ট্র্যাক ভুলে সুনন্দার প্রস্তুতি পড়ার টেবিলে |
সকালে টিউশন পড়া। দুপুরে স্নান। তারপর খানিক বিশ্রাম। সন্ধ্যায় আবার পড়তে বসা। গত কয়েক দিন ধরে এই ‘অচেনা’ রুটিনে অভ্যস্ত হচ্ছেন কে জানেন? সোনাজয়ী সুনন্দা।
নদিয়া চাকদহের সুনন্দা সরকার এ বার বালিয়া হাইস্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক দেবে। ওই বিদ্যালয় থেকেই মাধ্যমিক পরীক্ষায় দু’টি লেটার পেয়ে পাশ করেছিল সুনন্দা। তাঁর কথায়, “খেলার পাশাপাশি লেখাপড়াও খুব জরুরি। তাই ভাবছি, ছুটি নিয়ে ভাল করে পড়ে পরীক্ষায় বসব। আগামী ১৮ নভেম্বর থেকে টেস্ট। সারা বছর তো পড়াই হয়নি । এই ক’টা দিন কাজে লাগাই।”
ছুটতে ছুটতে দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। কখনও বিদেশে। বছরের অধিকাংশ সময়েই কলকাতায় সাই হস্টেলে। পড়ল কখন মেয়েটা?
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রবীণ শিক্ষক বাবলুচন্দ্র দাশ বলেন, “খেলার পাশাপাশি সুনন্দা কিন্তু লেখাপড়াতেও বেশ ভাল। কখনও ওকে কনসিডার করতে হয়নি।” |
স্কুলে ৩১২৭ জন পড়ুয়া। প্রায় অর্ধেকই মেয়ে। শিক্ষিকা আর শ্রেণিকক্ষেরও অভাবে রয়েছে। ক্রীড়া-শিক্ষক সুরঞ্জন কর মণ্ডল বলেন, “ভর্তি হওয়ার সময় ওর মায়ের মুখে শুনেছি ভাল খেলাধুলা করে। ওর প্রতি নজর তখন থেকেই। এখন তো স্কুলের মুখ!”
শিক্ষিকা সোনা বিশ্বাস বলেন, “ছোট থেকেই ও চুপচাপ। অন্যান্যরা চিৎকার করলেও ও চুপ। ভিতরে একটা জেদ কাজ করে বোধহয়। সে জন্যই খেলাধুলোর পাশাপাশি পড়শোনাতেও ও বেশ ভাল।” শিক্ষকেরা পোশাক, জুতো, টাকা দিয়ে সাহায্য করতে চাইলেও প্রথমে নিতে চাইত না লাজুক মেয়েটি। তবে স্কুলের শিক্ষকেরা জানতে পারলেই সাধ্য মতো সাহায্য করেছেন সুনন্দাকে। বিদ্যালয়েক পরিচালন কমিটির সম্পাদক হরপ্রসাদ হালদার জানান, সুনন্দার জন্য একজন ‘স্পনসর’ জোগাড় করার চেষ্টা করছেন তাঁরা।
আর ঘাড় নেনে সুনন্দা বলছে, “শিক্ষকেরা পাশে না দাঁড়ালে এত দূর উঠতেও পারতাম না।”
শুধু শিক্ষকেরা নন, সহপাঠী পাপিয়া সরকার ও সুচেতা সরকার’রা না থকলে ‘নোটস’ জুটত কোথা থেকে? সুনন্দা জানান, “ওরা না থাকলে পড়া চালানোর কথা ভাবতেই পারতাম না। আমার সহপাঠীরা আমার জন্য আলাদা করে নোটস তৈরি করে রাখে। বইয়ের কোন জায়গাটা পড়তে হবে তা দাগ দিয়ে রাখে, ভাবতে পারেন!” তবে সুচেতারা বলেন, “ভাবতে না পারার কী আছে, ও তো আমাদের বন্ধু! সুনন্দা দেশের মান রক্ষা করুক। আমরা ওর নোটস তৈরি করে দেব!” |