‘অব্যাহতি’ নেওয়া তাপস কবিই লোকাল সম্পাদক জামুড়িয়ায়
চার বছর আগে জামুড়িয়ার পুরপ্রধানের পদ ও দল ছেড়ে যাওয়া তাপস কবিকেই লোকাল কমিটির সম্পাদকের পদে নিয়ে এল সিপিএম। সৌজন্যে ‘পরিবর্তন’।
বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পরে রাজ্য জুড়েই নতুন করে ঘর গোছাচ্ছে সিপিএম। এক দিকে ‘বেনোজল’ ঝেড়ে ফেলা, অন্য দিকে বসে যাওয়া দক্ষ নেতা-কর্মীদের সংগঠনের পুরোভাগে ফিরিয়ে আনা আপাতত এই নীতি নিয়েই চলছে প্রাক্তন শাসকদল। রদবদল করা হচ্ছে বিভিন্ন লোকাল ও জোনাল কমিটিতেও। সিপিএম সরাসরি স্বীকার না করলেও তাপসবাবুর ‘প্রত্যাবর্তন’ সেই সমীকরণেরই অঙ্গ বলে বিরোধী শিবিরের ধারণা।
বছরখানেক আগেই অজয়-জামুড়িয়া জোনাল কমিটির অন্তর্গত লোকাল কমিটির সংখ্যা পাঁচ থেকে বাড়িয়ে আট করেছিল সিপিএম। যুক্তি ছিল, ‘সংগঠন মজবুত’ করা। নভেম্বরের গোড়াতেই সেই সংখ্যা কমিয়ে ফের পাঁচ করা হয়েছে। এ বারও যুক্তি, ‘সংগঠন সংহত’ করা। আর, নতুন পুনর্বিন্যাসের পরেই জামুড়িয়া ৫ লোকাল কমিটির সম্পাদকের পদে আনা হয়েছে তাপসবাবুকে। তার জন্য তাঁকে নতুন করে দলের সদস্য পদও দেওয়া হয়েছে।
জামুড়িয়া পুরসভা গঠিত হয়েছিল ১৯৯৫ সালে। প্রথম পুরপ্রধান ছিলেন সিপিএমেরই বিপ্লব চক্রবর্তী। পরে তিনি জোনাল সম্পাদক মনোনীত হওয়ায় ১৯৯৮ সালে তাপস কবিকে ওই পদে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু ২০০৭ সালে পদ ও দল থেকে ‘অব্যাহতি’ চান তাপসবাবু। জামুড়িয়ার নতুন পুরপ্রধান হন শীলা সরকার। গত লোকসভা নির্বাচনেও তাপসবাবুকে দলের প্রচারে দেখা যায়নি। তত দিনে তাঁর সদস্যপদ খারিজ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গত বছর পুরভোটের আগে সিপিএমের প্রচারে ফের তাপসবাবুকে দেখা যায়। বিধানসভা নির্বাচনেও তিনি সরাসরি প্রচারে নামেন।
সিপিএমের অজয়-জামুড়িয়া জোনাল সম্পাদক গঙ্গা যাদবের কথায়, “তাপস আগে দলের কাছে অব্যাহতি চেয়েছিল। কিন্তু বছরখানেক আগে দলে ফিরতে চেয়ে আবেদন করে।” দলে ফিরেই সোজা লোকাল সম্পাদক? গঙ্গাবাবুর জবাব, “সংগঠন মজবুত করতে দল যাঁকে উপযুক্ত বলে বুঝেছে, তাঁকেই সম্পাদক করেছে।”
বামবিরোধীরা অবশ্য এই সব ‘ছেঁদো যুক্তি’ মানতে নারাজ। তাঁদের টিপ্পনী, লোকসভা নির্বাচনের আগে নজরুল শতবার্ষিকী ভবনের সভায় যাঁকে ‘দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি করা’র অভিযোগে ‘অব্যাহতি’ দেওয়ার কথা বলেছিলেন সিপিএম নেতারা, বিপাকে পড়ে তাঁকেই নেতা করে আনতে হয়েছে। জামুড়িয়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি পূর্ণশশী রায়ের দাবি, “ইকড়া স্টেশনের কাছে সিটুর এক সভায় তাপস কবি প্রসঙ্গে এই গঙ্গা যাদবই বলেছিলেন, যে অন্যায় করবে তাকে রাখা হবে না।”
প্রয়াত সিপিএম সাংসদ বিকাশ চৌধুরীর এক সময়ের অনুগামী, বর্তমানে জামুড়িয়ার তৃণমূল নেতা সৈয়দ আমির আবার দাবি করেন, “বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার কথা ওঠায় তাপসবাবুকে দল থেকে অব্যাহতি নিতে বাধ্য করেছিল সিপিএম। এখন দলের দুঃসময়ে ফের তাঁকে সামনে আনতে বাধ্য হচ্ছে। তাতে অবশ্য জনগণের কাছে ভুল বার্তাই যাবে। আমাদেরও সুবিধা হবে।” গঙ্গাবাবু অবশ্য পাল্টা দাবি করেন, “শারীরিক কারণেই তাপস সরে গিয়েছিল। আমরা তাঁর বিরুদ্ধে কোথাও কিছু বলিনি।” তাপসবাবুও বলেন, “অসুস্থতার কারণেই অব্যাহতি চেয়েছিলাম। এখন শরীর ঠিক আছে। তাই দলে ফিরেছি।” অন্য সব অভিযোগ ভিত্তিহীনও বলে দাবি করেন তিনি।

লোকালে ‘পরিবর্তন’

জামুড়িয়ায় সিপিএমের লোকাল কমিটির সংখ্যা ৮ থেকে কমে ফের ৫ হয়েছে। পূর্বতন ৩ ও ৬ মিলিয়ে ৩ নম্বর লোকাল কমিটি, ৪ ও ৮ মিলিয়ে ৪ নম্বর এবং ৫ ও ৭ মিলিয়ে ৫ নম্বর লোকাল কমিটি গড়া হয়েছে। এক মাত্র ৪ নম্বর ছাড়া অন্য সব লোকাল কমিটি থেকেই সরানো হয়েছে আগের সম্পাদকদের। জামুড়িয়া ৪ লোকাল সম্পাদকের পদে রয়ে গিয়েছেন সুজিত দত্ত। পুরনো নেতাদের সরানো নিয়ে কিছু বলতে না চাইলেও কমিটির সংখ্যা কমানো প্রসঙ্গে গঙ্গাবাবুর বক্তব্য, “দলকে সংহত ও দৃঢ় করতেই তিনটি কমিটির অবলুপ্তি ঘটানো হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.