কংগ্রেসের হাতে নতুন অস্ত্র
প্রমোদকে কাঠগড়ায় তুলে টেলিকম-তদন্ত
প্রমোদ মহাজনের আমলে টুজি স্পেকট্রাম বণ্টন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগে আজ মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করল সিবিআই। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, আর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দুর্নীতি-বিরোধী রথযাত্রা শেষ করে দিল্লিতে জনসভা করার কথা লালকৃষ্ণ আডবাণীর। তিন দিন পরে শুরু হচ্ছে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনও। এই পরিস্থিতিতে সিবিআইয়ের নতুন তদন্ত যেমন অস্ত্র তুলে দিল কংগ্রেসের হাতে, তেমনই কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে বিজেপি। দু’দলের মধ্যে নতুন করে চাপানউতোরও শুরু হয়ে গিয়েছে। যা থেকে প্রবল আশঙ্কা, এর ধাক্কায় অচল হতে পারে আসন্ন অধিবেশন।
এনডিএ জমানার কোনও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত অবশ্য নতুন নয়। এর আগে ওই জমানার আর এক টেলিকম মন্ত্রী অরুণ শৌরিকে জেরা করেছে সিবিআই। তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণ না মিললেও সেই মামলা এখনও বন্ধ হয়ে যায়নি। তবে প্রমোদ মহাজনের মতো ওজনদার বিজেপি নেতাকে কাঠগড়ায় তুলে তদন্ত শুরু করার ঘটনা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। মামলা দায়েরই শুধু নয়, মহাজন জমানার টেলিকমসচিব এবং তৎকালীন বিএসএনএলের এক কর্তার বাড়িতেও আজ তল্লাশি চালাল সিবিআই। সেই সঙ্গে তল্লাশি চলল তিন বেসরকারি টেলিকম পরিষেবা সংস্থার দফতরেও।
টুজি মামলার শুনানির সময়ই সুপ্রিম কোর্ট ২০০১ সাল (প্রমোদ মহাজন তখন টেলিকম মন্ত্রী) থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত টেলিকম নীতি ও চুক্তির তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিয়েছিল। আর কংগ্রেস তো টুজি বিতর্কের শুরু থেকেই এনডিএ জমানার টেলিকম চুক্তি নিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়ে আসছে। এমনকী, স্পেকট্রাম তদন্তে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠনে সরকার রাজি হলেও সে ক্ষেত্রে শর্ত ছিল, এনডিএ জমানার টেলিকম নীতিও খতিয়ে দেখা হবে। আজ সিবিআই তদন্ত শুরু করল সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনেই।
তবে সেই তদন্ত যে সময়ে শুরু হল, তা রাজনৈতিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। একে তো দুর্নীতির বিরুদ্ধে আডবাণীর যাত্রা আগামিকাল দিল্লিতে শেষ হচ্ছে। তার পরে রামলীলা ময়দানে বিশাল সমাবেশেরও আয়োজন করেছে বিজেপি। তা ছাড়া, আডবাণীর যাত্রার সূত্র ধরে মঙ্গলবার থেকে পূর্ণ উদ্যমে সংসদে সরব হতে চলেছেন সুষমা স্বরাজ-অরুণ জেটলিরা। তার ঠিক আগে সিবিআই মামলা দায়ের করায় স্বাভাবিক ভাবেই ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের’ গন্ধ পাচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব। সর্বোচ্চ আদালতের প্রত্যক্ষ নজরদারিতে সিবিআইয়ের তদন্তের জেরে আন্দিমুথু রাজা থেকে শুরু করে কানিমোঝির মতো ডিএমকে নেতা-প্রাক্তন মন্ত্রীরা গ্রেফতার হওয়ায় উচ্ছ্বসিত ছিল যে বিজেপি, আজ সেই বিরোধী দলেরই অভিযোগ, সিবিআইয়ের অপব্যবহার হচ্ছে। দলের মুখপাত্র প্রকাশ জাভরেকর বলেন, “প্রয়াত প্রমোদ মহাজনের পরিবর্তে সিবিআই স্পেকট্রাম বণ্টন নিয়ে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের ভূমিকা নিয়ে তদন্ত করুক।” তাঁর কথায়, চিদম্বরমকে আড়াল করতেই এনডিএ জমানার টেলিকম নীতি নিয়ে তদন্ত শুরু করা হচ্ছে। অথচ এনডিএ জমানায় টেলিকম নীতিতে কোনও ভ্রান্তি ছিল না। প্রমোদ মহাজনও নিরপরাধ ছিলেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি পদক্ষেপ করেছিলেন। কংগ্রেস কিন্তু পাল্টা অভিযোগ করেছে, জেনেবুঝেই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বিজেপি। কংগ্রেস মুখপাত্র রশিদ আলভির বক্তব্য, “সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০০১ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত টেলিকম নীতি নিয়ে তদন্ত করছে সিবিআই। তাই অরুণ শৌরি, দয়ানিধি মারানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ফলে আইন আইনের পথেই চলছে। কিন্তু মুশকিল হল, বিজেপি-র দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত হলে ওরা বরাবর সিবিআইয়ের অপব্যবহারের অভিযোগ করে।”
তবে তলে তলে খুশি কংগ্রেস নেতৃত্ব। কেন না, কাল যাত্রা শেষে দিল্লিতে আডবাণীর জনসভার আগে বিজেপি কিছুটা হলেও চাপে পড়েছে বলেই তাঁরা মনে করছেন। ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস নেতারা জানাচ্ছেন, দুর্নীতি প্রশ্নে বিজেপি-র বিরুদ্ধে সংসদেও প্রতি-আক্রমণের অস্ত্র পেলেন তাঁরা। প্রয়োজনে তাঁরা যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী, উপ-প্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণীর নামও তুলবেন, তার ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসের বক্তব্য, বিজেপি মুখপাত্রই এ দিন দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ করেছিলেন মহাজন। তা হলে তো বাজপেয়ী-আডবাণীরা সব জানতেন। বিজেপি যদি এ রাজার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে মনমোহনকে টানতে পারে, তা হলে বাজপেয়ী-আডবাণীদের নামই বা এ বার উঠবে না কেন?
