বিপর্যয়ের গ্রাসে
‘জতুগৃহ’ থেকে বেঁচেও ফেরা হল না যুবকের
‘মৃত্যুর দরজা’ থেকে এক বার ফিরেছে ছেলে। আর কোনও শক্তি তাকে কেড়ে নিতে পারবে না এমনটাই বিশ্বাস ছিল বাবার। কিন্তু সেই বিশ্বাস ভেঙেচুরে ছেলে ঢলে পড়ল মৃত্যুর কোলে, ‘জতুগৃহ’ আমরি থেকে জীবিত ফিরেও।
শুক্রবার দমকলকর্মীরা উদ্ধার করার পরে সোনারপুরের বাসিন্দা, পেশায় পুলিশকর্মী বাবুলাল ভট্টাচার্যকে (৪০) অন্য হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শনিবার গভীর রাতে সেই হাসপাতাল থেকেই ফোন আসে তাঁর মৃত্যুসংবাদ নিয়ে। রবিবার সকালে ছেলের দেহ দেখেও যেন বিশ্বাস করে উঠতে পারছিলেন না বৃদ্ধ বাবা, বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য। আনমনা হয়ে ছেলের নিথর শরীরটার উপরে ফুল ছিটিয়ে যাচ্ছিলেন শুধু।
বাবুলাল ভট্টাচার্য
গত ৫ ডিসেম্বর জ্বর নিয়ে ঢাকুরিয়ার আমরি-তে ভর্তি হয়েছিলেন বাবুলাল। তাঁর শ্যালিকা চন্দ্রা পুততুণ্ড বলেন, “শুক্রবার সকালে হাসপাতালে আগুন লাগার খবর পেয়ে আত্মীয়স্বজনেরা ছুটে যাই। কিন্তু বাবুলালের কোনও হদিস পাইনি। বেলা ১১টা নাগাদ জানতে পারি ওকে সল্টলেক আমরি-তে ভর্তি করা হয়েছে।” ছেলের খোঁজে ওই হাসপাতালে ছুটে যান বিশ্বনাথবাবু। ওই রাতের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথাও শোনেন ছেলের মুখেই। বিশ্বনাথবাবু বলেন, “ওই রাতে বিছানা থেকে তুলে কয়েক জন নার্স লিফ্টের সামনে রেখে গিয়েছিলেন ওকে। টানা দু’ঘণ্টা বিষাক্ত ধোঁয়ার মধ্যে ওখানেই বসে ছিল ছেলে। তার পরে দমকলকর্মীরা উদ্ধার করে নীচে নিয়ে যান।” সেখান থেকেই অসুস্থ বাবুলালকে নিয়ে যাওয়া হয় সল্টলেকের হাসপাতালে। রবিবার সকালে সোনারপুরের রাজপুরের বাড়িতে বাবুলালের দেহ আনা হয়। ছেলের গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে বিড়বিড় করছিলেন শোকে বিধ্বস্ত বিশ্বনাথবাবু। “কালও তো বলল, ‘ভাল আছি। তবে কিছু খেতে পারছি না। পেটে খুব জ্বালা করছে।’ ডাক্তারকে বলেও এলাম। কী করল, কে জানে!” বলেই পুত্রবধূ রত্না ও ছ’বছরের নাতি দেবার্ঘ্যকে জড়িয়ে হাউহাউ করে কেঁদে ফেললেন।
টিভিতে আমরি হাসপাতালের খবর শুনে সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন খিদিরপুরের মুন্সিগঞ্জের বাসিন্দা সৈয়দ খান। সম্পর্কে তাঁর ভাইপো, উত্তরপ্রদেশের গাজিপুরের বাসিন্দা ইমরান খান (২০) ভর্তি ছিলেন ওই হাসপাতালেই। সারা সকাল হন্যে হয়ে খুঁজেছেন, ইমরানের কোনও খোঁজ মেলেনি। সৈয়দ বলেন, “সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতাল চষে ফেলি। কোথাও পাওয়া যায়নি। শেষে স্থানীয় তৃণমূল নেতা বাবলু করিমের সাহায্যে ওকে খুঁজে পাই।” পেটের সমস্যা থাকায় ইমরানকে কলকাতায় আনা হয়। আমরি থেকে উদ্ধারের পরে তাঁকে ভর্তি করা হয় সল্টলেকে, বাইপাস লাগোয়া একটি হাসপাতালে। শুক্রবার গভীর রাতে সেখানেই ইমরানের মৃত্যু হয় বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। সৈয়দ বলেন, “ফর্সা ছেলেটা কুচকুচে কালো হয়ে গিয়েছে একেবারে। এই ক’দিন একটা কথাও বলল না।” ইমরানের মৃতদেহ উত্তরপ্রদেশে পাঠানোর সব ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেতা বাবলু করিম।
অভিশপ্ত আমরি থেকে উদ্ধারের পরে শুক্রবার সকালেই অন্য একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয় নীলা দাশগুপ্ত (৮৫) নামে এক বৃদ্ধাকে। নার্সিংহোম সূত্রে জানা গিয়েছে, লেক টাউনের বাসিন্দা নীলাদেবীর অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। শ্বাসকষ্ট-সহ আরও কয়েকটি হৃদ্যন্ত্র সংক্রান্ত সমস্যা ছিল তাঁর। আইসিসিইউ-তে তাঁকে রাখা হয়। শনিবার রাত থেকেই নীলাদেবীর শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়া শুরু হয়। এ দিন দুপুরে ১২টা নাগাদ মারা যান তিনি। নার্সিংহোম-কর্তৃপক্ষ অবশ্য নীলাদেবী হৃদ্রোগে মারা গিয়েছেন বলে দাবি করেছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.