|
|
|
|
|
|
|
নিয়মিত ভাষাটা নিয়ে চর্চা করো, কাজ হবে |
মাধ্যমিকে অঙ্কের ফল ভাল ছিল, একাদশ শ্রেণিতে উঠে খারাপ? এতে অখুশি বা চিন্তিত হতে
পারো,
কিন্তু হতাশ বা দুঃখিত হোয়ো না। উচ্চ মাধ্যমিকের অঙ্ক
আলাদা চ্যালেঞ্জ। সেটা নিতে হবে।
পথিক গুহ |
|
আমার বয়স সতেরো বছর। এখন একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ছি। মাধ্যমিকে ভাল রেজাল্ট করেছি। আমি বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়ি। আমি ভাবছি কলেজে উঠে সবকিছুই তো ইংরেজিতে পড়তে হবে। তখন আমার অসুবিধে হবে। এই ভেবে ভেবে আমি পড়াশোনায় মন বসাতে পারছি না। যদি ইংরেজির জন্য আমার পড়াশোনা আটকে যায়, তা হলে আমি কী করব? এমনিতে আমি ইংরেজি ভালই পারি। কিন্তু হঠাৎ করে বাংলা মিডিয়াম থেকে গিয়ে সব কিছু যদি ইংরেজিতে পড়তে হয়, তখন কী করব? শুনেছি বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসতে হলেও ইংরেজি ভাল জানতে হবে। ভাল লেখকের বই পড়তে হলেও ইংরেজি জানা প্রয়োজন। তাই যখনই পড়তে বসি এই সব চিন্তা মাথায় চলে আসে। উচ্চ মাধ্যমিকে তো ইংরেজি একটি মাত্র বিষয়ে হিসেবে থাকে। তার পর কলেজে সবই তো ইংরেজিতে পড়তে হবে। এই সমস্যার কি কোনও সমাধান নেই?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক |
|
ছবি: সুমন চৌধুরী |
|
তোমাকে বলছি |
তুমি যে-সমস্যাটার কথা ভাবছ, সেটাকে তুচ্ছ করার বা ‘ও নিয়ে ভেবো না, কোনও অসুবিধে হবে না’ বলে উড়িয়ে দেওয়ার কোনও কারণ নেই। ইংরেজিতে বিভিন্ন বিষয়ে পড়ার অভ্যাস না থাকলে কলেজে গিয়ে সত্যিই অসুবিধা হয়। বিশেষ করে, কলেজে সাধারণত যে ভাবে ‘লেকচার’ শুনে ‘নোট’ নিতে হয়, তাতে ভাষার অনভ্যাস একটা সমস্যা তৈরি করে। আবার, যেহেতু মূল পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি একাধিক রেফারেন্স বই পড়ে নিয়ে তৈরি হতে হয়, তাই কম সময়ে অনেকটা পড়ে ফেলার এবং দরকারি জিনিস মনে গেঁথে নেওয়ার দক্ষতাও কাজে লাগে, যাকে বলে রিডিং স্কিল। ইংরেজিতে পড়ার অভ্যাস না থাকলে সেই দক্ষতাও তুলনায় কম থাকে।
কিন্তু এই নিয়ে তোমার উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছুমাত্র কারণ নেই। চিন্তা করা দরকার, দুশ্চিন্তা একেবারেই নয়। বাংলা মাধ্যমের স্কুলে পড়াশোনা করে যুগ যুগ ধরে বহু ছাত্রছাত্রী কলেজে খুব ভাল রেজাল্ট করেছে, এখনও করছে। তুমিও সেটা করতে পারবে, অবশ্যই পারবে। বরং তুমি যে ভবিষ্যতের সমস্যাটা নিয়ে নিজেই ভেবেছ, এবং খুব গুছিয়ে ভেবেছ, এটা খুব বড় কথা। আর তুমি লিখেছ, ‘এমনিতে আমি ইংরেজি ভালই পারি।’ অর্থাৎ, তোমার ইংরেজির ভিতটা ঠিক আছে। সুতরাং, সমস্যা মোকাবিলার জন্য তুমি মনে মনে প্রস্তুত, এবং সেই সামর্থ্যও তোমার আছে। তোমার কাজ একটাই অভ্যাস করা।
এবং সেটা বিরাট কোনও ব্যাপার নয়। প্রথম কথা, নিয়মিত নানা বিষয় ইংরেজিতে পড়ো। বই, খবরের কাগজ, পত্রিকা, সব কিছু পড়ো। তোমার নিজের যে সব বিষয় পছন্দ, সেগুলোই প্রথম দিকে বেশি করে পড়ো, সেটা খেলাও হতে পারে, বিনোদনও হতে পারে, রাজনীতিও হতে পারে। বিষয়টা বড় কথা নয়, পড়াটাই বড় কথা। পাশাপাশি, নিজের পাঠ্য বিষয়গুলো, বিশেষ করে যে বিষয় নিয়ে ভবিষ্যতে পড়াশোনা করতে চাও সেটা যদি কিছুটা কিছুটা ইংরেজিতে পড়তে পারো, দু’দিক দিয়ে উপকার পাবে একটা রিভিশনও হবে, আবার ইংরেজিতে পড়ার অভ্যাসটাও তৈরি হবে। যে বিষয়ই হোক, তোমার পাঠ্যসূচি অনুসারে একটা ভাল ইংরেজি বইয়ের নাম মাস্টারমশাইদের কাছে জেনে নাও, সেটা জোগাড় করো এবং পড়ো। তা হলেই হবে। প্রথম প্রথম হয়তো বুঝতে অসুবিধা হবে, খুব সময় লাগবে, কিন্তু মাসখানেক নিয়মিত চেষ্টা করলে নিজেই বুঝতে পারবে কাজটা উত্তরোত্তর সহজ হয়ে আসছে। বেশি সময় দিতে না পারো, ক্ষতি নেই, রোজ এক ঘণ্টা যদি নিয়ম করে দিতে পারো, অনেকটা কাজ হবে। হবেই।