এনডিএ আমলে ২০০১ সাল থেকে ২০০৩ পর্যন্ত প্রমোদ মহাজন টেলিকম মন্ত্রী ছিলেন। যদিও সিবিআই আজ যে মামলা দায়ের করেছে, তাতে তাঁর নাম নেই। তবে তৎকালীন টেলিকম সচিব শ্যামল ঘোষ এবং বিএসএনএলের ডিরেক্টর জে আর গুপ্তর ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিবিআইয়ের তরফে বলা হয়েছে, “তৎকালীন টেলিকম মন্ত্রী প্রয়াত বলে তাঁর নাম মামলায় রাখা হয়নি। কিন্তু অভিযোগ হল, তৎকালীন টেলিকম সচিব ও টেলিকম দফতরের ডিডিজি (ভিএএস) দিল্লি ও মুম্বইয়ের তিনটি বেসরকারি টেলিকম সংস্থার সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। তার পর তৎকালীন টেলিকম মন্ত্রী কারিগরি কমিটির রিপোর্টকে অগ্রাহ্য করে এই তিন সংস্থাকে তড়িঘড়ি করে ৬.২ মেগাহার্ৎজের অতিরিক্ত স্পেকট্রাম বণ্টন করেন। আর এই প্রক্রিয়ায় বেসরকারি সংস্থাগুলিকে আনুমানিক ৫০৮ কোটি টাকার সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়।” উল্লেখ্য, সিবিআই হানার পর পৃথক ভাবে বিবৃতি দিয়েছে ভোডাফোন এবং এয়ারটেল। সিবিআই অফিসারেরা যে তাদের মুম্বই এবং দিল্লির দফতরে গিয়েছিলেন, সে কথা জানিয়ে ভোডাফোনের বক্তব্য, ওঁরা ২০০১-০২ সালের স্পেকট্রাম বণ্টন নিয়ে যে তথ্য চেয়েছিলেন, সবই দেওয়া হয়েছে। তারা যে সরকারি বিধি মেনে চলেছে, সেটা তাদের নথিতেই স্পষ্ট বলেও দাবি করা হয়েছে। একই কথা জানিয়ে এয়ারটেল ‘স্পষ্ট করে দিতে চেয়েছে’, বিভিন্ন সময়ে তাদের যে স্পেকট্রাম দেওয়া হয়েছে, তার সবই কঠোর ভাবে সরকারি বিধি মেনে।
দুর্নীতির অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের এই উত্তাপ আসন্ন অধিবেশনেও পড়তে বাধ্য। সংসদের ভোট-ঘুষ কাণ্ডে যে তাঁদের সতীর্থদের ‘অনৈতিক’ ভাবে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে, এই দাবি আগেই করেছিল বিজেপি। আজ সুধীন্দ্র কুলকার্নি-সহ এই মামলার পাঁচ অভিযুক্তকে ঘটা করে সংবর্ধনা দেন গডকড়ী-স্বরাজরা। আডবাণীর দুর্নীতি বিরোধী রথযাত্রা তো আছেই। তা ছাড়া, বিজেপি কালই ইঙ্গিত দিয়েছে, কালো টাকা নিয়েও সংসদে সরব হবে তারা। এ ব্যাপারে তারা বাম নেতৃত্বকেও পাশে পেতে চাইছে। কালই অর্থ মন্ত্রক সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিজেপি দাবি করে, বিদেশি ব্যাঙ্কে যাঁরা কালো টাকা গচ্ছিত রেখেছেন, তাঁদের নামের তালিকা সংসদে প্রকাশ করতে হবে সরকারকে। আর আজ জাভড়েকর বলেন, “ওই তালিকায় দু’জন কংগ্রেস নেতার নাম রয়েছে বলে সরকার তা প্রকাশ করতে চাইছে না।” বলা বাহুল্য, কাল রামলীলা ময়দানের সভা থেকে আডবাণীও চড়া সুরে আক্রমণ শানাতে চাইবেন।
এ বার তাই আর এক দফা সংসদ অচল হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হল।

যাদের বিরুদ্ধে মামলা
শ্যামল ঘোষ
(তৎকালীন টেলিকম সচিব)
জে আর গুপ্ত
(তৎকালীন বিএসএনএল কর্তা)
ভারতী টেলিকম, গুড়গাঁও
হাচিনসন, মুম্বই
স্টারলিং সেলুলার, দিল্লি
(প্রথমটি এয়ারটেল, শেষ দু’টি ভোডাফোনের সংস্থা)
• দেশের পাঁচ জায়গায় একযোগে হানা
• প্রয়াত বলে এফআইআর নয় প্রমোদ মহাজনের বিরুদ্ধে


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.