ভোট যে নিতান্তই নিরুত্তাপ হবে, তার আভাস ছিল আগেই। হলও তাই। কসবা, বালিগঞ্জ, বেহালা, ভবানীপুর, গার্ডেনরিচ সর্বত্র একই রকম গা-এলানো ছবি। বুথগুলির সামনে তেমন কোনও লাইন নেই। বুথের বাইরে ক্যাম্প অফিসগুলিতেও নেই দলীয় কর্মীদের ব্যস্ত যাতায়াত। সবই কেমন ঢিলেঢালা। বন্দর এলাকার পাড়ায় পাড়ায় কিছুটা আড্ডার মেজাজে জটলা। একনজরে এমনই ছিল বুধবার দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা উপনির্বাচনে দিনের ছবি। রাত পর্যন্ত পাওয়া নির্বাচন কমিশনের হিসেবে, ভোট পড়েছে ৫১.৮৫ শতাংশ। গণনা হবে ৪ ডিসেম্বর।
বিকেলে সাংবাদিকদের কাছে সিপিএম-প্রার্থী ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট মহম্মদ সেলিম অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার রাত থেকেই দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের লোকেরা ‘নীরব সন্ত্রাস’ চালিয়েছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব বলেন, বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের ‘মস্তান-বাহিনী’ বুথে আসার আগেই ভোটারদের ভয় দেখিয়েছে। সে কারণেই গত লোকসভা বা বিধানসভার তুলনায় কম ভোট পড়েছে। বন্দর এলাকার কিছু বুথ ছাড়াও বালিগঞ্জের অ্যাসেম্বলি অফ গড চার্চের প্রতিটি বুথই তৃণমূলের স্থানীয় ‘মস্তান-বাহিনী’ দখল করে নিয়েছিল বলে তাঁরা অভিযোগ করেন। ঋতব্রত বলেন, বেহালা পূর্বের ১৩টি বুথ ও বেহালা পশ্চিমের ৫টি বুথে সিপিএমের পোলিং এজেন্ট বসতে পারেননি। সব মিলিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৯০২টি বুথের মধ্যে ৫৪টি বুথ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে সিপিএম। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। |
|
|
ভোট দিয়ে বেরোলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার, দক্ষিণ কলকাতার দুই ভোটকেন্দ্রে। ছবি: দেবাশিস রায়। |
|
পাল্টা কোনও অভিযোগ ছিল না তৃণমূলের। ভোট ‘শান্তিপূর্ণ’ হওয়ায় দলের শীর্ষ নেতা মুকুল রায় বরং যথেষ্ট উৎফুল্ল। তাঁর মন্তব্য: “সারা দিন ভোট চলল। অথচ এক বারও আমার ফোন বাজল না। কেউ অভিযোগ জানাল না। এমন অভিজ্ঞতা আগে হয়নি।” তৃণমূল-প্রার্থী সুব্রত বক্সী বলেন, “সিপিএমের হার্মাদদের তাণ্ডব নেই বলেই ভোট হয়েছে অবাধে।”
মাস দুয়েক আগে যখন ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়, তখন সেখানে ভোট পড়েছিল ৪৪.৭৪ শতাংশ। ওই নির্বাচনে জিতেই বিধানসভায় গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রের নির্বাচনেও সব চেয়ে কম ভোট পড়ে ভবানীপুরেই ৪০.১৫ শতাংশ। ভোটের হারে সবার আগে ছিল বেহালা পূর্ব। সেখানে ভোট দিয়েছেন ৬০.১৬ শতাংশ ভোটার।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায় ভবানীপুরে মিত্র ইনস্টিটিউশনের ১৫২ নম্বর বুথে ভোট দিতে যান বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ। ভোট দিয়ে বেরোতে সাকুল্যে চার মিনিট। ভোট কেন্দ্র থেকে বেরিয়েই তিনি দুই আঙুল তুলে জয়ের ইঙ্গিত দেখিয়ে বলেন, “অনেক বেশি ভোটে জিতব।” ওই বুথে ১০৭১টি ভোটের মধ্যে বেলা চারটে পর্যন্ত ভোট পড়ে ৫৮৬টি।
বেলা দেড়টায় পাম অ্যাভিনিউয়ের পাঠ ভবনে ১০৮ নম্বর বুথে ভোট দিয়ে বেরিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেন, “উপনির্বাচনে সব সময়েই ভোট কম পড়ে, এটা আমাদের অভিজ্ঞতা।” ভোটের ফলাফল নিয়ে তাঁদের কী প্রত্যাশা? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, “ভোটের ফল যা-ই হোক, আমাদের প্রার্থী জনগণের বিভিন্ন দাবিতে সরব হয়েছেন। কিন্তু তৃণমূলের যিনি প্রার্থী হয়েছেন, কখনও জনগণের দাবিতে তাঁকে সরব হতে দেখা যায়নি।” তৃণমূল-প্রার্থী সুব্রতবাবুর দাবি, “তৃণমূল কংগ্রেস এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে মানুষকে আর নতুন করে কিছু বোঝাতে হবে না। বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমের নির্বাসন থেকেই তার প্রমাণ মিলেছে। এখন তারা তাই প্রলাপ বকে।”
এ দিন ভোট শুরু হওয়ার পরে যান্ত্রিক কারণে ৯টি ভোট-মেশিন বদল করতে হয় বলে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সুনীল গুপ্ত জানিয়েছেন। তিনি জানান, এই উপনির্বাচনের জন্য ২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী ও কলকাতা পুলিশের ১৬ হাজার ৭০০ কর্মীকে কাজে লাগানো হয়েছে। |