|
|
|
|
অণ্ণার মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক তীব্র |
পওয়ারকে চড়, নৈরাজ্যের ইঙ্গিতই দেখছে সব দল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
পি চিদম্বরম, ওমর আবদুল্লা, জনার্দন দ্বিবেদী, ইয়েদুরাপ্পা গত কয়েক বছরে বেশ কয়েক জন নেতা-মন্ত্রীর উপরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই শারীরিক ভাবে নিগ্রহের ঘটনা ঘটেনি। যা ঘটল আজ। কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শরদ পওয়ারকে আজ এক অনুষ্ঠানে বেমক্কা চড় মেরে বসেন হরবিন্দর সিংহ নামে এক শিখ যুবক। বছর তিরিশের ওই পরিবহণ ব্যবসায়ী পরে জানিয়েছেন, দুর্নীতি-মূল্যবদ্ধি নিয়ে তীব্র ক্ষোভেই তিনি ওই কাজ করেছেন। এবং এমনটা করার জন্য তিনি নাকি রীতিমতো ‘পরিকল্পনা’ করেই এসেছিলেন!
আড়াই বছর আগে কংগ্রেসের সদর দফতরের মধ্যেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরমকে লক্ষ করে জুতো ছুড়েছিলেন এক ব্যক্তি। তার পরেও কয়েক বার নেতা-মন্ত্রীদের উপরে হামলা হয়েছে। তার পরে আজকের এই ঘটনা। হতে পারে, এ-ও এক বিক্ষিপ্ত ঘটনা। কিন্তু সেই বিক্ষিপ্ত ঘটনাই আজ পুরোদস্তুর উদ্বেগে ফেলে দিল রাজনৈতিক শ্রেণিকে। নিরাপত্তার প্রশ্নটি তো রয়েছেই, তার থেকেও বড় হল, কোন নৈরাজ্যের পথে এগোচ্ছে দেশ! মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতি, অনগ্রসরতা নিয়ে রাজনৈতিক শ্রেণির বিরুদ্ধে মানুষের অসন্তোষ কি এ বার এ ভাবেই প্রকাশ পাবে? |
|
|
অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বেরিয়ে আসার সময়
হঠাৎই চড় কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শরদ পওয়ারকে। |
কোনও মতে দেওয়াল ধরে
নিজেকে সামলান পওয়ার। |
|
|
হরবিন্দর সিংহ নামে ওই যুবক এর পর
কৃপাণ বের করে তেড়ে যান পওয়ারের দিকে। |
পরে নিরাপত্তারক্ষীরা সরিয়ে
নিয়ে যান তাঁকে। |
|
আজ দুপুরে ঘটনাটি ঘটে সংসদ ভবনের অদূরে। নয়াদিল্লি পুর নিগম ভবনে একটি সাহিত্য অনুষ্ঠান সেরে তখন বাইরে আসছিলেন পওয়ার। তখন আচমকাই ভিড় ঠেলে কিছুটা এগিয়ে এসে হরবিন্দর সিংহ পওয়ারের গালে চড় মারেন। পরে নিরাপত্তা রক্ষীরা তাঁকে ঠেলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় কোমরে গুঁজে রাখা কৃপাণটিও বের করেন হরবিন্দর। রীতিমতো চিৎকার করেই বলতে থাকেন, দুর্নীতি ও মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এ বার থেকে এ রকমই জবাব দেওয়া হবে রাজনীতিকদের। চার দিন আগে আদালত চত্বরে এই যুবকই সাজাপ্রাপ্ত প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী সুখরামের ওপর হামলা করেছিলেন।
সংসদ ভবনে এ খবর পৌঁছতে সময় লাগেনি। টিভি চ্যানেলগুলির পর্দায় তা মুহূর্তে ব্রেকিং নিউজ হিসেবে ফুটে ওঠে। তার পর দলমত নির্বিশেষে ঘটনাটির নিন্দা করেন রাজনৈতিক নেতারা। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ, সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সপা নেতা মুলায়ম সিংহ সকলেই একবাক্যে জানিয়ে দেন, এ ধরনের হিংসার পথ প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা লোকসভার নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায় ঘটনাটির তীব্র নিন্দা করে আক্ষেপের সুরেই বলেন, “কোন দিকে যে দেশ যাচ্ছে, জানি না!”
রাজনৈতিক নেতৃত্বের এই প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই নিজের মন্তব্যে সকলকে চমকে দিয়েছেন প্রবীণ গাঁধীবাদী নেতা অণ্ণা হজারে। শরদ পওয়ারকে চড় মারার ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আজ রালেগন সিদ্ধিতে অণ্ণার চটজলদি পাল্টা প্রশ্ন, “চড় মেরেছে? মাত্র একটা চড়!”
