সম্পাদকীয় ২...
সাম্য কাহাকে বলে
রনারীর সমানাধিকার ও সাম্যের ধারণাটি বহুমাত্রিক, জটিলও বটে। এই সমাজে নানা ঘটনায় তাহা স্পষ্ট হইয়া উঠে। সম্প্রতি উত্তর চব্বিশ পরগনার অশোকনগরে এক দল পুরুষ নিত্যযাত্রী দাবি তুলিয়াছিলেন, মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত বিশেষ ট্রেনে তাঁহাদের চাপিবার অধিকার দিতে হইবে। এই দাবিতে রেল অবরোধে সচেষ্ট হইয়াছিলেন তাঁহারা। আপাত ভাবে মনে হইতে পারে, কর্মরত নারী-পুরুষের সাম্যের দাবি সঙ্গত। বিশেষ করিয়া নিত্য অফিস যাইবার সময় লোকাল ট্রেনের ভিড়ে যে ভাবে পুরুষ যাত্রীদের প্রাণ হাতে করিয়া ঝুলিতে ঝুলিতে কাজে যাইতে হয়, তাহা বলিবার নহে। এখনও অবধি পুরুষদের তুলনায় কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের সংখ্যা কম। তাহার উপরে সাধারণ কামরায় নারীপুরুষ উভয়েই যাত্রী হন আর লেডিজ স্পেশাল-এ যাত্রী কেবল মেয়েরাই, ফলে অফিস যাত্রার সময় সাধারণ ভাবে লোকাল ট্রেনগুলির যে চেহারা হয় তাহার তুলনায় মহিলাদের জন্য বিশেষ ট্রেনগুলি তো যাহাকে বলা যাইতে পারে স্বর্গ। সুতরাং এই পার্থিব নিত্যস্বর্গে পুরুষদের চাপিবার লোভ তো হইতেই পারে। হাত পা ছড়াইয়া দণ্ডায়মান হইবার অবকাশ রহিয়াছে, মায় বসিবার জায়গা পর্যন্ত ফাঁকা পড়িয়া আছে, তথাপি পুরুষ বলিয়া উঠিবার উপায় নাই কত দিন আর এই বঞ্চনা সহ্য করা সম্ভব! সুতরাং প্রতিবাদ।
বঞ্চনা, সাম্য, ইত্যাকার শব্দগুলি বিপজ্জনক, কারণ সহজেই তাহাদের অপব্যবহার সম্ভব। এ ক্ষেত্রেও তেমন অপব্যবহার ঘটিতেছে। নিত্যযাত্রীদের দাবি নির্বিচারে উড়াইয়া দেওয়ার নয়, কিন্তু তাহা বিচার করিলে দেখা যাইবে, তাঁহারা যে ‘সাম্য’র দোহাই পাড়িয়াছেন, তাহা যথার্থ সাম্য নহে। আপাত-সাম্য এবং প্রকৃত সাম্যের মধ্যে দূরত্ব বিস্তর। একটি দৃষ্টান্ত প্রাসঙ্গিক। ধরা যাক, একখানি রুটি রাখা হইয়াছে। দুই জনকে বলা হইল, সমান দূরত্ব হইতে ছুটিয়া যে আগে পৌঁছাইবে, সে রুটিটির দখল পাইবে। সহজ সরল সাম্য। কিন্তু দুই জন প্রতিযোগীর মধ্যে এক জন যদি অক্ষম বা অশক্ত হয়, তাহা হইলে? রুটি দখলের লড়াইতে তাহারা সমান সুযোগ পাইল কি? এই সমাজে কার্যত মেয়েদের একখানি ডানা কাটিয়া রাখা হইয়াছে, ন্যায়সঙ্গত ভাবে তাহাদের যাহা যাহা প্রাপ্য, পুরুষশাসিত সমাজ তাহা দেয় না; সাম্যের কথা মুখে বলে, কিন্তু সে সাম্য আপাত সাম্য মাত্র। ন্যায্য অধিকার হইতে নারীরা বহু ক্ষেত্রেই বঞ্চিত। বহু ক্ষেত্রেই তাঁহারা পুরুষের সহিত অ-সম প্রতিযোগিতার শিকার। বিশেষত জনজীবনে। যে ট্রেন প্রসঙ্গে এই আলোচনা, সেই ট্রেনে, কিংবা শহরের বাসে মিনিবাসে, অথবা সাধারণ ভাবে রাস্তাঘাটে মেয়েরা যে পরিবেশে চলাচল করিতে বাধ্য হন, তাহা প্রায়শই সম্মানজনক নহে। সরাসরি লাঞ্ছনা বা অমর্যাদার বহু নমুনা অহরহ প্রকট, কিন্তু নারীর প্রতি আচরণে সমাজের বিরূপ মানসিকতা অনেক সময়েই প্রকট নহে, প্রচ্ছন্ন, প্রচ্ছন্ন বলিয়াই দ্বিগুণ ক্ষতিকর। এই কারণেই নারীর প্রতি আচরণ বা মনোভঙ্গি স্থির করিবার ক্ষেত্রে পুরুষদের কিঞ্চিৎ সংবেদনশীল হওয়া বিধেয়। ‘মেয়েদের সুবিধা দেওয়া হইতেছে’ জাতীয় যুক্তির অবতারণা করিবার আগে সামাজিক বাতাবরণটির কথা এক বার ভাল করিয়া ভাবিয়া লওয়া বিধেয়। আদর্শ সমাজে মেয়েদের জন্য বিশেষ ট্রেন থাকিবার কথা নয়। ‘লেডিজ স্পেশাল’ না রাখিতে হইলেই ভাল হইত, কিন্তু তাহা যে রাখিতে হইতেছে, সেটাই সমাজের আত্মগ্লানির কারণ হওয়া উচিত। ‘পুরুষ বনাম নারী’ বিবাদের মোড়কে সেই গ্লানিকে পুরিয়া ফেলা সম্ভব নয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.