বামেদের আইন অমান্য কর্মসূচির জেরে উত্তরবঙ্গের অন্যত্র কোনও গোলমাল না-হলেও উত্তর দিনাজপুরের কর্ণজোড়ায় জেলাশাসকের দফতরের ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠল। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে। আন্দোলনকারীরা জেলাশাসকের দফতরের দুটি জানালা ভাঙচুর করেছে বলে অভিযোগ। তা নিয়ে উত্তেজনা বাড়তে থাকলে জেলা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বীরেশ্বর লাহিড়ী কর্মী-সমর্থকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। অভিযুক্ত বামফ্রন্টের কর্মী-সমর্থকদের শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস। অবিলম্বে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতার করা না হলে রাজ্যের শাসক জোটের দুই শরিক দলই আন্দোলনে নামার হুমকি দেওয়া হয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের পাসাং নরবু ভুটিয়া বলেন, “ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে বলে প্রমাণ মিললে পুলিশকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।” ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা বামফ্রন্টের সচিব অপূর্ব পাল। তিনি বলেন, “শান্তিপূর্ণভাবে আইন অমান্য আন্দোলন শেষ হয়েছে। ভাঙচুরের অভিযোগ সঠিক নয়।” |
রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরি, বেহাল রাস্তা সংস্কার, ১০০ দিনের কাজ, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা সহ ২৫ দফা দাবিতে অমান্য আন্দোলনে সামিল হন বামফ্রন্টের কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থক। আইন অমান্য আন্দোলনের আগে এদিন জেলাশাসকের দফতর সংলগ্ন এলাকায় মঞ্চ বেঁধে বিক্ষোভ সভা হয়। বামফ্রন্টের নেতারা সেখানে বক্তব্য রাখেন। মঞ্চ থেকেই আইন অমান্য শুরুর নির্দেশ দেওয়ার পর কর্মীরা জেলাশাসকের দফতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। পুলিশ বাধা দিতেই বচসা, ধস্তাধস্তি এবং হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। উত্তেজিত বামফ্রন্টের কর্মী-সমর্থকেরা ভিতরে ঢুকতে না পেরে মূল গেট ভাঙার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। পুলিশের তৎপরতায় তাঁরা তা না পেরে মূলগেটের দুইপাশের দুটি কাঁচের জানালায় তাঁরা ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ। ইসলামপুরে প্রাক্তন মন্ত্রী আনোয়ারুল হক, জেলা নেতা সুবীর বিশ্বাসের নেতৃত্বে কর্মীরা আইন অমান্য করলে তাঁদের গ্রেফতার করে পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গেই অবশ্য জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়। |
শিলিগুড়িতেও আইন অমান্য আন্দোলন নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। শিলিগুড়ি আদালত চত্বরের সামনে পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়েন সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। পরে অশোকবাবু মিছিল থেকে সরে দাঁড়ান এবং উত্তেজিত সমর্থকদের শান্ত হওয়ার নির্দেশ দেন। পুলিশ বামফ্রন্ট সমর্থকদের গ্রেফতার করে জামিনে ছাড়ার কথা ঘোষণা করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী বলেন, “শিলিগুড়িতে বইমেলাতে হামলার ঘটনা কেউ গ্রেফতার হননি। বুধবার গাড়ির ধাক্কায় ফাঁসিদেওয়ায় আমাদের দলের এক যুব নেতার মৃত্যু হয়। তাঁকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে বলে আমাদের সন্দেহ। এমনকী ওই গাড়িটিকে পুলিশ চিহ্নিত করতে পারেনি। মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে ব্যবহার করে রাজনীতি করছেন। এর বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে আমাদের আন্দোলন চলবে।” শিলিগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “ফাঁসিদেওয়ায় সিপিএম নেতার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত হচ্ছে।” এদিন আইন অমান্যের আগে অশোকবাবু, সিপিএম নেতা জীবেশ সরকার, সিপিআইয়ের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক উজ্জ্বল চৌধুরীর নেতৃত্বে মিছিল হয়। নেতৃত্ব বিশাল মিছিল অনিল বিশ্বাস ভবন থেকে শিলিগুড়ি আদালতের সামনে যায়। কিছু সময়ের জন্য শহরে যানজট তৈরি হয়। দ্রবমূল্য বৃদ্ধির এবং কৃষক স্বার্থ রক্ষায় আইন অমান্য হয়েছে আলিপুরদুয়ার মহকুমা শাসকের দফতরের সামনেও। এদিন দুপুরে আলিপুরদুয়ারের সুকান্ত মঞ্চের কাছ থেকে বামফ্রন্টের কৃষক সংগঠন গুলির কয়েক হাজার সমর্থক মিছিল করে আলিপুরদুয়ার মহকুমা শাষকের দফতরে জমায়েত হয়। পুলিশ তাঁদের মহকুমা শাসকের দফতর চত্বরে ঢুকতে বাধা দেয়। পরে ভিতরে ঢুকে তাঁরা বিক্ষোভ দেখান। পুলিশ সকলকে গ্রেফতার করেই জামিনে মুক্তি দেন। রাজ্যের মন্ত্রী যোগেশ বর্মন, আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন বিধায়ক নির্মল দাস, কুমারগ্রামের বিধায়ক দশরথ তিরকে-সহ বাম নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সিপিএমের বিরুদ্ধে ক্ষোভের জেরে কোচবিহারের তিন মহকুমায় বামফ্রন্টের ডাকা আইন অমান্য কর্মসূচিতে যোগ দেয়নি। দিনহাটা, মাথাভাঙা এবং মেখলিগঞ্জে মহকুমা শাসকের দফতরের সামনে কর্মসূচি হয়েছে। সিপিএমের লোকাল সম্মেলনগুলিতে প্রতিবেদনে দলের সমালোচনার প্রতিবাদে ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মসূচি থাকবে না বলে আগেই জানিয়ে দেয়। তবে সিপিএম দাবি করলেও শরিকের খাসতালুক নজরকড়া জমায়েত করতে পারেননি দলের নেতারা। এই পরিস্থিতিতে আজ, শুক্রবার কোচবিহারে সিপিএমের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক বসতে চলেছে ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্ব। |