|
|
|
|
|
|
নিধিরাম দমকল |
অশনি সঙ্কেত |
শান্তনু ঘোষ |
পরিকল্পনা হয়েছিল বিস্তর। কিন্তু অভিযোগ, কাজ হয়েছে অল্পই। ফলে অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। তাই এখনও সংস্কার ও কর্মীর অভাবে ধুঁকছে হাওড়ার দমকল কেন্দ্রগুলি।
রাজ্য দমকলের ‘ই’ ডিভিশন হাওড়ায় বালি, লিলুয়া, হাওড়া, শিবপুর ও উলুবেড়িয়া এই পাঁচটি দমকল কেন্দ্র রয়েছে। মোট ইঞ্জিন ৯টি। চার বছর আগে হাওড়ার বেহাল দমকল কেন্দ্রগুলি আমূল সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৎকালীন রাজ্য সরকার। স্থির হয়েছিল সংস্কারের পরে বাড়ানো হবে ইঞ্জিনের সংখ্যা, আসবে আধুনিক ইঞ্জিনও। পাশাপাশি, কর্মীর সংখ্যাও বাড়বে। কারণ, জায়গা ও কর্মীর অভাবে হাওড়ার পাঁচটি দমকল কেন্দ্রে যত সংখ্যক ইঞ্জিন থাকার কথা তা রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। অভিযোগ, তার পরে কাজ হয়েছে নামমাত্র। এখনও কম ইঞ্জিন ও কর্মী নিয়েই চলছে হাওড়ার দমকল।
যদিও রাজ্যের দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান জানিয়েছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই সমস্যা মিটবে। তিনি বলেন, “শুধু হাওড়া নয়, সারা রাজ্যেই সমস্যা রয়েছে। ইতিমধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে। পূর্ত দফতর পুরনো বাড়িগুলির সংস্কার করবে। জেলাশাসকদের সঙ্গে আলোচনা করে বিকল্প জমির ব্যবস্থা করে ভাড়া বাড়ি থেকে কেন্দ্রগুলি সরানো হবে। কয়েক মাসের মধ্যে নতুন কর্মী নিয়োগ শুরু হবে।” |
|
বালির অর্ধসমাপ্ত নতুন কেন্দ্র। |
জিটি রোডের উপরে বালি কেদারনাথ হাসপাতালের সামনেই রয়েছে বালি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। পরিকল্পনামাফিক ২০০৮-এ বালিতে নতুন দমকল কেন্দ্র তৈরির কাজ শুরু করেছিল পূর্ত দফতর। খরচ ধরা হয়েছিল ৫৪ লক্ষ টাকা। ব্রিটিশ আমলের এক তলা বাড়িটি ভেঙে চার তলা বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। নতুন বাড়ি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত মূল বাড়ির উল্টো দিকে, যেখানে মাসিক ভাড়ায় গ্যারাজে দু’টি ইঞ্জিন থাকে, সেখানেই অস্থায়ী অফিসে কাজকর্ম চলবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। ২০১০-এ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কংক্রিটের কাঠামো তৈরির পরে কাজ বন্ধ রয়েছে। হাওড়া দমকল দফতর সূত্রে খবর, প্রথম দফায় কাজের জন্য পূর্ত দফতরকে ২৬ লক্ষ টাকা দিয়েছিল রাজ্য দমকল দফতর। কিন্তু এর পরে আর অর্থ না পাওয়ায় পূর্ত দফতর কাজ বন্ধ করে দেয়।
লিলুয়া ছোট গেট এলাকার ফায়ার সার্ভিস স্টেশনটির অবস্থা বিপজ্জনক। যে কোনও সময়ে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা এখানকার কর্মীদেরই। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভারত-চিন যুদ্ধের সময় জিটি রোডের উপর লিলুয়ায় একটি ভাড়া বাড়িতে দমকল কেন্দ্রটি তৈরি হয়। কিন্তু এটি এতই অপরিসর যে ইঞ্জিন ঘোরানোয় সমস্যা হয়। তাই রাস্তার উপরেই গাড়ি রাখতে হয়। |
|
|
শিবপুরের
জরাজীর্ণ স্টোর রুম |
সংস্কার করা হয়েছে
শিবপুর কেন্দ্রের একাংশ |
|
