বেতন না পেয়ে বিক্ষোভ এনবিএসটিসি কর্মীদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কোচবিহার |
নভেম্বরের শেষ দিনেও অক্টোবরের বেতন পেলেন না উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এনবিএসটিসি) কর্মীরা। বুধবার দফায় দফায় ডান ও বাম সংগঠন নির্বিশেষে এনবিএসটিসি কর্মীরা কোচবিহারে নিগমের সদর দফতরে ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে ঘেরাও করেন। রীতিমত মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পান এমডি।
রাজ্যের বিভিন্ন পরিবহণ-নিগমে অতীতে নানা সময়ে নিয়োগে অনিয়ম হয়েছেএই যুক্তি দেখিয়ে মহাকরণ থেকে নিগমগুলোর প্রতিটি কর্মীর বিস্তারিত তথ্য দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তা না পেয়ে অক্টোবরের বেতন আটকে দেয় অর্থ দফতর। সম্প্রতি তিনটি পরিবহণ-নিগমের কর্মীরা বেতনের টাকা পেলেও এনবিএসটিসি কর্মীরা বুধবার পর্যন্ত তা পাননি। এর প্রতিবাদে এ দিন বেলা সাড়ে এগারোটা থেকে প্রায় দু’ঘণ্টা দেড় ঘন্টা তৃণমূল কংগ্রেস-সমর্থিত কর্মীরা, এর পর সিটু-সমর্থিত কর্মীরা সংস্থার এমডি-কে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। কর্মীদের দাবি মেনে এমডি ডন বসকো লেপচা মুচলেকা দেন, ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে কর্মীদের বেতন দেওয়া হবে। |
|
বেতনের দাবিতে এনবিএসটিসির দফতরে বিক্ষোভ কর্মচারীদের। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব। |
অর্থ দফতর সূত্রের খবর, ওই নিগমের কর্মী-বিষয়ক বিস্তারিত তথ্য মেলেনি। তাই নিগমের কর্মীদের বেতন আটকে রাখা হয়েছে। ম্যানেজিং ডিরেক্টর অবশ্য বলেন, “শনিবারের মধ্যে বকেয়া বেতন মেটানো হবে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।” প্রায় একই সময়ে ডান ও বাম সমর্থক কর্মী ইউনিয়নের ওই বিক্ষোভের জেরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিবহণ ভবন। খবর পেয়ে কোচবিহার কোতোয়ালি থানা থেকে পুলিশ যায়।
এনবিএসটিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, সংস্থায় ৩ হাজার ৭০৫ জন স্থায়ী কর্মী ছাড়াও ৩২৯ জন চুক্তি ভিত্তিক কর্মী রয়েছেন। এ ছাড়া শতাধিক ঠিকা শ্রমিকও রয়েছেন। প্রতি মাসে তাঁদের বেতন দিতে গড়ে সাড়ে ৮ কোটি টাকা দরকার হয়। তার বড় অংশই রাজ্য সরকারের ভরতুকির উপরে নির্ভরশীল। রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে সংস্থার কর্মীদের পুরোপুরি বিবরণ জানতে চেয়ে এনবিএসটিসিকে চিঠি দেয় পরিবহণ দফতর। সংস্থায় কোনও ভুয়ো কর্মী রয়েছেন কি না সেই সম্পর্কে নিশ্চিত হতেই ওই তথ্য চাওয়া হয়। সময় মতো ওই তথ্য না-মেলায় ভরতুকি স্থগিত রাখা হয়। কয়েকদিন আগে পরিবহণ দফতর ভরতুকির পরিমাণ ৬৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬০ শতাংশে নামিয়ে আনার কথাও রাজ্য সরকারের তরফে সংস্থার কর্তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়। তার পরেও অক্টোবরের ভরতুকির টাকা বুধবারও অবধি সংস্থায় পৌঁছয়নি। সেই কারণে কর্মীদের অক্টোবরের বেতন বিলি করা যায়নি। |
এনবিএসটিসির বেতন বিভ্রাট, কে কী বলছেন |
“বাম আমলে বেআইনি ভাবে বহু নিয়োগ হয়েছে। আমরা সেগুলি খুঁজে বার করেছি। ওই সমস্ত বেআইনি নিয়োগের কারণে কাগজপত্র তৈরি করতে সমস্যা হচ্ছে। আমরা আপাতত মাইনেটা নিয়মিত দেওয়ার উপরে জোর দিয়েছি। গত শনিবারই মাইনে বাবদ টাকা পাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। মাইনে দিতে এত দেরি যাতে না-হয় তা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে।”
রবীন্দ্রনাথ ঘোষ,
এনবিএসটিসি’র চেয়ারম্যান |
“বাম আমলে ভর্তুকির টাকা যথাসময়ে আসত। কেবল সরকারি প্রক্রিয়ার জন্য দু’চারদিন দেরি হত। দু’মাস বেতন আটকে যাওয়ার ঘটনা বাম আমলে হয়নি।”
জগৎজ্যাতি দত্ত, সম্পাদক ,সিটুর এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন |
“বাম আমলে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে কর্মীদের ৬০ শতাংশ বেতন দেওয়া হত। সেটাই ছিল দস্তুর। এখন ধীরে ধীরে ছবিটা বদলাবে বলে আশা করছি।”
আবদুর রহমান, সভাপতি, ড্রাইভার্স অ্যান্ড শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন |
|
|