এর পাশাপাশি, ইংরেজি শুনে বোঝার অভ্যাসটাও খুব তাড়াতাড়ি রপ্ত করা যায়। সহজ উপায় হল, টেলিভিশন। দেশি বা বিদেশি নানান ইংরেজি নিউজ চ্যানেল আছে, কোনও একটা বা একাধিক চ্যানেল রোজ কিছুক্ষণ শোনো। বিশেষ করে যখন একটু জটিল বিষয়ে আলোচনা বা বিতর্ক হয় কিংবা কোনও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়, সেই ধরনের অনুষ্ঠান শুনলে ইংরেজির বোধ অনেক বেশি নাগালে চলে আসে।
তিন নম্বর হল, ইংরেজি বলা। এই ব্যাপারটাকে সাধারণত ‘স্পোকেন ইংলিশ’ নাম দিয়ে একটা আলাদা দক্ষতা হিসেবে দেখা হয়, কিন্তু আসলে এটাও ইংরেজি জানা, পড়া এবং বোঝার সামগ্রিক অভ্যাসের অঙ্গ হলেই সবচেয়ে ভাল হয়। চেষ্টা করো, বাড়িতে বা স্কুলে বা অন্য যেখানে সুযোগ পাও, ইংরেজিতে অন্তত কিছু কথা বলতে। বাংলা কথার মধ্যে কিছু কিছু ইংরেজি বাক্য বললেও কিছুমাত্র ক্ষতি নেই, আমরা দ্বিভাষিক জাতি, দুটো ভাষা মিশিয়ে কথা বললে বাঙালির মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় না। ইংরেজি বলার অভ্যাসটা রপ্ত হয়ে গেলে তখন পুরোপুরি ইংরেজিতেই বলতে পারবে, আপাতত যতটা সম্ভব ততটাই চেষ্টা করো। ভুল হলে ঘাবড়ে যেয়ো না, ওতে লজ্জার কোনও কারণই নেই, যাঁরা ঠিক বলেন তাঁদের থেকে ভুলটা বুঝে নিয়ে সংশোধন করার চেষ্টা করো।
মোদ্দা কথা হল, ইংরেজি নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনওই কারণ নেই তোমার। এখন থেকে, আজ থেকে, রোজ নিয়মিত যতটা পারো ভাষাটার সঙ্গে থাকো, তা হলেই দেখবে তোমার ভয় চলে যাচ্ছে, আত্মবিশ্বাস আসছে। আর, এক বার সেটা এসে গেলেই কেবল ইংরেজি নয়, তোমার গোটা লেখাপড়াতেই একটা নতুন উদ্যম আসবে। |
|
বাবা-মাকে বলছি |
আপনাদের সন্তান নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে যে ভাবনায় পড়েছে, সে বিষয়ে তাকে সাহায্য করা আপনাদের একটা বড় দায়িত্ব। ওকে সাহস দিন, বলুন যে ও ভাল ছাত্র (বা ছাত্রী), নিয়মিত একটু চেষ্টা করলেই ইংরেজির সমস্যাটা কেটে যাবে। আপনাদের চেনাজানার মধ্যে, আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বাংলা মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করে পরে খুব ভাল করেছে, এমন উদাহরণ নিশ্চয়ই আছে, ওকে তাদের কথা বলুন। উপদেশের চেয়ে উদাহরণ সব সময় বেশি কার্যকর হয়। ওকে ইংরেজি বইপত্র, খবরের কাগজ ইত্যাদির জোগান দিন। টেলিভিশনে ইংরেজি চ্যানেল দেখার সুযোগ করে দিন। সম্ভব হলে নিজেরা ওর সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলুন। কিংবা আত্মীয়বন্ধুর মধ্যে ইংরেজি-জানা কেউ থাকলে তাঁর সঙ্গে আপনার সন্তানকে কথা বলার, আলোচনা করার সুযোগ করে দিন। ওকে কিছু দিন ইংরেজি ভাষার চর্চায় বিশেষ ভাবে উৎসাহ দিন। ওর একটু সাময়িক সাহায্য দরকার, তার পর দেখবেন ও নিজেই দিব্যি এগিয়ে যাবে। |
|
ছেলেমেয়েকে নিয়ে মা-বাবার সমস্যা? নাকি মা-বাবাকে নিয়ে ছেলেমেয়ের সমস্যা?
পড়ার খরচ নিয়ে অভিভাবকের দুশ্চিন্তা? দূরের শহরে পড়তে যাওয়ার নামে মেয়ের
গায়ে জ্বর আসা? যে মুশকিলই হোক না কেন, পরিবারের সবাই মিলেই সমাধানে পৌঁছতে
হবে। এ বার থেকে‘প্রস্তুতি’-ও কথা বলবে গোটা পরিবারের সঙ্গেই। অভিভাবকদের বা
সন্তানের যে কোনও দুশ্চিন্তার কথা আমাদের জানান (এবং জানাও)
নিজেদের সমস্যা। সুচিন্তিত উত্তর দেবেন বিশেষজ্ঞরা।
ইমেল: prastuti@abp.in বিষয়: Haate Haat।
অথবা, চিঠি পাঠান (এবং পাঠাও) এই ঠিকানায়:
হাতে হাত, প্রস্তুতি,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
এ বি পি প্রাঃ লিঃ,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০ ০০১ |
|
|
|
|
|
|