দূষণের দায়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি ‘লাল’ তালিকাভুক্ত কারখানা ফের চালু হয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কোনও রকম অনুমতি ছাড়াই। আগে পর্ষদের নির্দেশেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ওই কারখানা। লেকটাউনের এ ব্লকে, বসতি এলাকায় ওই কারখানা থেকে সারা দিনই রাসায়নিকের দুর্গন্ধযুক্ত ধোঁয়া বেরোয়। ফলে, এলাকার শিশু ও বয়স্কেরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ। পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদারের কাছে সমস্যার কথা জানানো হলে তিনি পর্ষদকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও প্রতিনিধি পাঠিয়ে দু’বার কারখানা পরিদর্শন ছাড়া পর্ষদ কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ পাওয়ার পরে পরিবেশ দফতর ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রতিনিধিরা কারখানা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সেখানকার বসত বাড়িগুলিতে গিয়ে তাঁরাও রাসায়নিকের তীব্র গন্ধ পান। যন্ত্রের বিকট শব্দ শোনেন। কারখানা থেকে বেরোনো তরল বর্জ্যেও বিষাক্ত রাসায়নিক মিলেছে। কিন্তু ওই অবস্থা দেখেও পর্ষদ উল্লেখযোগ্য কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি বলে অভিযোগ। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামে ওই কারখানাটি ‘লাল’ তালিকাভুক্ত। অর্থাৎ, শব্দ, দুর্গন্ধ, ধোঁয়া ও বর্জ্যের নিরিখে সব চেয়ে বেশি দূষণ সৃষ্টিকারী। রাজ্যের শিল্প স্থাপন নীতি অনুযায়ী, কলকাতা মেট্রোপলিটান এলাকার কোনও পুরসভার মধ্যে ওই রকম কারখানা স্থাপন করা নিষিদ্ধ। কারখানাটির বর্জ্য ও দূষণের মাত্রা বিচার করেই এক বছরের মধ্যে দু’বার সেটি বন্ধ করতে নির্দেশ দেয় পর্ষদ। পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয়কান্ত দত্ত বলেন, “কারখানাটি আগেও লাল তালিকাভুক্ত ছিল, এখনও আছে।” তবুও কারখানাটি লেকটাউনের মতো জায়গায় চলছে কী ভাবে? এর কোনও জবাব বিনয়বাবু দেননি।
দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য উৎপাদন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে কারখানাটিকে অনেক সুযোগ দিয়েছিল পর্ষদ। গত বছর ডিসেম্বরে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার শর্তে কারখানাটিকে ২১ দিনের জন্য সীমিত উৎপাদনের (১৫%) অনুমতি দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট সময়ের পরে কারখানা উৎপাদন বন্ধ করে। কিন্তু স্থানান্তর না-করে গত সেপ্টেম্বর থেকে কারখানাটি আবার পুরোদস্তুর উৎপাদন শুরু করে দিয়েছে। তার ফল ভুগছেন এলাকাবাসীরা। স্থানীয় পরিবেশ সংগঠন ‘পিপলস্ গ্রিন সোসাইটি’র সম্পাদক, পরিবেশকর্মী শ্যামল ঘোষ বলেন, “একটা লাল তালিকাভুক্ত কারখানাকে লেকটাউনের মতো জায়গায় পর্ষদ কী ভাবে উৎপাদন করতে দিচ্ছে? আগে যে ভাবে দূষণ ছড়িয়ে কারখানা চলত, এখনও সে ভাবেই চলছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণের ন্যূনতম দায়িত্বও পর্ষদ নিচ্ছে না।”
ওই কারখানার জেনারেল ম্যানেজার সুরজিৎ পাল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “দূষণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখাটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। পর্ষদ বিভিন্ন সময়ে যা যা সুপারিশ করেছে, সব মেনেই উৎপাদন শুরু করেছি। দূষণের মাত্রা যে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে, তা পর্ষদের প্রতিনিধিরা দেখে গিয়েছেন।”
স্থানীয় বাসিন্দা শেখর রায়চৌধুরী বলেন, “আমরা মন্ত্রীকে সব জানানোর পরে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের লোকজন এসে দেখে গিয়েছে। তবু পর্ষদ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। বরং এর আগে পর্ষদের কিছু কড়া পদক্ষেপে একটু সুরাহা মিলেছিল। এখন হয় কারখানা অন্যত্র সরবে, নয়তো আমাদেরই লেকটাউন ছেড়ে চলে যেতে হবে।” এ বিষয়ে পর্ষদের চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের অফিসারেরা কারখানা দেখে এসেছেন। রিপোর্ট পেলে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় ভাবব।” কাজেই এলাকাবাসীরা এখন পর্ষদেরই আগের নির্দেশগুলিকে হাতিয়ার করে কারখানার দূষণ বন্ধ করার আর্জি নিয়ে আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। |