ভিসায় দেরি, উদ্বেগ ঢাকার
বাংলাদেশের সঙ্গে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি শীঘ্রই
লফা-নেতা অনুপ চেটিয়াকে হাতে পেতে চায় দিল্লি। আবার ঢাকার দাবি, ভারতে গা ঢাকা দিয়ে থাকা শেখ মুজিবর রহমান হত্যা মামলায় দুই ফাঁসির আসামিকে গ্রেফতার করে তাদের হাতে তুলে দিক দিল্লি। সেই প্রেক্ষাপটেই আজ থেকে নয়াদিল্লিতে শুরু হয়েছে দু’দেশের স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের দু’দিনের বৈঠক। প্রথম দিনের বৈঠকের শেষে দু’দেশের সরকারি সূত্রেই জানানো হয়েছে, বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি নিয়ে অনেকটাই অগ্রগতি হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, এমন নয় এই বৈঠকেই দু’দেশের মধ্যে চুক্তি হয়ে যাবে। কিন্তু দুই দেশই মনে করছে, শীঘ্রই এই চুক্তি সই করা যাবে। ভারতের তরফে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির খসড়া ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ অবশ্য এখনও সবুজ সঙ্কেত দেয়নি। নর্থ ব্লকের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “আশা করছি, জানুয়ারি মাসের মধ্যে চুক্তির খসড়া নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছনো সম্ভব হবে। বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা আজ জানিয়েছেন, তাঁরা চুক্তি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথি খতিয়ে দেখছেন।”
আজকের বৈঠকে বাংলাদেশের তরফে ভিসা নিয়েও তাদের উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের বক্তব্য, এমন নয় যে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারত ভিসা দিচ্ছে না। কিন্তু ভিসা নিয়ে নানান জটিলতা রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিসা পেতে ১৫ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে অনেকেই জরুরি চিকিৎসার জন্য এ দেশে আসেন। সে ক্ষেত্রে ভিসা পেতে দেরি হলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। মানবিক দিকটির কথা মাথায় রেখে ভিসা প্রক্রিয়ার সরলীকরণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ। স্বরাষ্ট্রসচিব রাজকুমার সিংহ জানিয়েছেন, বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হবে।
ভারতের মতো বাংলাদেশও বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। কারণ, বাংলাদেশ মনে করছে, শেখ মুজিবর রহমান হত্যায় সাজাপ্রাপ্ত আবদুল মজিদ ও মোসলেউদ্দিন বহু দিন ধরে ভারতেই কোথায় গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিতার হত্যাকারী এই দুই প্রাক্তন সেনা-অফিসারকেই ফাঁসির সাজা দিয়েছে ঢাকার আদালত। রিসেলদার মোসলেউদ্দিনেই গুলিতেই মারা গিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি মুজিবর রহমান। গত জুলাই মাসে ঢাকা সফরে গিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কথা হয়। দু’জনেই মুজিবের হত্যাকারীদের ভারতে লুকিয়ে থাকার প্রসঙ্গ তোলেন। চিদম্বরম জানিয়েছিলেন, ওই দুই আততায়ীকে খুঁজে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার সব রকম চেষ্টা করা হবে।
নয়াদিল্লি চাইছে, ওই দুই সাজাপ্রাপ্ত কোথায় কী ভাবে রয়েছে, সে সম্পর্কে ভারতকে আরও গোয়েন্দা-তথ্য দিক বাংলাদেশ। বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি সই হলে ভারতের পক্ষে তাদের বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া সহজ হবে। ২০০৪ সালে বাংলাদেশে আওয়ামি লিগের জনসভায় গ্রেনেড হামলায় জড়িতদের কয়েক জনও ভারতে লুকিয়ে রয়েছে বলে মনে করছে ঢাকা। আলোচনায় এসেছে অনুপ চেটিয়ার হস্তান্তরের প্রসঙ্গও। পরেশ বরুয়া আলোচনা বর্জন করায় চেটিয়াকে বৈঠকে বসাতে পারলে আলফা-কেন্দ্র শান্তিপ্রক্রিয়া আরও ‘কার্যকর’ হতে পারে বলে মনে করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সাজার মেয়াদ শেষ করে চেটিয়া বাংলাদেশের রাজশাহি জেলেই নিরাপদ হেফাজতে রয়েছে। এখন সে বাংলাদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ায় ঢাকার পক্ষে তাকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের তরফে স্বরাষ্ট্রসচিব মনজুর হুসেন আজ ভারতকে জানিয়েছেন, তাঁরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ সংক্রান্ত আইনি জটিলতা দূর করার চেষ্টা করছেন।
গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ঢাকা সফরে গিয়েছিলেন। সেই সময় যে সব চুক্তি হয়েছিল, সেগুলির রূপায়ণ কতখানি সম্ভব হয়েছে, তারও পর্যালোচনা চলছে স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে। কাল কথা হবে ছিটমহল হস্তান্তরের খুঁটিনাটি বিষয়গুলি নিয়ে। এর আগে নয়াদিল্লির সঙ্গে সব স্তরের বৈঠকেই বিএসএফের বিরুদ্ধে সামান্য কারণে গুলি চালানোর অভিযোগ তুলেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু দুই দেশই এখন মনে করছে, সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চুক্তি সইয়ের পরে সীমান্তে গুলি চালানোর ঘটনা অনেকটাই কমেছে। কয়েক জায়গায় বিএসএফের হাতে প্লাস্টিক বুলেট তুলে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ চাইছে, পুরোপুরি গুলি ছোড়া বন্ধ করুক বিএসএফ। আজও পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, বিএসএফ যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেই সীমান্ত রক্ষার কাজ করছে। অনেক সময়ে অনুপ্রবেশকারী দুষ্কৃতীরা বিএসএফ জওয়ানদের আক্রমণ করে। একমাত্র প্রাণ সংশয় হলে তবে শেষ উপায় হিসেবেই গুলি ছোড়ে বিএসএফ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.