|
|
|
|
|
শীতকাতুরে বেলায় চুলের খেলায়
শীতের বেলা। ছোট্টরা খেলবে, ধুলোও উড়বে, তবু
চুল থাকবে নিরাপদে। খুশকি, রুক্ষতা, সব আপদ বিদায়।
জানালেন রূপবিশেষজ্ঞ জিসা গুপ্তা |
|
|
শীতকাল মানেই ওই এসে গেল, এসে গেল একটা রব ওঠে। বিশেষত সুন্দরীদের অবস্থা হয়ে ওঠে খুব করুণ। রূপচর্চার সব ফর্মুলা বৃথা যায়। অনেকে মনে করেন, বাইরে না গিয়ে ঘরে বসে টিভি দেখাই ভাল। এটি সম্ভব বলে খুবই ভাল হত। কিন্তু সব সময় তা হয় না। তাই উপায় একটা ভাবতেই হয়। দুর্গাপুজোর সময় আমরা সবাই একটা সাজার মুডে থাকি। যা হোক করে নিজেকে এক নম্বর করে তুলতেই হবে। চুলের অবস্থা কী হল সেটা নিয়ে আমরা একদম ভাবি না। স্ট্রেটনিং, হাইলাইটিং, পার্মিং-এর দিকেই মনটা থাকে বেশি। এ ছাড়াও বিভিন্ন হেয়ার স্প্রে আমরা ব্যবহার করি। ফলে চুলের কিছুটা ক্ষতি তখনই হতে আরম্ভ করে। এর পর শীতের রুক্ষতা চুলের সম্পূর্ণ সর্বনাশ ডেকে আনে। অনেকেই জানেন না যে, শীতকালে ত্বক রুক্ষ হওয়ার আগেই চুল রুক্ষ হয়ে যায়। চুলের তলায় যে তৈল গ্রন্থিগুলি থাকে, সেগুলি কিছু দিন পর্যন্ত চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখে। কিন্তু অতিরিক্ত রুক্ষতা আটকাতে পারে না। ফলে স্ক্যাল্প শুকিয়ে যায়, চুলকুনি, খুশকি ইত্যাদির সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় স্ক্যাল্প অতিরিক্ত শুকিয়ে গিয়ে পাতলা খোসা ওঠে। আমরা এটিকেই খুশকি বলে ভুল করি। সুতরাং এই রুক্ষতার সঙ্গেই আমাদের লড়াই। |
শিশু
|
মায়েদের উচিত বাচ্চাদের মাথায় খাঁটি কোনও ভেজিটেবল অয়েল বা ফ্রুট অয়েল সপ্তাহে তিন দিন মাখানো। এই তেল যথাসম্ভব খাঁটি হওয়া উচিত। শীতকালে মাথায় সব সময় জল দেওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে একটি নরম কাপড় ভিজিয়ে মুছে দিলে ভাল। তবে তেলটি মাথায় দশ-পনেরো মিনিটের বেশি যেন না থাকে। এর ফলে তেল মাথায় বসবে না, অথচ তৈলাক্ত ভাব থাকবে। ফলে অস্বস্তি অনেকটা কমে যায়। কারণ বড়দের মতোই শিশুদেরও শীতকালে চুলকুনির মতো সমস্যা হয়। |
তিন থেকে সাত |
এই সময় বাচ্চারা খুবই দুরন্ত হয়ে ওঠে। শীতের ছুটিতে সারা ক্ষণ খেলা, ধুলো মাখা তো চলেই। এই বয়সটি এমনই এক বয়স, যেখানে একটি বাচ্চা মায়ের অধীনে থাকে না, আবার নিজেদের দায়িত্ব নিজেরা নিতে পারে না। এই বয়সে বাচ্চাদের মাথায় ছোট ক্ষত বা ঘা খুব দেখা যায়, নখ ঠিক করে কাটে না, মাথা খুব চুলকোয়, ফলে এইগুলি হয়। এদের ক্ষেত্রে জবরদস্তি তেল মাখানো এবং হালকা কোনও শ্যাম্পুর ব্যবহার অবশ্যই কর্তব্য। |
৮ থেকে ১৫ |
