|
|
|
|
|
তৈরি রাখুন নিজেকে |
কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে নিয়োগের জন্য আইবিপিএস পরীক্ষা নিলেও, এসবিআই এবং বেসরকারি
ব্যাঙ্কগুলি লোক নেয় নিজস্ব নিয়মে। তৈরি থাকুন সেই সুযোগ নিতে। লিখছেন, গার্গী মজুমদার। |
মোট ১৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে কর্মী নিয়োগের নতুন নিয়ম চালু হয়েছে ইনস্টিটিউ অফ ব্যাঙ্কিং পার্সোনেল সিলেকশন (আইবিপিএস)-এর হাত ধরে। যার খুঁটিনাটি বলা হয়েছে আগের দুই পর্বে। তবে দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই) এর আওতায় পড়ে না। বরাবরই তারা লোক নেয় নিজস্ব নিয়মে। অন্য দিকে, বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিরও নিয়োগের আলাদা আলাদা ধরন। তাদের চাহিদা সম্পর্কে আন্দাজ পেলে নিজেকে তৈরি রাখতে সুবিধা হবে পড়ুয়াদের।
|
এসবিআইয়ে নিয়োগ পদ্ধতি |
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার নিয়োগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানালেন ব্যাঙ্কটির মানব সম্পদ বিভাগের কর্তৃপক্ষ
এখানে নিয়োগ চলে দু’টি পথে। প্রথমটি, ‘সেন্ট্রাল রিক্রুটমেন্ট’-এর মাধ্যমে এবং দ্বিতীয়টি, কর্পোরেট বিভাগের ‘প্রোমোশন ডিপার্টমেন্ট’ মারফত।
১) একটির কাজ ‘ক্লার্ক’ পদে লোক নেওয়া। আবেদন করতে ৬০ শতাংশর বেশি নম্বর নিয়ে দ্বাদশ (১০+২) শ্রেণি পাশ কিংবা স্নাতক হতে হয়। প্রথম ধাপ লিখিত পরীক্ষা। পরীক্ষাটি হয় দেশ জুড়ে। তবে প্রার্থী বাছা হয় রাজ্যের ভিত্তিতে। কেন্দ্রের নীতি মাফিক, প্রতিবন্ধী, তফসিলি জাতি, উপজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর জাতি এবং সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট সংরক্ষণ রয়েছে।
ক্লার্ক পদের জন্য এসবিআইয়ে লিখিত পরীক্ষার ধরন বিষয়গত দিক থেকে অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের পরীক্ষার থেকে খুব একটা আলাদা কিছু অবশ্য নয়। বিষয় পাঁচটি টেস্ট অফ রিজনিং, টেস্ট অফ কোয়ান্টিটেটিভ অ্যাপ্টিটিউড, টেস্ট অফ জেনারেল ইংলিশ, টেস্ট অফ জেনারেল অ্যাওয়্যারনেস এবং টেস্ট অফ মার্কেটিং অ্যাপ্টিটিউড ও কম্পিউটার অ্যাওয়্যারনেস। প্রতিটি পত্রে যাঁদের নম্বর উপরের দিকে থাকে, তাঁদেরই ডাকা হয়। মোট শূন্য পদের সংখ্যার প্রায় তিনগুণ প্রার্থী ইন্টারভিউয়ে হাজির হওয়ার সুযোগ পান।
ইন্টারভিউ নেন ব্যাঙ্কের উচ্চপদস্থ অফিসাররা। লিখিত পরীক্ষা ও ইন্টারভিউয়ের নম্বর মিলিয়ে চূড়ান্ত বাছাই হয়। তার পর স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নীতি অনুযায়ী ‘নো ইওর এমপ্লয়ি’ (আপনার কর্মীকে জানুন) শর্ত দু’টি পূরণ করতে পারলেই চাকরি।
২) অন্য দফতরটির মাধ্যমে নিয়োগ করা হয় প্রবেশনারি অফিসার-সহ অন্যান্য অফিসার স্তরের কর্মী। এ ক্ষেত্রে আবেদন করতে ১০+২ পরীক্ষায় ন্যূনতম ৬০ শতাংশের বেশি ও স্নাতক স্তরে ন্যূনতম ৫৫ শতাংশের বেশি নম্বর পেতেই হবে। স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যে কোনও শাখায় স্নাতক হলেই চলবে। এ ক্ষেত্রেও কেন্দ্রের নীতি অনুযায়ী সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে।
