|
|
|
|
‘পরিবর্তনের’ আবেদন ঋতব্রতর |
দক্ষিণ কলকাতা থাকবে না,‘ভাবতেই’ পারছেন না মমতা |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
দক্ষিণ কলকাতা তাঁর কাছে ‘মাতৃসমা’। সেখানকার বাসিন্দারা তাঁর কাছে ‘মা-ভাই-বোন’। দু’ মাস আগে সেই দক্ষিণ কলকাতার অন্তর্গত ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তাঁকে সমর্থন করার জন্য সেখানকার ‘মা-ভাই-বোনেদের প্রতি’ তিনি আবেদন জানান। ভবানীপুর সে বার ‘ঘরের মেয়ে’ কে ফেরায়নি। এ বার দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তাঁর দলের প্রার্থী সুব্রত বক্সীকে ‘আশীর্বাদ ও দোয়া করুন’ বলে সেখানকার ‘মা-ভাই বোনেদের’ কাছে আবার ‘আবেদন’ করছেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘দক্ষিণ কলকাতা আমার কাছে থাকবে না, আমি ভাবতেই পারি না’!
তৃণমূল নেত্রী এমন ভাবতেই পারেন! কারণ, সেই ১৯৯১ সাল থেকে যে দক্ষিণ কলকাতা থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে এসেছেন মমতা, তার ছেদ পড়ে গত অক্টোবরে। ভবানীপুরের বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পরে সাংসদ পদে ইস্তফা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর ছেড়ে-যাওয়া দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে তাঁর ‘অত্যন্ত বিশ্বস্ত’ সহকর্মী সুব্রতবাবুকে প্রার্থী করেছেন মমতা। ভবানীপুর মমতাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন সেখানকার নির্বাচিত বিধায়ক সুব্রতবাবুই। এ বার তাঁকে জয়ী করার ‘আবেদনে’ মমতা বলেছেন, ‘দক্ষিণ কলকাতাকে নিজের কাছেই রেখে দেওয়ার জন্য সব দিক থেকে নজর দেওয়ার’ জন্যই সুব্রতবাবুকে প্রার্থী করা হয়েছে। মমতা তাঁর ‘আবেদনে’ লিখেছেন ‘আপনাদের বিপুল সমর্থন দিয়ে তৃণমূল প্রার্থীকে দিল্লির দরবারে বাংলার মানুষের কন্ঠস্বরকে জোরালো ভাবে প্রকাশ করার সুযোগ দিন।” সুব্রতবাবুকে ‘সুযোগ’ দিলে তাঁর দল ও মমতা নিজে দক্ষিণ কলকাতার মানুষের কাছে ‘কৃতজ্ঞ’ থাকবেন বলে তৃণমূল নেত্রী তাঁর ‘আবেদনে’ জানিয়েছেন।
বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা রঙিন এই ‘আবেদনে’ মমতা আশা প্রকাশ করেছেন, ‘আমার স্থির বিশ্বাস, যে আস্থা ও ভরসা আপনারা আমার প্রতি, দলের প্রতি প্রকাশ করেছেন, তা সুব্রত বক্সীর প্রতিওঅব্যাহত থাকবে’।
মমতার ‘আবেদন’ দক্ষিণ কলকাতার মানুষের হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে পৌঁছবে শীঘ্রই। তবে মমতার ‘নিজের লোক’ বলে তৃণমূল প্রার্থী সুব্রতবাবুর যে পরিচয় তুলে ধরা হচ্ছে, সেই দিকটিকেই আক্রমণ করতে চেয়েছেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী, সিপিএম প্রার্থী ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। এসএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ঋতব্রতের প্রার্থী পরিচয়ে বলা হয়েছে, ‘৬ মাসে এমন কোনও কাজ করেননি, যাতে লোকে বুঝবেন তিনি কোন দফতর চালান! তবে নীরবে একটিই কাজ করেছেন পরিবহণ নিগমের ৬ হাজার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পেনশনটুকু আটকে দিয়েছেন। অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সম্বলটুকু কেড়ে, তাঁদের সুইসাইড নোট আর চোখের জল মাড়িয়ে কোটি টাকায় সুসজ্জিত মন্ত্রীদের চেম্বারে যান উনি’।
রাজ্য এবং জাতীয় স্তরের কোনও ক্ষেত্রেই তৃণমূলের নির্দিষ্ট কোনও নীতি নেই, এই অভিযোগ ব্যাখ্যা করে দক্ষিণ কলকাতার মানুষের প্রতি ঋতব্রতের ‘আবেদনে’ বলা হয়েছে ‘২২ বছর পরে দক্ষিণ কলকাতায় পরিবর্তন আসুক। আসুক দেশের বুকে পরিবর্তনের নতুন বার্তা। দক্ষিণ কলকাতা নতুন পথ দেখাক, লোকসভায় সব চেয়ে তরুণ সাংসদটিকে পাঠিয়ে’।
বস্তুত, আজ, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রচারে নামার কথা মমতার। সুব্রতবাবু বৃহস্পতিবার জানান, আজ দিল্লি থেকেই ফিরেই সন্ধ্যায় তিলজলার পিকনিক পার্কে নির্বাচনী প্রচার সভায় প্রধান বক্তা মুখ্যমন্ত্রী। সুব্রতবাবুর সমর্থনে তৃণমূল যুব সংগঠনের রাজ্য সভাপতি তথা তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে আজই মোমিনপুর থেকে খিদিরপুর পর্যন্ত মিছিল হবে। কাল, শনিবার শম্ভুনাথ পণ্ডিত রোড ও গার্ডেরিচে দু’টি সভা করার কর্মসূচি আছে তৃণমূল নেত্রীর। রবিবার খিদিরপুর মোড় ও গার্ডেনরিচে দু’টি সভা করে মুখ্যমন্ত্রী প্রচার শেষ করবেন।
রবিবারই বেহালা পূর্ব ও পশ্চিম বিধানসভা এলাকার কেন্দ্রীয় মিছিলে অংশ নেবেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। অজন্তা সিনেমার উল্টো দিকে জমায়েত থেকে মিছিল শুরু হবে। কেন বুদ্ধবাবু সভা করছেন না?
দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রে বামফ্রন্টের নির্বাচন কমিটির আহ্বায়ক নিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশ অনুমোদনের ব্যাপারে নানা রকম টালবাহানা করছিল। সভা করলে হয় পূর্ব অথবা পশ্চিম বেহালায় করতে হত। ভেবেছিলাম, রাস্তায় করব। তাতেও অসুবিধা। তার পরিবর্তে দু’টি এলাকাতেই যাতে সমান ভাবে প্রচার করা যায়, তার জন্য জমায়েতের পরে কেন্দ্রীয় মিছিল করা যাবে।” ওই দিনই খিদিরপুরে প্রচার-সভা করবেন সিপিএমের আর এক পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি।
প্রসঙ্গত, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেবের অভিযোগ, জোকা-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ১৭টি বুথে তাঁদের পক্ষে পোলিং এজেন্ট দেওয়া মুশকিল হচ্ছে। যাঁরা এজেন্ট হবেন, তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে। |
|
|
|
|
|