নেবে কার মধ্যে রয়েছে সেই নেতৃত্ব দানের যোগ্যতা। ম্যানেজমেন্ট-এর কাজকর্ম সামলানো কিন্তু মুখের কথা নয়। চার পাশের দুনিয়া সম্পর্কে একটা সামগ্রিক ধারণা তো থাকতেই হবে, কিন্তু তার পাশাপাশি চাই প্রচুর ধৈর্য, পরিস্থিতি সামলানোর ক্ষমতা, সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া, এক সঙ্গে সকলকে নিয়ে চলার দক্ষতা ইত্যাদিও। লিখিত পরীক্ষায় এই ধরনের সচেতনতা ও দক্ষতা যাচাই করা কঠিন। সেগুলো বিচার করে নেওয়ার জন্যই ওই জি ডি পি আই। এটাও কিন্তু সাধারণত বেশ কঠিন পরীক্ষা, তীব্র প্রতিযোগিতার ব্যাপার। অথচ, এর কোনও বাঁধাধরা পাঠ্যসূচি নেই। তাই এর জন্য প্রস্তুত হওয়ার পদ্ধতিটাও অন্য রকম। সংক্ষেপে কিছু পরামর্শ দেওয়া যাক।
প্রথমত, চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতির জন্য তোমাকে চার পাশের জগৎ সম্পর্কে জ্ঞান ও চেতনা যথাসম্ভব প্রখর এবং প্রসারিত করে তুলতে হবে। কারও পক্ষেই সব বিষয়েই সমান জ্ঞান লাভ করা সম্ভব নয়। সমসাময়িক ঘটনার সব কিছুই কি তুমি জানো? নিশ্চয়ই নয়। তবে চেষ্টা করো প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে কিছুটা ধারণা রাখতে। ধরা যাক, ভারতে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, সে বিষয়ে গ্রুপ ডিসকাশনে তোমাকে যোগ দিতে হল কিংবা ইন্টারভিউয়ে প্রসঙ্গক্রমে এই নিয়ে কথা উঠল। এখন, ভারতে কত খুচরো ব্যবসায়ী আছে, ছোট সংস্থার কাছ থেকে কী হারে বড় সংস্থাগুলি জিনিস কিনবে বা সরকারি যুক্তির ঠিক কোন কোন বিষয়ে আপত্তি তুলেছে অন্য দলগুলি সে বিষয়ে তুমি গড়গড় করে ‘সব পয়েন্ট’ বলে দেবে, এটা হয়তো তোমার কাছে আশা করা হবে না। কিন্তু বিষয়টা যেন একেবারে অপরিচিত না হয় তোমার কাছে। কী নিয়ে তর্ক হচ্ছে, তর্কে দু’পক্ষের মূল বক্তব্য বা যুক্তিগুলো কী, সে সম্বন্ধে একটা ধারণা থাকা জরুরি। তার পাশাপাশি যদি আর একটু বিশদ তথ্য তোমার আয়ত্ত থাকে, তা হলে তো কথাই নেই। ধারণা বা জ্ঞান সব কিছুর জন্যই কিন্তু খবরের কাগজে প্রতি দিন চোখ রাখতে হবে। সমস্ত খবর খুঁটিয়ে পড়ার সময় না থাকলেও সম্পাদকীয় অংশটা অন্তত পড়ার চেষ্টা কোরো। এতে যেমন নানা বিষয় সম্পর্কে একটা পরিষ্কার চিত্র পাবে, আবার বিশ্লেষণ করার ক্ষমতাও বাড়বে। |
|
গ্রুপ ডিসকাশন-এ সাধারণত কোনও একটি নির্দিষ্ট বিষয় দিয়ে দেওয়া হয় আলোচনার জন্য। বিষয়টি যদি তোমার পরিচিত হয়, তা হলে তো খুবই ভাল। না হলেও আলোচনায় অবশ্যই অংশ নেবে। গ্রুপ ডিসকাশন-এ যারা বেশির ভাগ সময়টাই চুপ করে থাকে, তারা কিন্তু অন্যদের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হয় তার কিছু সমস্যা আছে। হয় তার ভাষার ওপর সে রকম দখল নেই। নয়তো দ্রুত সে তার বক্তব্যকে গুছিয়ে বলতে পারে