দুই ধাপে হয় লিখিত পরীক্ষা। প্রথম ধাপে বিষয় হিসেবে থাকে, টেস্ট অফ রিজনিং, টেস্ট অফ ডেটা অ্যানালিসিস ও ইন্টারপ্রিটেশন, টেস্ট অফ জেনারেল অ্যাওয়্যারনেস, মার্কেটিং অ্যাপ্টিটিউড ও কম্পিউটার অ্যাওয়্যারনেস এবং টেস্ট অফ ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ। এই পত্রগুলিতে অবজেক্টিভ ধরনের প্রশ্ন করা হয়।
দ্বিতীয় ধাপে দিতে হয় শুধুমাত্র ইংরেজির লিখিত পরীক্ষা। যা হয় রচনাধর্মী। বিষয় হিসেবে থাকে কম্প্রিহেনশন, প্রেসি লেখা ও চিঠি বা রচনা লেখা।
গ্রুপ ইন্টারঅ্যাকশন এবং ইন্টারভিউয়ের জন্য এ ক্ষেত্রেও ডাকা হয় মোট শূন্য পদের তিনগুণ প্রার্থীকে। |
|
৩) এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও আইন বিভাগে আলাদা করে ওই ধরনের কাজের যোগ্য অফিসার নেয় স্টেট ব্যাঙ্ক। কাজের সুযোগ রয়েছে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ও মেডিক্যাল অফিসার হিসেবেও। এই সব ক্ষেত্রেও প্রবেশনারি বা অন্যান্য অফিসার নিয়োগের পদ্ধতিই অনুসরণ করা হয়।
কী ধরনের কর্মী চায় ব্যাঙ্ক:
১) উদ্যমী,
২) হিসেব-নিকেশে স্বচ্ছন্দ্য ও দক্ষ,
৩) যুক্তিবাদী,
৪) ভাল জনসংযোগ ক্ষমতাসম্পন্ন,
৫) কথোপকথনে দক্ষ।
লিখিত পরীক্ষার পর ইন্টাভিউয়ে এই গুণগুলিই যাচাই করে নেওয়া হয় অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। কাজেই লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হওয়ার পাশাপাশি প্রথম থেকেই এই বিষয়গুলিও মাথায় রেখে নিজেকে তৈরি করতে থাকলে সাফল্য পাওয়া খুব কঠিন হবে না।
অন্য দিকে, ফিনান্স, অ্যাকাউন্টিং ও মানব সম্পদ সংক্রান্ত বিষয়ে যাঁদের স্বাভাবিক ঝোঁক রয়েছে, তাঁরা এই কাজে যথেষ্ট উৎসাহ পাবেন। মানুষের সঙ্গে মিশতে, কথা বলতে যাঁরা পছন্দ করেন এবং কাজের প্রয়োজনে হলেও, যাঁরা ভ্রমণে উৎসাহী, তাঁরা স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ায় কাজ করার জন্য আদর্শ প্রার্থী।
|
বেসরকারি ব্যাঙ্ক কাদের চায় |
এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক, এইচএসবিসি ব্যাঙ্ক বা আইডিবিআই ব্যাঙ্ক থেকে শুরু করে সমস্ত বেসরকারি ব্যাঙ্কই নিজেদের প্রয়োজন মাফিক বিভিন্ন সময় কর্মী নিয়োগ করে থাকে নিজস্ব লিখিত পরীক্ষা ও ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে।
পড়ুয়াদের কিছুটা ধারণা দিতেই উদাহরণ হিসেবে এখানে দু’একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের নিয়োগ সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া হল।
যেমন, এই প্রসঙ্গে এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের মানব সম্পদ বিভাগের এক উচ্চপদস্থ কর্তা জানিয়েছেন
• তাঁদের ব্যাঙ্কের নিজস্ব কেরিয়ার পোর্টাল (ওয়েবসাইট), চাকরির খোঁজখবর দেয় এমন কিছু ওয়েবসাইট এবং প্লেসমেন্ট সংস্থাগুলি মারফত পাওয়া আবেদনপত্রের ভিত্তিতে নিয়োগ হয়
• অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় এলাকার ভিত্তিতে কর্মী নেওয়া হয়
• চাকরির দুনিয়ায় যাঁরা একেবারে নতুন পা রাখছেন, তাঁদের নিয়োগ করা হয় লিখিত পরীক্ষাও ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে
• অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাঙ্কিং বিষয় সংক্রান্ত দক্ষতা চাওয়া হয়
• কিছু ক্ষেত্রে পূর্ব-অভিজ্ঞতা জরুরি
