বর্ধমান শহরের ছোট নীলপুরে রবিবার ‘হামলা’ চালিয়ে ডিওয়াইএফ আয়োজিত রক্তদান শিবির বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি, তৃণমূলের ‘অত্যাচারে’ বর্ধমান সদরে সংগঠনের জেলা অফিসও খোলা যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেছেন ডিওয়াইএফের রাজ্য সম্পাদক আভাস রায়চৌধুরী। তৃণমূল অবশ্য কোনও অভিযোগই মানেনি।
জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির জানান, রক্তদান শিবিরে ‘হামলা’র অভিযোগের তদন্ত চলছে।
ছোট নীলপুরের সংহতি ভবনে ডিওয়াইএফের বর্ধমান শহর ৪ লোকাল কমিটির অফিস। এ দিন সকালে ওই ভবন এবং লাগোয়া মাঠে বসেছিল রক্তদান শিবির। ডিওয়াইএফের শহর জোনাল কমিটির সম্পাদক অঞ্জন বিশ্বাস বলেন, “এটা আমাদের এক মাস আগে ঘোষিত কর্মসূচি। এ দিন মোট ৭৫ জনের রক্ত দেওয়ার কথা ছিল।” তাঁর অভিযোগ, “৩০ জন রক্ত দেওয়ার পরেই বিনা প্ররোচনায় তৃণমূলের লোকেরা লাঠি, রড নিয়ে শিবিরে আক্রমণ করে। হামলাকারীরা বলছিল, ‘রক্তদান করে জমি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা বন্ধ করতে হবে।’ মারধরের পাশাপাশি গালিগালাজও করছিল ওরা।” ‘হামলা’র প্রতিবাদে ঘটনার পরেই ডিওয়াইএফ কর্মী-সমর্থকেরা বর্ধমান থানায় আধ ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখান। এ দিন দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ডিওয়াইএফ কর্মীরা জটলা করছেন। সংগঠনের ছেঁড়া পতাকা গড়াগড়ি খাচ্ছে মাটিতে, ড্রেনে। ‘হামলা’র ঘটনায় তৃণমূলের ৭ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে এফআইআর করেছেন সিপিএমের বর্ধমান শহর ৪ নম্বর লোকাল কমিটির সম্পাদক আমজাদ আলি। ডিওয়াইএফের রাজ্য সম্পাদকের অভিযোগ, “এই হামলা পূর্ব পরিকল্পিত। তৃণমূলের লোকেদের হাতে মার খান আমজাদ আলি, রাজেশ দে, শৈলেন বসাক-সহ আমাদের দলের কিছু নেতা-কর্মী এবং কয়েকজন রক্তদাতা। বর্ধমান মেডিক্যালের ব্ল্যাড ব্যাঙ্ক থেকে আসা রক্ত সংগ্রহকারী স্বাস্থ্যকর্মীরাও রেহাই পাননি। জোর করে শিবির বন্ধ করিয়ে দেওয়া হয়। চলে ভাঙচুর।” বিকেলে বর্ধমানের পারকার্স রোডে জেলা কৃষকসভার কেন্দ্রীয় অফিসে ডাকা এক সাংবাদিক বৈঠকে আভাসবাবু অভিযোগ করেন, তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসে’ই বর্ধমান সদরের জেলখানা মোড়ে অবস্থিত ডিওয়াইএফের জেলা কমিটির অফিসটিও খোলা যাচ্ছে না। তাঁর সংযোজন, “গোটা রাজ্যেই রক্তদান শিবির করে আসছি আমরা। মাত্র এক বছর আমরা যদি রক্তদান শিবির না করি, তা হলে রাজ্যের প্রায় সমস্ত হাসপাতালে তার প্রভাব পড়বে।” ডিওয়াইএফের দু’টি অভিযোগই অস্বীকার করেছে তৃণমূল। তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশ দাবি করেছেন, তাঁদের কয়েকজন ওই শিবিরে রক্ত দিতে গিয়ে ‘অপমানিত’ হন। তার জেরে দু’পক্ষে ‘সামান্য বচসা’ হয়েছিল। আর তৃণমূলের জেলা নেতা ও নীলপুরের পর্যবেক্ষক সুশান্ত ঘোষ বলেন, “রক্তদানে বাধা দেওয়া অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। আমাদের দলের কেউ এই কাজ করে থাকলে, তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আমার মনে হয়, সিপিএম আমাদের লোকেদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করছে।” পক্ষান্তরে তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসে’ ডিওয়াইওফের জেলা অফিস বন্ধ থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “কেউ যদি ইচ্ছাকৃত পার্টি অফিস বন্ধ রাখে, তা হলে কী করার আছে? তেমন হলে ওরা (ডিওয়াইএফ) প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করুক।” |