ছেলের স্মৃতিতে স্কুলকে আর্থিক সাহায্য
কৃতি ছাত্র ছিলেন ছেলে সোমনাথ ভট্টাচার্য। বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটিতে পড়তেন। সেখানে ফাইনাল পরীক্ষার আগেই নিখোঁজ হয়ে যান সোমনাথ। সেটা ১৯৭৮ সাল। নভেম্বরের ২৪ তারিখ। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও আর তাঁর সন্ধান মেলেনি। এখন বাবা-মায়ের কাছে সোমনাথ শুধুই স্মৃতি। ছেলের স্মৃতি-রক্ষার্থেই হিজলি হাইস্কুলে ৮ লক্ষ টাকা দান করলেন ওই স্কুলেরই অঙ্কের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রমথ ভট্টাচার্য।
প্রমথবাবুর আদত বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরের কিশোরপুর গ্রামে। সেখান থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশের পর কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজ থেকে বিএসসি। ১৯৫৬ সালের ১ অগস্ট অঙ্কের শিক্ষক হিসাবে হিজলি হাইস্কুলে যোগ দেন। ১৯৯০-এর ১ অগস্ট ওই স্কুল থেকেই অবসর নেন। হিজলি সোসাইটিতে বাড়ি করে সেখানেই থাকেন। দুই ছেলে, দুই মেয়ে। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বড় ছেলে বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য খড়্গপুর আইআইটি থেকে এমটেক পাশের পর হাওড়ায় কারখানা করেছেন। ছোট ছেলে সোমনাথ নিখোঁজ। প্রমথবাবু যখন চাকরিতে ঢুকেছিলেন তখন মাইনে ছিল মাসে মাত্র ১২০ টাকা। আর ৩০ টাকা ডিএ। অবসরের পর প্রথমে পেনশন পেতেন ২৩০০ টাকা। এখন অবশ্য পেনশন বাবদ মাসে পান ১৬ হাজার টাকা। প্রমথবাবু বলেন, “পুরো টাকাই আমার কষ্টার্জিত। ছেলের স্মৃতিতে সেই টাকাই স্কুলকে দান করেছি।” প্রমথবাবুর স্ত্রী বাসন্তীদেবী বলেন, “আমরা সাধারণ জীবন-যাপন করি। ফলে বেশি অর্থের প্রয়োজনও হয় না। ওই টাকায় স্কুলের উন্নতি হবে। কত ছাত্র-শিক্ষক আসবেন, আমার ছেলের কথা সকলে মনে করবে। এটাই আমরা চাই। তাই স্বামী যখন স্কুলে টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাতে আমিও উৎসাহ দিয়েছিলাম।” হিজলি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রবিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় আপ্লুত। তিনি বলেন, “এই সাহায্য পেয়ে আমরা অভিভূত। স্কুলকে ভাল না বাসলে এত টাকা দেওয়ার কথা কেউ ভাবতেই পারেন না। স্যারের এই চিন্তা ছাত্র ও শিক্ষকদের অনুপ্রাণিত করবে।”
স্কুলে ল্যাবরেটরি থাকলেও উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। দানের টাকায় ল্যাবরেটরির জন্য নতুন ভবন তৈরির প্রস্তাব দেন প্রমথবাবুই। সেই কাজ শুরুও হয়ে গিয়েছে। প্রধান শিক্ষক বলেন, “স্যার যেমন বলেছিলেন, সেই মতোই কাজ হচ্ছে। এমনকী যাতে ভাল কাজ হয় তার দেখভালও করছেন স্যার নিজেই।” খুশি স্কুলের এক সময়ের ছাত্র ও বর্তমান শিক্ষক সিদ্ধার্থ সরকারও। তাঁর কথায়, “আমি স্যারের ছাত্র ছিলাম। পরে এই স্কুলেই শিক্ষকতায় ঢুকি। স্যার স্কুলের জন্য যা করেছেন তা এক কথায় অভাবনীয়।”
প্রমথবাবু শিক্ষক হিসাবেও জনপ্রিয় ছিলেন ওই এলাকায়। বছর দু’য়েক আগে সবংয়ের খড়িকা স্কুলকেও ২ লক্ষ টাকা দান করেছিলেন। কারণ, ওই স্কুলের জন্য জমি দান করেছিলেন তাঁর শ্বশুর অবিনাশচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়। নিজের রোজগারের টাকা এ ভাবেই দু’টি স্কুলে দিলেন। ছেলেদেরও ভাল ভাবেই মানুষ করতে চেয়েছিলেন। এক ছেলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। অন্য জন নিরুদ্দিষ্ট। সেই ছেলের স্মৃতি আঁকড়েই বেঁচে আছেন বৃদ্ধ ভট্টাচার্য দম্পতি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.