• কথোপকথনের দক্ষতা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, ব্যক্তিত্ব ইত্যাদির পাশাপাশি নির্দিষ্ট এক একটি বিভাগে কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ের জ্ঞান থাকা বাঞ্ছনীয়
• আবার বিক্রি-বিপণনের মতো কাজের ক্ষেত্রে কথোপকথন ও জনসংযোগ ক্ষমতা ভাল থাকলে, উদ্যমী হলে, নেতৃত্ব দেওয়ার ব্যক্তিত্ব থাকলে যে কোনও বিষয়ে পড়াশোনা করে আসা বা যে কোনও ধরনের ক্ষেত্রে কাজ করে আসা প্রার্থীই কাজের সুযোগ পাবেন
• ব্যাঙ্কের নিজস্ব প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে
• বড়সড় দায়িত্ব দেওয়ার জন্য যোগ্য প্রার্থীদের তৈরি করে নেয় ব্যাঙ্ক নিজেই।
অন্য দিকে, যাঁরা চাকরিতে প্রথম যোগ দিচ্ছেন (এন্ট্রি-লেভেল ম্যানেজার), তাঁদের মধ্যে এই কাজের প্রতি কতটা ভালবাসা রয়েছে, তা প্রথমেই যাচাই করে নেয় আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক। (তথ্যসূত্র: www.icicicareer.com ওয়েবসাইট)
১) যে বিষয়গুলি তারা পরখ করে, সেগুলি হল,
‘গ্রাহকই প্রথম’, এই মানসিকতা, কাজের প্রতি ভালবাসা ও আন্তরিকতা, উদ্যম, নীতিবোধ ও সততা
২) এই লক্ষ্যে একেবারে অনিভজ্ঞ বা মাত্র বছর দুয়েকের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থীদের জন্য আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক একটি ‘অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট’ নেয়
৩) পরীক্ষায় থাকে নিউমেরিক্যাল কম্প্রিহেনশন, ভার্বাল কম্প্রিহেনশন, লজিক্যাল রিজনিং, বেসিক চেকিং এবিলিটি। সময় বরাদ্দ ৫৫ মিনিট
৪) এর পর পূরণ করতে হয় ‘অক্যুপেশনাল পার্সোনালিটি কোয়েশ্চেনেয়ার’
৫) তথ্যপ্রযুক্তি, বিপণন, মানব সম্পদ, আর্থিক বিষয় এবং অন্যান্য দৈনন্দিন ব্যাঙ্কিং কাজকর্ম (অপারেশন্স)-সহ বিভিন্ন পদের জন্য বিজনেস স্কুলগুলির ক্যাম্পাস থেকে উদ্যমী, প্রতিভাবান স্নাতকোত্তর ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়াদের বেছে নেওয়া হয়
৬) বিভিন্ন স্তরে কর্মী নিয়োগের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী এক বা একাধিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে
ক) অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট, খ) গ্রুপ ডিসকাশন, গ) সাইকোমেট্রিক প্রোফাইলিং। প্রতি ক্ষেত্রেই চূড়ান্ত বাছাই হয় ইন্টারভিউর পর।
৭) ব্যাঙ্ক কোন পদে লোক চাইছে, আবেদন পদ্ধতি, কোন যোগ্যতায় কী সুযোগ, প্রশ্নের ধরন ইত্যাদি http://www.icicicareers.com ওয়েবসাইট থেকে জানা যাবে।
আবার অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক নিয়োগ করে তাঁদেরই,
১) যাঁরা প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে ভালবাসেন। এ ক্ষেত্রে সুযোগ রয়েছে জেনারেল ও ব্রাঞ্চ ব্যাঙ্কিং, বিশেষ আর্থিক পরিষেবা (ট্রেজারি, ক্রেডিট, মার্চেন্ট ব্যাঙ্কিং ইত্যাদি), রিটেল এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল মার্কেটিং, তথ্যপ্রযুক্তি, মানব সম্পদ, জনসংযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে
২) ব্যাঙ্ক নিজেরাই সরাসরি কর্মী নেয়
৩) আবেদন করা যায় ব্যাঙ্কের http://www.axisbank.com/careers/careers.asp ওয়েবসাইট থেকে
৪) বিভিন্ন সময়ে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বেরোয় বিভিন্ন দৈনিক সংবাদপত্রে। |
|
|
|
|
|