বাঙুরের ব্লাড ব্যাঙ্ক
‘টোপ’ ফেলে অনিয়ম ধরে ফেললেন স্বাস্থ্যকর্তা
বিবার, ২৭ নভেম্বরের দুপুর। এম আর বাঙুর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি। ভিতর থেকে তালাবন্ধ দরজা। বাইরে থেকে কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। অথচ, ওই সময়ে ব্লাড ব্যাঙ্ক খোলা থাকার কথা। এ দিক-ও দিক খুঁজতে খুঁজতে তাঁর চোখে পড়ল দেওয়ালের এক কোণে প্রায় লুকনো একটি কলিং বেল। অনেক ক্ষণ তা বাজানোর পরে বিরক্ত মুখে ভিতর থেকে বেরিয়ে এলেন এক জন। রক্ত দরকার বলতেই আরও বিরক্ত হয়ে জানালেন, ‘এখন হবে না। পরে আসতে হবে।’
এ বার সামনে এলেন এত ক্ষণ আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা এক মহিলা। তাঁকে দেখেই চোখমুখ পলকে বদলে গেল ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসা ব্যক্তির। প্রথমে হতভম্ব, তার পরে থতমত খেয়ে বলতে শুরু করলেন, “আরে ম্যাডাম, আপনি এই সময়ে! কোনও খবর না দিয়ে? আসুন, আসুন। বলুন, কী দরকার।” কারণ, আগন্তুক মহিলা আসলে আর কেউ নন, খোদ দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য-অধিকর্তা শিখা অধিকারী। স্বাস্থ্য দফতরের কড়া নির্দেশ সত্ত্বেও এমআর বাঙুর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক রবিবার বন্ধ থাকছে এমনই অভিযোগ আসছিল মুখ্য স্বাস্থ্য-অধিকর্তার কাছে। তাই স্বামীকে রোগীর পরিজন সাজিয়ে ব্লাড ব্যাঙ্কের হাল সরেজমিন খতিয়ে দেখতে যান তিনি।
ক্ষুব্ধ শিখাদেবী সরাসরি কৈফিয়ত চান, “দরজা ভিতর থেকে বন্ধ কেন? সরকারি হাসপাতালে কি এ বার থেকে কলিং বেল বাজিয়ে আপনাদের ঘুম ভাঙিয়ে রক্ত চাইতে হবে? কেন রক্ত দিতে চাইছিলেন না আপনি? রবিবার কি এখনও এখান থেকে রক্ত দেওয়া হচ্ছে না?” হাতেনাতে ধরা পড়ে উত্তর নেই ব্লাড ব্যাঙ্কের ওই টেকনিশিয়ানের মুখে।
জেলার প্রধান হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও মর্জিমাফিক এত দিন বাঙুরের ব্লাড ব্যাঙ্ক রবিবার বন্ধ রাখতেন সেখানকার চিকিৎসক-টেকনিশিয়ানেরা। সমস্যায় পড়তেন অসংখ্য রোগী। প্রাণসংশয় হত অনেকের। কর্তৃপক্ষ সব জেনেও চুপ করে ছিলেন। সংবাদপত্রে এই খবর বেরোনোর পরে স্বাস্থ্য দফতর রবিবার ব্লাড ব্যাঙ্ক খোলা রাখতে কড়া নির্দেশ দেয়। তার পরেও যে ছবিটা পাল্টায়নি, রবিবারের ঘটনাই তার প্রমাণ। ক্ষুব্ধ শিখাদেবীর বক্তব্য, “সরকারি নির্দেশ এ ভাবে অবহেলার কথা ভাবা যায় না! বলে দিয়েছি, এ বার রবিবার ব্লাড ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকলে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্লাড ব্যাঙ্ক এ ভাবে ভিতর থেকে তালাবন্ধও রাখা যাবে না।”
গত শনিবারও দুপুরে আচমকা ওই ব্লাড ব্যাঙ্ক পরিদর্শনে যান রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা শ্যামাপদ বসাক। ১৩ নভেম্বর (রবিবার) ও ২০ নভেম্বর (রবিবার) কত রক্ত দেওয়া হয়েছে দেখার জন্য ব্লাড রেজিস্ট্রেশন খাতা চান তিনি। ৪০ মিনিট তাঁকে বসিয়ে রাখার পরে কর্তৃপক্ষ জানান, তাঁদের কোনও খাতা নেই। ক্ষুব্ধ, বিরক্ত স্বাস্থ্যকর্তা কম্পিউটারে হিসেব দেখতে চান। তাঁর কথায়, “আরও ২০ মিনিট বসিয়ে কম্পিউটার খুলে দেখানো হয়। দেখি, ১৩ ও ২০ তারিখ কোনও রক্ত ইস্যু করা নেই। ইস্যুর তারিখ ১৪ ও ২১ নভেম্বর! কর্তৃপক্ষ বোঝাতে চান, রবিবার রক্ত দেওয়া হয়েছে কিন্তু এন্ট্রি হয়নি। তাই ইস্যুর তারিখ অন্য। এমন অরাজকতা আগে কোথাও দেখিনি। কারণ দর্শাতে বলেছি।” বাঙুরের সুপার কাজলকৃষ্ণ বণিকেরও বক্তব্য, “ব্লাড ব্যাঙ্কে রেজিস্ট্রেশন খাতা থাকবে না, ভাবাই যায় না। আসলে কাজে ফাঁকির নানা ফিকির। আমি লিখিত ব্যাখ্যা চেয়েছি।”
যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কী বলছেন? প্রধান চিকিৎসক অনিতা চক্রবর্তীর দাবি, তাঁরা এখন রবিবার ব্যাঙ্ক খোলা রাখেন। অবাঞ্ছিত লোক ঢুকে পড়ে দামি জিনিসপত্রের ক্ষতির আশঙ্কায় দরজা মাঝেমধ্যে ভিতর থেকে বন্ধ থাকে। কর্তৃপক্ষ বারণ করলে খুলে রাখা হবে। আর স্বাস্থ্য-অধিকর্তাকে রবিবার রক্ত দেওয়ার হিসেব দেখাতে না-পারা সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, “উনি পুরনো দিনের মানুষ। জানেন না যে, এখন ও সব খাতাটাতা আর থাকে না। সব কম্পিউটারে থাকে।”
কিন্তু কম্পিউটারেও তো হিসেব মেলেনি? অনিতাদেবীর ব্যাখ্যা, “রবিবার কম্পিউটার অপারেটর আসেন না বলে এন্ট্রি করা যায় না। বোঝা যায় না যে আমরা রক্ত দিয়েছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.