এই সময়টিতে মায়ের হাত থেকে সম্পূর্ণ বেরিয়ে যাচ্ছে। জাঙ্ক ফুড খাচ্ছে, বিভিন্ন হরমোনাল ক্ষরণ হচ্ছে। ফলে ঘামের পরিমাণ ইত্যাদি খুবই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার সঙ্গে এই সময় স্বাস্থ্যসচেতনতারও অভাব থাকে। শীতকাল এই হিসাবে খেলাধূলাও অনেক বৃদ্ধি পায়। বাইরেই বেশি সময় কাটায়, সেই কারণে ময়লা জমে খুশকির প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। মাথা থেকে বিশ্রী গন্ধ বের হয়, এদের ক্ষেত্রে সপ্তাহে তিন দিন তেল জরুরি, সম্ভব হলে সপ্তাহে প্রতি দিনই হালকা শ্যাম্পু করা উচিত।
এর পর থেকে চুলের যত্ন একই রকম চলবে সারা জীবনের জন্য। ফ্যাশনের জন্য কেমিক্যাল প্রয়োগ অত্যন্ত বেড়ে যায়। আমাদের স্ক্যাল্প ও চুলের দৈর্ঘ্য দুটিকে আলাদা ভাবে ট্রিটমেন্ট করতে হবে। কারণ, আগে চুলের বাকি অংশটি শুষ্ক হয়, পরে স্ক্যাল্পটি রুক্ষ হয়। যদি শীতকালে চুল বেশি শুকনো হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে নারকেল তেলের মধ্যে দু মুঠো ধনেপাতা রস করে মিশিয়ে লাগালে চুলের শুষ্কতা কমে যাবে, চুল প্রয়োজনীয় মিনারেল, ভিটামিনগুলি পেয়ে যাবে। কিন্তু চুল যদি উঠতে শুরু করে, তখন ধনেপাতার সঙ্গে পালংপাতার রস মিশিয়ে নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে পরিমাণটি হবে এক চামচ ধনেপাতার রস এবং এক চামচ পালং পাতার রস। সপ্তাহে তিন দিন লাগাবে, চুল ওঠা এক দম কমে যাবে। যাদের খুশকির সমস্যা খুব সাঙ্ঘাতিক তারা একটি মাঝারি আকারের টমেটো রস করে তেলের সঙ্গে মিশিয়ে সপ্তাহে তিন দিন মাখুন। (যাদের শুধু শীতকালে খুশকি হয়, তাদের জন্য।)
যাদের বারো মাসের খুশকি, তারা তেলের মধ্যে পাতিলেবুর রস করে মিশিয়ে রাখুন। যাদের চুল লম্বা, শীতকালে সেটাকে সামলানো খুব কঠিন হয়ে যায়, অথচ বিয়েবাড়িতে চুল খোলা রাখতে ইচ্ছাও করে, তাঁরা সাদা মাখনের সঙ্গে (তিন-চার চামচ) দু’টো ডিম মিশিয়ে লাগাবেন। ২০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে নেবেন। এতে চুল ভাল থাকবে ও কন্ডিশনিংয়ের কাজও হবে। |
তৈলাক্ত চুল |
তেল মাখা বন্ধ করলে চুল স্বাভাবিক থাকবে। এ ক্ষেত্রে শীতকালে ১/৪ কাপ দুধে এক চামচ মধু আর অল্প জল মিশিয়ে মাথায় লাগান। ত্রিশ মিনিট রাখুন এবং শ্যাম্পু করে নিন।
শীতকালে অনেক সময় চুলে জল দেওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে স্ক্যাল্প স্কিন টোনার বা গোলাপ জল দিয়ে মুছে নেবেন। এতে স্ক্যাল্প পরিষ্কার থাকে, কোনও দুর্গন্ধও থাকে না।
|
শীতকালে চুলের কী কাট হবে |
যাঁদের ঠান্ডা লাগার ধাত আছে, তাঁরা ছোট করে চুল কাটবেন। কিন্তু সেটি ক্রু কাট হবে না। কারণ বেশি ছোট কাটলে আমাদের ঠান্ডা লাগতে পারে। চুল আমাদের জন্য কুশনের কাজ করে, অর্থাৎ, কিছুটা ঠান্ডা আটকায়। শীতকালে একটু কান ঢাকা চুলের স্টাইল ভাল, যেমন লেয়ারস্। লম্বা চুল শীতকালে বেঁধে রাখাই ভাল। পাতলা স্কার্ফ ব্যবহার করলেও চুল ভাল থাকবে। |
|
সাক্ষাৎকার: কস্তুরী মুখোপাধ্যায় ভারভাদা |
|
|
|
|
|