মাটির মানুষ
কাজলের পথেই অভাব
ঘুচেছে মহিলাদের
বাঁকুড়ার হিড়বাঁধ থানার লালবাজার গ্রাম। এই গ্রামেই থাকেই কাজল কর্মকার। আর পাঁচটা ঘরের বউদের মতো সংসারের যাবতীয় কাজে নিজেকে সদাই ব্যস্ত রাখেন। তবে তারই মধ্যে সময় খুঁজে নিয়ে বের করেছেন সংসারে একটু সাশ্রয়ের উপায়। তবে এ রকমতো অনেক দেখা যায়। শোনাও যায়। কিন্তু সেটা যখন শুধু নিজের জন্যই সীমাবদ্ধ থাকে না, তখনই ভাবতে অন্যরকম লাগে। আর কাজলদেবী সেই ভাবনাটাই ভাবিয়েছেন। শুধু নিজের জন্য নয়, গ্রামের আরও মহিলাকে সুযোগ করে দিয়েছেন সংসারের কাজের বাইরে সামান্য হলেও একটু উপার্জনের সুযোগ। গ্রামের কিছু মহিলাকে নিয়ে কাজলদেবীর মাছের কাঁটা (বঁড়শি) তৈরি এবং তা বাজারে বিক্রির সুযোগ তাঁর সঙ্গে সঙ্গে হাসি ফুটিয়েছে অন্যদের মুখেও।
গ্রামীণ এই কুটিরশিল্পে নিযুক্ত শুধুমাত্র মহিলা ও কিশোরীরা। অর্থকরী মূলধন হল নানা গেজের তার আর কয়েকটা ছেনি ও ছোট হাতুড়ি। ব্যাস। রাঁধো-বাড়ো, সংসারের যাবতীয় কাজ সামলে যখন খুশি বসে যাও। এ সব তথ্য জানা গেল, গৃহবধূ কাজলের কাছে। কাজলের স্বামী আতঙ্ক কর্মকারের দায়িত্ব বস্তা বস্তা বঁড়শি সাপ্লাই দেওয়া মহাজনের কাছে। বড়জোড়ায়। সেখান থেকে কলকাতার বড়বাজারে পৌঁছে যায় বঁড়শি। কাজলের সঙ্গে কাজ করছে একাধিক টিন এজার। এদের কেউ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে, কেউ স্কুল ড্রপ। এদের মধ্যেই বেবী কর্মকার, সুপর্ণা, মিতুরা জানায়, সামান্য হলেও যা রোজগার হয় তাতে সংসারের সুরাহা হয় বই কি। আর ওদের নেত্রী কাজলের কথায়, “দেখুন আমাদের সংসারে নিত্য অভাব। এক চিলতে চাষের জমিই সম্বল। চাষের কাজের বাইরে আর কাজ কই? তবু এই মাছ-কাঁটার (বঁড়শি) কাজ সামান্য হলেও পয়সা দেয়।”
হিড়বাঁধের বিডিও শিবাজী আদক কাজল দেবীর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ছেন। তাঁর কথায়, “এই ধরনের কুটিরশিল্প গ্রামীণ মানুষের রোজগারে একটি বড় উপায়। সামান্য বিনিয়োগের এই শিল্পের বাজারও রয়েছে। আবার কাজের অবসরেই করা যায়। সর্বোপরি পলিউশন ফ্রি। এই ধরনের শিল্পের উন্নয়নের জন্য সরকারি নানা সাহায্যও রয়েছে। ঠিকমতো চললে গ্রামীণ মহিলাদের এই সব কুটিরশিল্প প্রচুর জীবিকার পথ দেখাবে।” তাঁর সঙ্গেই ঘুরে দেখা গেল লালবাজারের বঁড়শি পাড়া।
আর সরাসরি এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কাজলের স্বামী আতঙ্ক কর্মকার কী বলেন?
“দাদা, রোজগার ভাল হতে পারে। কিন্তু আমরা তো মহাজন নই। লাভের গুড়ের পিঁপড়ে মারে অনেকটা। মারে, পিঁপড়ে মহাজন। তা হোক, তবু তো আমরা কাজ পাই। তবে সারা বছর কাজ হয় না। শুনেছি আমাদের এই মাছ ধরার কাঁটা বাংলার বাইরেও যায়।”
এক এক ধরনের মাছের জন্য এক এক রকমের কাঁটা (বঁড়শি)। বড় কাঁটা রুই-কাতলার জন্য। একেবারে পুঁটি মাছ ধরার কাঁটা হাফ সেন্টিমিটারেরও কম। সে এক শিল্প কর্ম! দশ রকমের সাইজের কাঁটা বা বঁড়শি তৈরি হয় এখানে।
সাইজগুলি সবই নম্বর দিয়ে। সবচেয়ে ছোট এক হাজার কাঁটার দাম দাম ৩০ টাকা। বঁড়শির নম্বর যত বাড়ে কাঁটার সাইজও তত ছোট হয়। কাঁচামাল বলতে লোহার তার। কারিগরদের কাছেই শোনা গেল, সুদক্ষ কারিগর এক নম্বর বঁড়শি করতে পারবে দিনে তিন হাজার।
ভাবুন তো, কলকাতার সুভাষ সরোবর কিংবা লালদিঘিতে কোনও মৎস্যশিকারি হুইলে বড় রুইটিকে খেলাচ্ছেন, যার বঁড়শি তৈরি হয়েছে কাজল কর্মকারদের মতনই কোনও শিল্পীর হাতে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.