স্পনসর জোটাতে হিমসিম খেতে হয় নাট্যকর্মীদের। তবুও শুধু নাটককে ভালোবেসেই স্পনসরের ঘাটতি মিটিয়ে নিজেরা টাকা দিয়ে নাট্য মেলার আয়োজন করেছে নাট্য অঙ্গন। এ বারও রঘুনাথগঞ্জের রবীন্দ্র ভবনে রবিবার থেকে তাদেরই উদ্যোগে শুরু হল চার দিনের নাট্যোৎসব। উৎসবে মঞ্চস্থ হবে পাঁচটি নাটক। উদ্বোধনী মঞ্চে উদ্যোগী সংস্থার প্রযোজনায় ইন্দ্রাশিস লাহিড়ির ‘লজ্জাতীর্থ’ পরিবেশিত হবে। এ ছাড়াও থাকবে ‘নয়ে নাটুয়া’ প্রযোজিত গৌতম হালদারের ‘বড়দা’ ও ‘মিসড কল’, নিভা আর্টসের ‘অস্তরাগ’ এবং ‘দেখ কী হয়’।
রবিবার নাট্যোৎসবের উদ্বোধন করতে এসে নাট্যশিল্পী চন্দন সেন বলেন, “নাট্যোৎসব করার ব্যাপারে টাকার ঘাটতি মেটাতে এগিয়ে আসতে হবে মানুষকেই। নাটকের মধ্যেই প্রতিবাদের ভাষা পাওয়া যায়।” এই নাট্যোৎসব মহকুমায় প্রথম নয়। আগেও বেশ কয়েকটি নাট্যোৎসব হয়েছে। তবে মূলত টাকা আর দর্শকের অভাবে সেগুলি সাফল্য পায়নি।
নাট্য অঙ্গনের সম্পাদক মিলন মুখোপাধ্যায় বলেন, “আট মাসের মধ্যে দু-দুটো নাট্যোৎসব করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য জেনেও আমরা উদ্যোগী হয়েছি। |
নাট্যোৎসবের উদ্বোধনে চন্দন সেন। নিজস্ব চিত্র। |
আমরা চাই এখানকার মানুষ আবার নাটক দেখুন। পুরনো পরিবেশ এখানে আবার ফিরে আসুক। নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরাও নাটক সম্পর্কে আগ্রহী হোক। আমরা শহরের ২১ জনকে নিয়ে দলে সামিল করেছি। শহরে বেশি করে নাটক মঞ্চস্থ করে নাটকের একটা পরিমণ্ডল গড়ার চেষ্টা করছি। সেই জন্যই ঋণের বোঝা নিয়েও এই আয়োজন।”
নাট্যোৎসবের টাকা জোগাড় করতে ছোট্ট শহরে স্পনসর পাওয়াটাই সবথেকে বড় সমস্যা বলে জানালেন মিলনবাবু। প্রথমবার নাটকের উৎসব আয়োজন করতে এই সমস্যাই সব থেকে বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল, এ বারও এটাই মূল সঙ্কট। এই নাট্যোৎসবের আয়োজন প্রায় ১ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। তবে ৭০০ আসনের রবীন্দ্র ভবনের শ’চারেক টিকিট বিক্রি করে মাত্র ৫০ হাজার টাকা হাতে এসেছে। প্রায় এক লক্ষ টাকার ঘাটতি মেটাতেই বাধ্য হয়ে স্পনসরের খোঁজ শুরু হয়েছে। তবে স্পনসর মিললেও ঘাটতি কিছুটা রয়েই গিয়েছে। অগত্যা নিজেরা টাকা দিয়েই সেই ঘাটতি পূরণ করেছেন।
মিলনবাবু জানালেন, আগের নাট্যোৎসবের সময়েও প্রায় ২০ হাজার টাকার ঘাটতি হয়। শেষ পর্যন্ত তা মেটাতে হয়েছে নাট্য সংস্থার কর্মীদেরই। তিনি বলেন, “এই দ্বিতীয় নাট্যোৎসবের পরে ঋণের বিরাট বোঝার দায় নিতে হবে আমাদেরই। তবু আমরা চাই শহরের মানুষ মঞ্চাভিমুখী হোন। যত বেশি দর্শক নাটক দেখতে আসবেন তত আমাদের নাট্যকর্মীদের উৎসাহ বাড়বে।” রঘুনাথগঞ্জে এক সময়ে বেশ কয়েকটি নাট্য সংস্থা গড়ে উঠেছিল। অনামী, বলাকার মত দলগুলো ছাড়াও পাড়ায় পাড়ায় ছোট ছোট নাটকের দল গড়ে ওঠে বছর ভর তারা বিভিন্ন জায়গায় নাটকের আয়োজনও করত। তবে এখন সে সব অতীত। বাংলার অধ্যাপক সাধনকুমার দাস বলেন, “নাটকের এই সঙ্কট শুধু রঘুনাথগঞ্জের সমস্যা নয়। বহরমপুর রবীন্দ্রসদনেও নাটক দেখতে আসেন হাতেগোনা কয়েক জন।” নাট্যপ্রেমী কাশীনাথ ভগত বলেন, “নাটকের দর্শক সর্বত্রই কমেছে। এক সময়ে নাটক দেখতে বহু মহিলা আসতেন। তবে তাঁরা এখন টিভির টানে ঘরবন্দি। দর্শক নেই বলেই নাট্যকর্মীদের উৎসাহে ভাঁটা পড়ছে। সুস্থ সংস্কৃতীর স্বার্থেই এই নাট্য আন্দোলন জরুরি।” |