আগেই অনুমোদন খারিজ করে দিয়েছিল রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়। সুপ্রিম কোর্টও জানিয়ে দিয়েছিল, হলদিয়ার বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ আইকেয়ার ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড রিসার্চ বা আইআইএমএসআর অবৈধ। এ বার ওই মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন বাতিল করে দিল মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই)-ও। ফলে ওই কলেজ আপাতত বন্ধ হয়ে গেল। প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষকে পরের বছর আবার কলেজ খোলার জন্য এমসিআইয়ের কাছে আবেদন জানাতে হবে। সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ ওই কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি।
চলতি বছরে ক্যাপিটেশন ফি দিয়ে ৮৮ জন ছাত্রছাত্রী ওই কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। এমসিআই অনুমোদন বাতিল করায় সেই পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকারে। সোমবার বৈঠকে বসেছিল এমসিআই। বিধি ভাঙায় ওই মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন বাতিল করে দিয়েছে তারা। এ বছর ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের দায়িত্ব তারা নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে এমসিআই। সংস্থার সচিব সঙ্গীতা শর্মা এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, “ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের দায়িত্বে ওই মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছেন। এই ব্যাপারে মেডিক্যাল কাউন্সিলের কিছু করার নেই।”
এমসিআই সূত্রে বলা হয়, রাজ্য সরকার যদি ছাত্রছাত্রীদের জন্য নিজে থেকে কিছু করতে চায়, তা হলে করতে পারে। তবে রাজ্য সরকারও ওই ছাত্রছাত্রীদের দায় নিতে রাজি নয়। রাজ্যের স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “এমসিআই আজ বা কাল অনুমোদন বাতিল করতই। এটা প্রত্যাশিতই ছিল। রাজ্য সরকার ওই ছাত্রছাত্রীদের কোনও দায়িত্ব নেবে না। কারণ, রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর তাঁদের ওই মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে বারণ করেছিল।” টাকা দিয়ে ৮৮ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁরা টাকা ফেরত পাবেন কি? এমসিআই বিষয়টি কলেজ-কর্তৃপক্ষ এবং ছাত্রছাত্রীদের উপরে চাপিয়ে দিয়েছে। তারা বলেছে, “দু’পক্ষ নিজেদের মধ্যে বিষয়টির ফয়সালা করে নিক।” |
এমসিআইয়ের এই সিদ্ধান্তে অকূলপাথারে পড়েছেন ছাত্রছাত্রী এবং তাঁদের অভিভাবকেরা। কলেজ-কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে সোমবারেও ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস করেছেন। কলকাতা থেকে ওই কলেজে পড়তে যাওয়া অমৃতা পাল বলেন, “আমরা চাই, আমাদের পড়তে দেওয়া হোক। কিন্তু এখন কী যে করব, বুঝতে পারছি না।” হলদিয়ারই সুমন দাসের বক্তব্য,“আমাদের ক্লাস যথারীতি হচ্ছে। সব ভুলে ক্লাসটাই মন দিয়ে করছি।” এক ছাত্রীর বাবা মনোরঞ্জন সামন্ত বলেন, “আমরা যা কিছু জেনেছি, সব সংবাদমাধ্যমের সূত্রে। কিন্তু কোনও কাগজপত্র হাতে আসেনি। সব অভিভাবক মিলে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করব।”
কী বলছেন পরিচালন কমিটির সভাপতি লক্ষ্মণ শেঠ? সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণবাবু বলেন, “এমসিআইয়ের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আমি কিছু শুনিনি। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে, তা হলে আমরা আবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হব।” এমসিআই সব জেনেশুনেই মেডিক্যাল কলেজটিকে অনুমোদন দিয়েছিল। তারা এখন দায় এড়াতে পারে না বলে কলেজ-কর্তৃপক্ষ সূত্রে মন্তব্য করা হয়। কলেজের প্রশাসনিক আধিকারিক শ্রীমন্ত বসু বলেন, “কলেজ বন্ধ হলে ছাত্রছাত্রী থেকে কর্মচারী, সবাই বিপাকে পড়বেন। রাজ্য সরকার যদি একটু অন্য দৃষ্টিতে বিষয়টি বিবেচনা করে, তা হলেই সমস্যার সমাধান হতে পারে।”
একই বাড়িতে মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ তৈরি হয়েছিল হলদিয়ায়। তাই ওই মেডিক্যাল কলেজের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে রাজ্য সরকার। তারা সেখানে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি করাতে নিষেধ করেছিল। রাজ্যের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে কলেজ-কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। তার ভিত্তিতে এমসিআই এবং ডেন্টাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়াকে যৌথ ভাবে পরিদর্শন করে রিপোর্ট দিতে বলেছিল শীর্ষ আদালত। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, ওই মেডিক্যাল কলেজ অবৈধ। কারণ, একই ভবনে মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ চলছে। ওই কলেজের ভবিষ্যৎ কী হবে, সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার এমসিআইয়ের হাতেই ছেড়ে দিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত।
এমসিআই হলদিয়ার ওই কলেজকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়। জবাবে সন্তুষ্ট না-হয়ে গত শুক্রবার তারা কলেজ-কর্তৃপক্ষকে ডেকে পাঠায়। কিন্তু কলেজ-কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যায় এমসিআই সন্তুষ্ট হয়নি। এ দিন এমসিআইয়ের এগ্জিকিউটিভ কমিটির বৈঠকে কলেজের অনুমোদন বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। |