|
|
|
|
জম্মোদিনের ঝিকিমিকি |
ছিল ফর্মাল মর্টিমার, হয়ে গেল ক্যাজুয়াল মিকি। সেই গোল-কান, লাল-প্যান্ট ইঁদুর
কার্টুন পেরিয়ে আজ ইতিহাস। ৮৩ বছরেও কী দাপট! গৌতম চক্রবর্তী |
হ্যাপি বার্থডে, নেলসন আর এডি!
গত ২৩ অক্টোবর ছিল এই দুই যমজ ভাইয়ের জন্মদিন। সে দিনই এক বছরে পা দিল এই দুই খুদে। জন্মদিনের সকালে দরজা খুলতেই তাদের বাড়িতে ঢুকে পড়ল মস্ত এক ‘মিকি মাউস’ আর ‘ডোনাল্ড ডাক’। মা-বাবার বন্ধুরা মাঝে মাঝেই তাদের সঙ্গে এ রকম মজার খেলায় মাতেন।
জন্মদিনের হুল্লোড়ে দুই খুদে সে দিন আহ্লাদে আটখানা। ‘বার্থডে কেক’টাও মিকির মতো যে! তার ওপর মোমবাতি সাজিয়ে, ‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।’ প্রসঙ্গত, এডিদের মা দুনিয়াখ্যাত সেলেব্রিটি পপ-গায়িকা সিলিন ডিয়োন।
কিন্তু মিকি? লাল শর্টস, হলুদ জুতো পায়ে সে তো আরও বড় সেলেব্রিটি। নেলসনদের বাড়িতে ‘কেক’ হিসেবে সে গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু গতকাল, ১৮ নভেম্বর তার নিজেরই জন্মদিন ছিল। ৮৩ বছরে পা দিল সে। সেই জন্মদিনে নেওয়া সাক্ষাৎকার।
|
|
হ্যাপি বার্থডে, মিকি। কেমন লাগছে ৮৩ বছরে?
* খুব ভাল। এটা আবার বয়স নাকি! তোমরা মানুষরা সব সময় ৮৩ বছর মানেই গাঁটে ব্যথা, থুত্থুড়ে বুড়ো ভাব কেন বলো তো? আমাদের, ইঁদুরদের ও সব হয় না।
জেরিবাবু বলছিলেন, কার্টুন চ্যানেলে ইঁদুরদের মধ্যে ওঁর টি আর পি নাকি এখন সবচেয়ে বেশি।
* কোন হাবু?
হাবু নয়। বাবু। ‘টম অ্যান্ড জেরি’র জেরিবাবু।
* ছেড়ে দাও। আজকাল, সব ইঁদুরই নিজেকে সেলেব্রিটি ভাবে। জেরির আর কাজ কী? সারা ক্ষণ টম-এর থেকে তাড়া খায়, আর মাঝে মাঝে বেড়ালটাকে নাস্তানাবুদ করে। টম নামের ওই বেড়ালটা ছাড়া জেরির অস্তিত্ব কোথায়? কিন্তু আমাকে তো সব সময় বেড়ালের সঙ্গে জুটি বেঁধে ঘুরলে চলে না। সেই যে ১৯৫৫ সালে আমেরিকায় প্রথম ডিজনিল্যান্ড খুলল, আমাকে তার ম্যাসকট করা হল, ব্যস! হ্যারি ট্রুম্যান থেকে বারাক ওবামা অবধি প্রায় সব প্রেসিডেন্ট এসে হ্যান্ডশেক করে গিয়েছেন। কথাটা লেখার দরকার নেই, ‘অফ দ্য রেকর্ড’ বললাম আর কী!
এঁদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল লেগেছে কাকে?
* এ সব প্রশ্ন ‘পলিটিকালি ইনকারেক্ট’, জবাব দেব না।
কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছাড়াও দেশবিদেশের অজস্র শিশু আপনার ভক্ত...
