মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের বৈঠকের পরে অবশেষে খুলল বন্ধ পাইপ কারখানা। টানা ২২ দিনের অচলাবস্থা কেটে বুধবার থেকে রঘুনাথপুর ২ ব্লকের ওই পাইপ কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়েছে।
রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মঙ্গলদা গ্রামের অদূরে এই কারখানাটি তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের আন্দোলনের জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কলকাতার শিল্পোদ্যোগী অঞ্জন মজুমদার ২০১০ সালে ৫ একর জায়গা কিনে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে এইচডিপিই পাই কারখানাটি গড়েছেন। এ বছর অগস্ট থেকে কারখানায় পরীক্ষামূলক ভাবে উৎপাদনও চালু হয়েছিল। মজুরি বৃদ্ধি-সহ শ্রমিকদের অন্যান্য সুযোগ সুবিধার দাবিতে কারখানার একমাত্র শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু করেন শ্রমিকেরা। কারখানা চালু রেখেই আন্দোলন করার দলীয় নির্দেশিকা থাকা সত্ত্বেও দলেরই শ্রমিক সংগঠনের আন্দোলনের জেরে কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকায় ও তৃণমূলের দলীয় স্তরে বিতর্ক দেখা দেয়।
ঘটনা হল, শ্রমিকদের ‘চাপেই’ অনড় অবস্থান থেকে সরতে হয়েছে স্থানীয় আইএনটিটিইউসি নেতৃত্বকে। স্থানীয় ও কারখানা সূত্রের খবর, টানা উৎপাদন বন্ধ থাকায় মজুরি না পাওয়া শ্রমিকেরাই উদ্যোগী হয়ে আলোচনায় বসেন মালিকপক্ষের সঙ্গে। দু’পক্ষের মধ্যে ইতিবাচক আলোচনা হওয়ার পরেই শ্রমিক সংগঠনের নেতা কার্তিক বাউরির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয় কারখানা কর্তৃপক্ষের। যদিও পুরোটাই হয়েছে প্রশাসনের নজরদারিতে। কারখানার মালিক অঞ্জনবাবু জানান, তিনি রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসকের সঙ্গে দেখা করে কারখানার বর্তমান পরিস্থিতি ও সমস্যার কথা বলেছিলেন। অন্য দিকে, কার্তিকবাবুও সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।
মহকুমাশাসক আবিদ হোসেন বলেন, “দু’পক্ষই আমার কাছে আসার পরে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার জন্য কিছু নির্দেশ তাঁদের দেওয়া হয়েছিল। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটিয়ে নিয়েছেন তাঁরা। দু’পক্ষ নিজেদের মধ্যে চুক্তি করেছে।” তাঁর সংযোজন, “কারখানাটিতে এখন পরীক্ষামূলক উৎপাদন চলছে। পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন শুরু হওয়ার পরে ফের দু’পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসা হবে।”
অন্য দিকে, যাঁর নেতৃত্বে শ্রমিক আন্দোলন হয়েছে, সেই আইএনটিটিইউসি-র রঘুনাথপুর ২ ব্লক সভাপতি কার্তিকবাবু জানান, শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা করতে সম্মত হয়েছে মালিকপক্ষ। এ ছাড়া অন্য সুযোগসুবিধা শ্রমিকদের দিতেও তাঁরা রাজি হওয়ায় আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়েছে। অঞ্জনবাবুর দাবি, “প্রথম থেকেই মজুরি বাড়ানো-সহ অন্য সুযোগসুবিধা দিতে আমরা রাজি ছিলাম। কিন্তু কার্তিকবাবুরা আলোচনার পরিবেশ তৈরি না করে সরাসরি ধর্মঘটে চলে গিয়েছিলেন।” তৃণমূল সূত্রে অবশ্য জানা যাচ্ছে, দলেরই শ্রমিক সংগঠনের আন্দোলনে কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে রঘুনাথপুরে বিনিয়োগে আগ্রহী শিল্পোদ্যোগীদের কাছে ‘ভুল’ বার্তা যাবে, এই আশঙ্কা থেকেই নমনীয় অবস্থান নিয়েছেন আইএনটিটিউসি নেতৃত্ব। কার্তিকবাবু বলেন, “কারখানায় পরীক্ষামূলক উৎপাদন চলছে। এই অবস্থায় আন্দোলন করলে কারখানাটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। ওই ঘটনা ঘটলে এলাকায় শিল্পায়নের প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে বলেই আমরা অবস্থান বদল করেছি। তা ছাড়া আমাদের দাবি মালিকপক্ষ মানতে সম্মত হওয়ায় জটিলতা কেটেছে।” |