না। বিষয়টি তোমার অপরিচিত হলেও চিন্তার কিছু নেই। এ ক্ষেত্রে তোমাকে প্রথমে অন্যদের বক্তব্য মন দিয়ে শুনতে হবে। লক্ষ করো, কোনও জায়গায় কোনও অস্পষ্টতা আছে কি না। এ বার বক্তাকে সেটি স্পষ্ট করে বুঝিয়ে বলার অনুরোধের মাধ্যমে তুমি আলোচনায় অংশ নিতে পারো। আবার এমনও হতে পারে, অন্যরা যে যুক্তি দিচ্ছে, তার সঙ্গে তুমি একমত নও। এ ক্ষেত্রে তুমি তোমার যুক্তি পেশ করতে পারো। তবে, কোনও বিষয় জানা না থাকলে, জানার ভান কোরো না। এতে আখেরে তোমারই ক্ষতি হবে। অতিরিক্ত সক্রিয়তা দেখানোও এখানে উচিত নয়। তুমি একাই যা জানো বলে গেলে, বাকিদের এক রকম চুপ করিয়েই রাখলে তাতে অন্যরা তোমার জ্ঞানের ব্যাপারে হয়তো নিশ্চিত হতে পারবেন, কিন্তু ম্যানেজার হিসেবে তোমাকে ভাবতে পারবেন না। কারণ এক জন ভাল ম্যানেজার শুধু মাত্র ভাল বক্তাই নন, ভাল শ্রোতাও। অন্যদের বক্তব্য মন দিয়ে না শুনলে, তিনি কখনও ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। আর, একটা গোড়ার কথা হল, নিজের বক্তব্য অল্প সময়ে গুছিয়ে বলা। সেটা কিন্তু এক ধরনের আর্ট।
পার্সোনাল ইন্টারভিউ ব্যাপারটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। কঠিনও বটে। অনেকে মিলে একই সঙ্গে প্রশ্ন করা, তোমার না-জানা বিষয় নিয়ে ক্রমাগত খুঁচিয়ে যাওয়া, না পারলে কঠোর, এমনকী অপমানজনক মন্তব্য এমন নানা পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হতে পারে তোমাকে। প্রথম কথা হল, ঘাবড়ে গেলে চলবে না। সব সময় মনে রাখবে, এই পরিস্থিতিতে তোমাকে ইচ্ছে করেই ফেলা হচ্ছে, তোমার ধৈর্য ও নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ পরখ করে দেখার জন্য। কতটা ঠান্ডা মাথায় তুমি পরিস্থিতি সামলাতে পারো, চাপ কাটিয়ে উঠতে পারো, তার ওপরেই লক্ষ্য রাখবেন প্রশ্নকর্তারা। এমন হতেই পারে যে, কোনও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রছাত্রীকে ওয়াল্ট ডিজনি নিয়ে প্রশ্ন করা হল, যেটা সে মোটেই জানে না। এ ক্ষেত্রে নিজের সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়াই ভাল। তবে অবশ্যই বিনয়ের সঙ্গে। এর সঙ্গে নিজের সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট করে নাও। তোমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী, এবং কেন, তোমার চরিত্রের ইতিবাচক এবং দুর্বল দিকগুলো কী, কী এই সব নিয়ে একটা সুস্পষ্ট মতামত থাকা খুবই দরকার।
জি ডি পি আই কঠিন ঠিকই। প্রতিযোগিতাও এখানে ভীষণ। কিন্তু ভয় পেয়ে নিজের ওপর আস্থা হারিয়ো না। সমসাময়িক ঘটনা সম্পর্কে সচেতন থাকা, বুদ্ধিদীপ্ত উপস্থিতি, স্পষ্ট উত্তর, এবং আগাগোড়া সৎ থাকা এই বিষয়গুলির ওপর জোর দিলে অনেক কঠিন বাধাই পেরিয়ে যেতে পারবে অনায়াসে। |
|
|
|
|
|