* বাচ্চারাই সবচেয়ে ভাল। বড়রা কম প্যাঁচালো? আমাকে নিয়ে কম ঠাট্টাতামাশা করেনি। বিল গেট্স তখন সবে ‘মাইক্রোসফ্ট’ খুলেছে, তেমন কিছু নামডাক ছড়ায়নি। অন্য সংস্থাগুলি ওদের ঠাট্টা করে ডাকত, মিকিসফ্ট! সেই ‘মিকি’ই কালে কালে কী হল, দেখলে তো!
মানে, ঠাট্টাতামাশা করতে গেলেও সেই মিকি মাউসেরই শরণাপন্ন হতে হয়!
* সে আর বলতে? ছোটবেলায় আমাকে নিয়ে আমোদ-আহ্লাদ করে, তার পর গোঁফ গজালেই উল্টোপাল্টা কথা। আমাকে এলেবেলে ভাবে। আমেরিকান ছেলেমেয়েগুলির কথাই ধরুন না। কলেজে যে বিষয়ে কম খেটে ভাল গ্রেড পাওয়া যায়, তাকে আড়ালে আবডালে ওরা বলে ‘মিকি মাউস কোর্স’। মানে, এলেবেলে পড়াশোনা আর কী! মনে আছে, আশির দশকেও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বিশেষ ক্ষমতা ছিল না। ব্রিটেনের তখনকার প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার তাই ঠাট্টা করে ওকে বলেছিলেন ‘মিকি মাউস পার্লামেন্ট’।
এই সব অভিমানের কথা আগে জানাননি তো!
* জানিয়ে কী হবে! এসেই ‘টম অ্যান্ড জেরি’ নিয়ে প্রশ্ন করলে, এর পর ওই সব অর্বাচীন ‘রজার র্যাবিট’, ‘কুংফু পান্ডা’-টান্ডাদের কথাও তুলবে হয়তো। তুমি তো আর জান না, ‘হলিউড ওয়াক অব ফেম’-এ আমিই প্রথম কার্টুন ক্যারেক্টার!
হ্যাঁ, যে ভাবে ল্যাজ নাড়াতেন! ‘স্টিমবোট উইলি’ সিনেমায় ক্যাপ্টেন একটা ইঁদুরকে, মানে আপনাকে জাহাজের হুইল ঘোরাতে দেখে বিরক্ত হয়ে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে। তার পর হরেক মজা। ফোনোগ্রাফের রেকর্ড ঘুরছে না, আপনি ল্যাজ নাড়িয়ে ঘুরিয়ে দিলেন।
* মজার না? ওটাই আমার আত্মপ্রকাশ। ১৯২৮ সালের ১৮ নভেম্বর বেরিয়েছিল ওয়াল্ট ডিজনির কার্টুন ছবি ‘স্টিমবোট উইলি’...
তার পরই আপনি স্টার। আর পিছন ফিরে তাকাতে হল না।
* শুধু আমি? ওয়াল্ট ডিজনির কথা ভাবো।
মানে, ডিজনিল্যান্ডের ওয়াল্ট ডিজনি! আপনার স্রষ্টা?
* হ্যাঁ, ওয়াল্ট ডিজনি যখন স্টোরিবোর্ডে আমাকে আঁকছিলেন, ওঁর অবস্থা বেশ খারাপ। ইউনিভার্সাল স্টুডিয়োর সঙ্গে চুক্তি বাতিল, হাতে টাকাপয়সা নেই। প্রায় নিঃসম্বল অবস্থায় গোড়া থেকে শুরু করতে হচ্ছে। কত কুকুর, বেড়ালের স্কেচ, কিছুই পছন্দ হয় না। তার পর ওঁর সহকারী উব আইওয়ের্ক এক দিন একটা ইঁদুরের স্কেচ করলেন। দেখেই উনি লাফিয়ে উঠলেন।
শুনেছি, তখন আপনার একটা অন্য নাম ছিল।
* হ্যাঁ, মর্টিমার মাউস। ডিজনির স্ত্রী লিলিয়ান নামটা বদলে দিয়েছিলেন। আমার নামটা ওঁরই দেওয়া।
অভিনেতা মিকি রুনি একটা কথা বলতেন। উনি তখন খ্যাতির তুঙ্গে। ইউনিভার্সাল স্টুডিয়োতে ওয়াল্ট ডিজনির সঙ্গে এক দিন দেখা। ওঁর জনপ্রিয়তা থেকেই নাকি মিকি মাউস নাম!
