|
|
|
|
শোকস্তদ্ধ ঝাড়গ্রামের মাহাতো পরিবার, ‘ঝাঁ চকচকে আমরি’তে মৃত্যু-ফাঁদ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
সরকারি হাসপাতালের তুলনায় বেসরকারি হাসপাতালে ভাল চিকিৎসা হবেএই যুক্তিতে ঝাড়গ্রামের পুকুরিয়া গ্রামের বছর পঞ্চান্নর খগেন্দ্রনাথ মাহাতোকে ঢাকুরিয়ায় ‘ঝাঁ চকচকে’ আমরি হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন পরিজনেরা। শুক্রবার বিষ-ধোঁয়ায় দম আটকে খগেন্দ্রনাথবাবুর মৃত্যুর পর এখন নিজেদেরই দুষছেন স্ত্রী সুখলতাদেবী ও ছেলে নবকুমার।
ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়া বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের ওই কর্মীর চিকিৎসার খরচ বহন করছিল তাঁর দফতর। নবকুমার বলেন, “ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ বাবাকে কলকাতায় সরকারি হাসপাতালে ‘রেফার’ করেছিলেন। ব্যক্তিগত ভাবে ‘আমরি’তে রেখে চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য আমাদের ছিল না। কিন্তু বিদ্যুৎ দফতর চিকিৎসার খরচ বহন করায় বাবাকে ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালেই ভর্তি করাই। আত্মীয়দের কেউ কেউ অবশ্য বাবাকে কলকাতার সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। আমরা শুনিনি।” স্বামীর অকাল-মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ সুখলতাদেবী চোখের জল মুছে বলেন, “সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করালে এ ভাবে হয়তো ওঁকে হারাতাম না। ঝা-চকচকে ‘আমরি’ দেখে কে বলবে ওখানে মৃত্যু-ফাঁদ পাতা ছিল!”
|
খগেন্দ্রনাথ মাহাতো |
খগেন্দ্রনাথবাবুর এক ছেলে, তিন মেয়ে। ছেলে নবকুমার মাহাতো বেকার। তিন মেয়ের মধ্যে দু’জনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছোট মেয়ে সরস্বতী স্থানীয় স্কুলের একাদশ শ্রেণির বাণিজ্য শাখার ছাত্রী। গত দু’মাস
ধরে ঢাকুরিয়ায় ‘আমরি’তে চিকিৎসাধীন ছিলেন খগেন্দ্রনাথবাবু। অক্টোবরের গোড়ায় বাড়িতেই দ্বিতীয় বার হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। প্রথমে ভর্তি করানো হয় ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতালে। শরীরের একাংশ অসাড় হয়ে যাওয়ায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঝাড়গ্রাম থেকে তাঁকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়। গত ৬ অক্টোবর তাঁকে ঢাকুরিয়ায় আমরি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। খগেন্দ্রনাথবাবুর সম্পর্কিত-ভাই পানু মাহাতোই অধিকাংশ দিন কলকাতায় দাদাকে দেখতে যেতেন। শুক্রবার টিভিতে খবর দেখেই কলকাতায় ছুটে যান পানুবাবু। পানুবাবু বলেন, “চার তলার একটি ঘরের ২৪৪৫ নম্বর শয্যায় দাদা ভর্তি ছিলেন। কিন্তু ভিড়ের চোটে হাসপাতালে ঢুকতেই পারিনি। আমাকে চার তলায় উঠতেও দেওয়া হয় নি। দাদার খোঁজে সারাটা দিন এসএসকেএম, বাঙুর, আর এন টেগোর হাসপাতালে ছুটে বেড়িয়েছি। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার সন্ধ্যায় এসএসকেএম হাসপাতালে লাশের ভিড়ে দাদাকে খুঁজে পাই।” অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে ময়না-তদন্ত হওয়া ৪৯ নম্বর দেহটি খগেন্দ্রনাথবাবুর বলে শনাক্ত করেন পানুবাবু। এরপর সেখানে উপস্থিত শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতোর হস্তক্ষেপে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পৌঁছন পানুবাবু। পানবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী দশ হাজার টাকা দিয়েছেন। অ্যাম্বুল্যান্সে দেহ নিয়ে শুক্রবার রাত দু’টোয় ঝাড়গ্রামে পৌঁছই।” শনিবার দুপুরে গ্রামেই খগেন্দ্রনাথবাবুর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। |
|
|
|
|
|