নদীর দূষণ ঠেকাতে তৎপর হয়েছিল পুরসভা। জগদ্ধাত্রী পুজোর বিসর্জনের দিন কৃষ্ণনগরের কদমতলা ঘাটে দাঁড়িয়ে থেকে ‘পরিষ্কারের কাজ’ তদারকিও করেন পুরপ্রধান। নদীকে দূষণমুক্ত করার এই উদ্যোগে প্রতিমার কাঠামোগুলো টেনে নিয়ে যাওয়া হল মাঝ নদীতে। পুরসভার সাফাই, এতে নদীর ঘাট আবর্জনামুক্ত হবে। কিন্তু তাতে নদী দূষণ ঠেকানো গেল কী?
জগদ্ধাত্রী প্রতিমা বিসর্জনের শেষ দিন ছিল ৬ নভেম্বর। ইতিমধ্যেই মাঝ নদীতে ফেলে রাখা প্রতিমার ওই কাঠামো বিক্রির আশায় পাড়ে টেনে নিয়ে এসেছেন স্থানীয় কিছু মানুষ। আর ফেলে রেখেছেন নদীর পাড় বরাবর। এত দিনে কাঠামোয় পচনও ধরেছে। শ’খানেক আধ-পচা কাঠামো এসে জড়ো হয়েছে কদমতলা ঘাট সংলগ্ন এলাকায়। দূর্গন্ধে অতিষ্ঠ হচ্ছেন আশপাশের বাসিন্দারা। দূষিত হচ্ছে জলও। স্বভাবতই এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ ঘাটে স্নান করতে আসা সাধারণ মানুষ থেকে মৎসজীবীরা। অভিযোগ, পুরসভার চোখের সামনে এই ভাবে দূষণ ছড়াচ্ছে। তবুও ভ্রুক্ষেপ নেই কারো। বিসর্জনের দিন কাঠামো পরিষ্কার করার লাভ কী হল? |
স্থানীয় এক মৎসজীবী সনৎ হালদার বলেন, “প্রতি বছরই কিছু স্থানীয় মানুষ এ ভাবে কাঠামোগুলো জড়ো করে রাখেন। আস্তে আস্তে বিক্রি করেন। কাঠামোগুলো পচে যাওয়ায় ওই এলাকায় মাছ ধরতে যেতে পারছি না। বিষাক্ত জলে মাছও মরে যাচ্ছে প্রচুর।” কৃষ্ণনগর হাইস্কুলের শিক্ষক পার্থ স্বর্ণকার বলেন, “সমস্যাটা খুবই গুরুতর। প্রায় শ’খানেক কাঠামো এই ভাবে নদীতে পড়ে রয়েছে। কোনও ভাবেই দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া চলবে না। প্রশাসনকে একটা না একটা ব্যবস্থা করতেই হবে।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতি বছরই এ ভাবে কাঠামোগুলো দিনের পর দিন নদীতেই ফেলে রাখা হয়। পরে তুলে নিয়ে বিক্রি করা হয়। অনেকে আবার এগলো শুকিয়ে নিয়ে জ্বালানির জন্যও ব্যবহার করা হয়।”
সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে কৃষ্ণনগরের পুরপ্রধান কংগ্রেসের অসীম সাহা বলেন, “সমস্যার কথা আমরা জানি। এলাকার কিছু মানুষ এই কাঠামোগুলো ধরে রেখে দিয়েছে। আগের বার আমরা সেগুলো নদী থেকে তুলে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করলে এলাকায় খুবই গণ্ডগোল হয়েছিল। আর যারা ওই কাঠামোগুলো বিক্রি করেন তাঁরা খুবই গরিব। তবে আমরা ওঁদের জানিয়ে দিয়েছি, দিন কয়েকের মধ্য ওগুলো পরিষ্কার করা না হলে আমরা ব্যবস্থা নেব।” কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি বলেন, “এরকম ঘটনার কথা আমার জানা ছিল না। আমি পুলিশকে বলেছি দ্রুত ওই কাঠামোগুলো নদী থেকে তুলে ফেলার ব্যবস্থা করতে। একই সঙ্গে যারা কাঠামোগুলো এ ভাবে নদীতে জমিয়ে রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায় কী না তা ভেবে দেখব।” |