* (মুচকি হেসে) যা ভাবো। তুমি যা লিখবে, সেটাই ইতিহাস।
উব হঠাৎ ইঁদুরের ছবি আঁকলেন কেন?
* ওয়াল্ট ডিজনি বেশ কিছু সাদা ইঁদুর পুষেছিলেন। তা, অফিসে ডিজনির ছবির পাশে খেলাচ্ছলেই তাই কয়েকটা ইঁদুরের ছবি আঁকা হচ্ছিল। সেখান থেকে উব আইওয়ের্ক এঁকে ফেললেন। গোল কান, নাসপাতির মতো মুখ। যে ভাবে আমাকে চেনো আর কী!
নিজের জনপ্রিয়তার কারণটা কখনও ভেবেছেন? মিকি মাউস কেন এত মানুষের প্রিয়?
* আমি তো অনেকটা মানুষের মতো। আমার বান্ধবী আছে, মিনি। পোষা কুকুরের নাম প্লুটো। ‘ক্লারাবেল কাউ’ নামে একটা গরু আমার বন্ধু। ‘হোরাস হর্সকোলার’ও ঘোড়াদের মধ্যে আমার ভাল বন্ধু। আমি দুষ্টু, কিন্তু কুটকুট করে জামাকাপড় কাটি না। গুন্ডারা মিনিকে মাঝে মাঝে ধরে নিয়ে যায়, কিন্তু শেষ অবধি ওরাও কিছু করতে পারে না। আমি ওদের নাকে ল্যাজ ঢুকিয়ে, ওরা যখন ফ্যাঁচ্চো করে, মিনিকে নিয়ে পালিয়ে আসি। মানে, সুপারম্যান-স্পাইইডারম্যান ধাঁচের নায়কোচিত কাজকারবার আমার ধাতে নেই। ছোটরা যে ভাবে নানা জিনিস কল্পনা করে, আমি সেটাকেই একটু উস্কে দিই।
ডোনাল্ড ডাকের সঙ্গেও তো আপনার দেখা হয়েছে।
* হ্যাঁ, আমরা কয়েকটা অ্যাডভেঞ্চার একসঙ্গে করেওছি। কিন্তু ডোনাল্ড একটু মাস্তান গোছের, অতটা আমার ভাল
লাগে না।
আপনি তো ডোনাল্ডের চেয়েও বয়সে বড়। শুনেছি, আপনার জনপ্রিয়তাই ডিজনির আর্থিক অবস্থা ঘুরিয়ে দেয়।
* হ্যাঁ, তার পর তো কত ‘ডিজনিল্যান্ড’ আর থিম পার্ক, আমার মুখ আঁকা ঘড়ি, কাপ প্লেট, বেডকভার থেকে হরেক মার্চেন্ডাইজিং। ওয়াল্ট ডিজনি তাই আমাকে যা সম্মান দিয়েছিলেন! এক বার বলেছিলেন, “একটা তথ্য ভুললে চলবে না। একটা ইঁদুরের থেকেই আমাদের সব কিছু।” দেখো বাপু, এ সব কথা আবার ডোনাল্ডকে বোলো না। ও দুঃখ পাবে।
একটা অন্য কথা বলছিলাম। অনেকে তো নানা ভাবে আপনার সমালোচনা করে...
* জানি। আগ্রাসী মার্কিন ধনতন্ত্রের প্রতীক হিসাবে দেখে। সেই ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় থেকে এ সব চলছে।
এ নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া?
* আমি মনে মনে হাসি। ইঁদুরের কত ক্ষমতা, ইঁদুরেরাই জানে। যাক, মিনি আজ ভাল কেক বানিয়েছে। খেয়ে যাও। |
|
|
|
|
|