যদিও কয়েক বছর আগেই লিলুয়া কেন্দ্রটিও অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এলাকারই একটি বন্ধ কারখানার জমিতে তৈরি হওয়ার কথা ছিল নতুন ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। কিন্তু আজও সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। রাজ্য দমকলের ডেপুটি ডিরেক্টর (পশ্চিমাঞ্চল) বিভাস গুহ বলেন, ‘‘বালিতে পুনরায় কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পূর্ত দফতরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। শীঘ্রই ওখানে কাজ শেষ হবে। তবে লিলুয়ার কেন্দ্রটি স্থানান্তরের বিষয়ে কোনও কাগজপত্র হাতে পাইনি।” তিনি বলেন, “ভাড়া বাড়িতে চলছে বলেই পূর্ত দফতর লিলুয়া কেন্দ্রটি সংস্কার করে না।”
বিভাসবাবু জানান, তিন-চার মাস আগে মহাকরণে দমকলের যুগ্ম সচিব, সমস্ত ডিভিশনের অফিসার এবং পূর্ত দফতরের কর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়। দেখা যায়, রাজ্যে ১০৯টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে কিছু চলছে ভাড়া বাড়িতে। পূর্ত দফতর সেই বাড়িগুলির সংস্কার করবে না। তবে রাজ্য সরকারের নিজস্ব জমিতে যে কেন্দ্রগুলি রয়েছে তার দায়িত্ব পূর্ত দফতরের। বিভাসবাবু বলেন, “ওই বৈঠকের পরে পূর্ত দফতরের সঙ্গে আমরা হাওড়ার কেন্দ্রগুলিতে সমীক্ষা চালাই। তার পরেই পূর্ত দফতর হাওড়া ও শিবপুরে সংস্কারের কাজ করে।” |
|
|
বালির বর্তমান কেন্দ্র |
লিলুয়া |
|
মধ্য হাওড়ার মার্টিন ব্রিজের কাছেই রয়েছে হাওড়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। এটিই আবার জেলার কন্ট্রোল রুম। এখানে পূর্ত দফতর সেপটিক ট্যাঙ্কের পাইপ লাইন মেরামতি, ব্যারাকের সংস্কারের মতো কিছু কাজ করেছে। তবে পুরনো বাড়িটি ভেঙে চার তলা বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা থাকলেও তা আজও হয়নি। দক্ষিণ হাওড়ার শিবপুর থানার পাশেই ব্রিটিশ আমলের বাড়িতে রয়েছে শিবপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। পূর্ত দফতর সম্প্রতি দীর্ঘ দিনের জরাজীর্ণ বাড়িটির সংস্কার করেছে। তবে কর্মীদের অভিযোগ, এই কেন্দ্রের স্টোর রুমটি খুবই জরাজীর্ণ হলেও তার সংস্কার হয়নি। সাপের উপদ্রবে ভিতরে ঢুকতে ভয় পান কর্মীরা। বিভাসবাবুর কথায়: “হাওড়ায় বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা হলেও কাজ হয়নি। তবে ওখানে কর্মীদের কোয়ার্টার্স সারানো ও কন্ট্রোলরুমটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত করে কম্পিউটার বসানোর কাজ শুরু হবে। শিবপুরেও বাকি কাজ করা হবে।” পাশাপাশি, ধূলাগড়ে জালান কমপ্লেক্সের ভিতরে একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এটি তৈরি হলে সাঁকরাইল, ডোমজুড়, ধূলাগড়-সহ আশপাশের এলাকার মানুষ উপকৃত হবেন। তবে হাওড়ার পাঁচটি দমকল কেন্দ্রেই কর্মী সংখ্যা কম।
কিন্তু হাওড়ায় যেখানে কর্মীর অভাবে পুরনো কেন্দ্রগুলিতেই ইঞ্জিন সংখ্যা বাড়ানো যাচ্ছে না সেখানে নতুন কেন্দ্র তৈরি হলে কতটা উপকার হবে? বিভাসবাবু বলেন, “হাওড়ার শিল্পাঞ্চলে প্রতি মাসে ছোট-বড় মিলিয়ে ৯০ থেকে ১০০টি অগ্নিকাণ্ড ঘটে। কিন্তু হাওড়া সবার চোখের আড়ালেই চলে গিয়েছিল। কর্মীর অভাবে কাজে খুবই সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করি কয়েক মাসের মধ্যেই সমস্যা মিটবে।”
|
হাওড়া |
ইঞ্জিনের তালিকা: |
দমকল কেন্দ্র |
থাকার কথা |
রয়েছে |
বালি |
২ |
১ |
লিলুয়া |
২ |
১ |
শিবপুর |
২ |
১ |
হাওড়া |
৪ |
৪ |
উলুবেড়িয়া |
২ |
২ |
|
|
১২ |
৯ |
|
কর্মী সংখ্যার তালিকা: |
দমকল কেন্দ্র |
থাকার কথা |
রয়েছে |
বালি |
৬০ |
২৭ |
লিলুয়া |
৫৯ |
২৭ |
শিবপুর |
৬০ |
২৮ |
হাওড়া |
১১৫ |
৪৪ |
হাওড়া, কন্ট্রোল রুম |
১৫ |
৬ |
উলুবেড়িয়া |
৬০ |
১৮ |
|
|
৩৬৯ |
১৫০ |
|
ছবি: রণজিৎ নন্দী |
|
|
|
|
|