পওয়ারের গায়ে হাত তোলার ঘটনার বিশ্লেষণে নেমে রাজনীতিকদের বড় অংশ এমনিতেই মনে করছিলেন যে, অণ্ণার আন্দোলনের প্রেক্ষিতেই এই ধরনের হিংসার ঘটনা শুরু হয়েছে। কেন না লোকপাল বিল নিয়ে আন্দোলনে নেমে যে ভাবে অণ্ণা ও তাঁর সহযোগীরা রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে ‘ক্ষোভ ও ঘৃণায়’ উস্কানি দিচ্ছেন, তা থেকেই এ ধরনের মনোভাব তৈরি হচ্ছে। চিদম্বরমের বিরুদ্ধে শিখ সাংবাদিকের জুতো ছোঁড়ার ঘটনার থেকে আজকের ঘটনা তাই চরিত্রগত ভাবে পৃথক। অণ্ণার মন্তব্যের পর সেই বিশ্লেষণ আজ অক্সিজেন পায়। আর তা উস্কে যায়, অণ্ণার সহযোগী কিরণ বেদীর প্রতিক্রিয়ায়। যিনি পওয়ারের ঘটনার বিশ্লেষণ করে বলেন, “লোকপাল বিল পাশ না হলে আরও কিছু লোক আক্রান্ত হবেন!” |
হেনস্থার শিকার |
|
১৯ নভেম্বর, ২০১১: কোর্ট চত্বরে সাধারণ
লোকের হাতে আক্রান্ত প্রাক্তন মন্ত্রী সুখরাম |
|
১৩ অক্টোবর, ২০১১: অণ্ণা-সহযোগী
প্রশান্ত ভূষণকে মার ৩ যুবকের |
|
৬ জুন, ২০১১: সাংবাদিক সেজে এক ব্যক্তি
জুতো ছোড়ে কংগ্রেস মুখপাত্র জনার্দন দ্বিবেদীকে |
|
১৫ অগস্ট, ২০১০: জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী
ওমর আবদুল্লাকে লক্ষ করে জুতো |
|
২৮ এপ্রিল, ২০০৯: বিজেপি-র মিছিলে ভিড়
থেকে চটি ধেয়ে আসে ইয়েদুরাপ্পার দিকে |
|
১৬ এপ্রিল, ২০০৯: লালকৃষ্ণ আডবাণীকে
চটি ছোড়েন বিজেপিরই এক সদস্য |
|
৭ এপ্রিল, ২০০৯: চিদম্বরমকে লক্ষ করে
জুতো ছোড়েন সাংবাদিক জার্নেল সিংহ |
|
অণ্ণা ও তাঁর সঙ্গীদের এ ধরনের প্রতিক্রিয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষুব্ধ রাজনৈতিক নেতৃত্ব। নিজেকে বরাবর গাঁধীবাদী বলে দাবি করেন অণ্ণা। আজ তাঁর মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে কংগ্রেস মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি বলেন, “আজকের ঘটনায় কোনও গাঁধীগিরি রয়েছে বলে মনে হয় না!” আর যাঁকে মারা নিয়ে অণ্ণার ওই মন্তব্য, সেই শরদ পওয়ার তীব্র ব্যঙ্গের সুরে বলেন, “হতে পারে নতুন গাঁধীবাদের জন্ম হচ্ছে!” রাজনৈতিক কারণে অণ্ণাকে চটাতে নারাজ বিজেপি অবশ্য এই ‘গাঁধীবাদীর’ মন্তব্য প্রসঙ্গে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। বস্তুত মহারাষ্ট্র রাজনীতিতে অণ্ণার সঙ্গে শরদ পওয়ারের বিবাদের বিষয়টি সুবিদিত। কিন্তু আজকের ঘটনার পরে তাঁর ওই মন্তব্য যে ঠিক হয়নি, তা আঁচ করে অণ্ণা পরে বলেন, “আমি ঘটনাটির নিন্দা করছি।” কিন্তু তাতেও বিতর্ক থামেনি বুঝতে পেরে রাতের দিকে তিনি বলেন, “আমি ওঁর কাছে ক্ষমা চাইতেও রাজি আছি।”
শরদ পওয়ারের ওপর হামলার ঘটনা জানাজানি হতেই মহারাষ্ট্রে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত ভাবে অশান্তি হয়। এনসিপি সমর্থকরা কয়েকটি জায়গায় পথ অবরোধ করেন। কিছু দোকানপাটও জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয়। আগামিকাল পুণে, বিদ-সহ কয়েকটি রাজ্যে বন্ধের ডাক দিয়েছেন এনসিপি সমর্থকেরা। পওয়ার অবশ্য সমর্থকদের শান্ত থাকতে অনুরোধ করেন। পওয়ারের ঘটনা ঘিরে আজ কংগ্রেস-বিজেপির মধ্যেও এক দফা চাপানউতোর হয়। গত কাল বিজেপি নেতা যশোবন্ত সিংহ বলেছিলেন, মূল্যবৃদ্ধি যে ভাবে হচ্ছে, তাতে মানুষ এ বার হিংসার পথে নামবেন। আজ সেই প্রসঙ্গ টেনে কংগ্রেস নেতা রশিদ অলভি বলেন, “বিজেপি এই ধরনের ঘটনায় প্ররোচনা দিচ্ছে।” কংগ্রেসের এই প্রচারে তাদের ভাবমূর্তির ক্ষতি হচ্ছে বুঝে বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, “যশোবন্তের মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। বিজেপি এই ধরনের হিংসাকে কোনও ভাবেই সমর্থন করে না।” |
|
|
|
|
|