সম্পাদকীয় ১...
বিদ্বানের পাসপোর্ট
বিদ্বানকে পূজা করিবার পূর্বে দয়া করিয়া তাঁহার পাসপোর্টটি দেখিয়া লইবেন। ঠিক এই ভাষায় নহে, তবে এই মর্মেই ভারতে একটি আইন বর্তমান। ইন্ডিয়ান সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট অনুযায়ী, ভারতের নাগরিক নহেন, এমন ব্যক্তিকে দেশের ‘জাতীয় গুরুত্বসম্পন্ন’ কোনও প্রতিষ্ঠানের প্রধান পদে পাকাপাকি ভাবে বসানো চলিবে না। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি জাতীয় গুরুত্বসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান, অতএব তাহার প্রধান হইতে হইলে পাসপোর্টের উপর অশোক স্তম্ভের উপস্থিতি আবশ্যক। আই আই টি-গুলিতে পাঁচ বৎসর মেয়াদের চুক্তিতে প্রধান নিয়োগ শুরু হইবার পর আইনটি এড়াইবার একটি পথ খুলিয়াছিল। দ্বিতীয় বাধা ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নিয়ম বিদেশি নাগরিককে প্রতিষ্ঠানের প্রধান পদে বসাইতে হইলে বাৎসরিক বেতন অন্তত ২৫,০০০ ডলার হওয়া প্রয়োজন। ষষ্ঠ বেতন কমিশনের বদান্যতায় সেই বাধাও কাটিয়াছে। সিদ্ধান্ত হইয়াছে, পাসপোর্টের রং বিচার না করিয়াই প্রধান পদে যোগ্য প্রার্থী নিয়োগ করা হইবে।
সিদ্ধান্তটির তাৎপর্য প্রশ্নাতীত। শিক্ষা, জ্ঞান রাজনৈতিক ভূগোলের সীমা মানিয়া চলে না। তাঁহার পাসপোর্টটি ভারতীয়, শুধুমাত্র এই কারণে অমর্ত্য সেনকে যথাযোগ্য পদে নিয়োগ না করিলে যে প্রতিষ্ঠানেরই ক্ষতি এই কথাটি পশ্চিম দুনিয়া ঢের আগে উপলব্ধি করিয়াছে। শ্রীসেন উদাহরণমাত্র, পাসপোর্টের রং কোনও শিক্ষাবিদেরই নিযুক্তির শর্ত হইতে পারে না। যোগ্যতাই একমাত্র। গত দশ বৎসরের বারো আনা সময় যে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে মনমোহন সিংহের ন্যায় লব্ধপ্রতিষ্ঠ শিক্ষাবিদ অধিষ্ঠিত, সেই দেশের ক্ষমতার অলিন্দে এই কথাটি কেন এখনও স্পষ্ট ভাবে উচ্চারিত হয় নাই, তাহা বিস্ময়ের উদ্রেক করে। বিলম্বে হইলেও আই আই টি-গুলি উদ্যোগ করিয়াছে, তাহা সুসমাচার। বিশ্বের শিক্ষা-মানচিত্রে ভারতের উপস্থিতির পক্ষে সুসমাচার। আই আই টি-গুলি ভারতের সর্বোচ্চ মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে গণ্য। সেই প্রতিষ্ঠানে যাঁহারা পড়াইবেন, যিনি প্রধান পদে আসীন হইবেন তাঁহারাও বিশ্বমানের হইবেন, তাহাই কাম্য। প্রতিষ্ঠানের প্রধান সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যদি দূরদৃষ্টির অধিকারী হন, যদি আধুনিকতম শিক্ষাপদ্ধতি, গবেষণার সহিত সম্যক রূপে পরিচিত হন, তাহার সুপ্রভাব প্রতিষ্ঠানের উপর পড়িবেই। তেমন মানুষ বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকুন, তাঁহাকে ভারতে আনিতে হইবে। বিশ্বায়ন মানে শুধু পণ্যের অবাধ চলাচল নহে, শুধু কাজ চালান নহে বিশ্বের সেরা শিক্ষাবিদকে সসম্মানে নিজের দেশে আনিতে পারাও বিশ্বায়নেরই সুফল। প্রশ্ন হইল, আইনের বাধা কাটাইয়া বিদেশি শিক্ষাবিদদের যদি ভারতে আহ্বান জানানোও হয়, কত জন সেই আহ্বানে সাড়া দিবেন? আশঙ্কা হয়, সংখ্যাটি খুব বেশি নহে। আই আই টি-র নির্দেশকের বেতন বৎসরে ১৪ লক্ষ টাকা। মাসে এক লক্ষ টাকার সামান্য বেশি। এই প্রতিষ্ঠান হইতে পাশ করিবার এক-দুই বৎসরের মধ্যেই অধিকাংশ ছাত্রের বেতন তাহাদের পূর্বতন ডিরেক্টরের বেতনের অধিক হয়। পরিস্থিতিটি দুঃখের। আশঙ্কারও। বুনো রামনাথকে জীবনের আদর্শ না মানিলে কোনও যোগ্য ব্যক্তি এই বেতনে শিক্ষকতা করিতে চাহিবেন কেন? বিদেশে শিক্ষাবিদদের বেতন ইহার বহু গুণ। সেই বেতন ফেলিয়া কেহ আই আই টি-র নির্দেশক হইতে সম্মত হইবেন কেন? সরকারকে বুঝিতে হইবে, ইহা কনিষ্ঠ করণিকের বেতনক্রম নহে। কোন শিক্ষকের কত বেতন হইবে তাহা স্থির করিতে বেতন কমিশন অনাবশ্যক। বস্তুত, কোনও ক্ষেত্রেই কমিশনটির প্রয়োজন নাই, কিন্তু তাহা ভিন্ন প্রসঙ্গ। সিদ্ধান্তটি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকাই বাঞ্ছনীয়। আন্তর্জাতিক স্তরের সহিত সঙ্গতি রাখিয়া বেতনক্রম স্থির হওয়া বিধেয়। সব আই আই টি-র নির্দেশক সমান বেতন না-ও পাইতে পারেন। কাহার কত বেতন হইবে, তাহা বাজারের নিয়মেই স্থির হইবে। বাজারকে মানিতে আপত্তি কোথায়?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.