|
|
|
|
কর্মী অপ্রতুল, উন্নয়ন শিকেয় |
পীযূষ নন্দী • আরামবাগ |
রাজনৈতিক অস্থিরতা তো আছেই, প্রশাসনের গাফিলতির অভিযোগও উঠতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে বহু
কোটি টাকা অব্যবহৃত আরামবাগের পঞ্চায়েতগুলিতে। তা নিয়েই আনন্দবাজারের প্রতিবেদন। আজ শেষ কিস্তি। |
আরামবাগ মহকুমার ৬টি ব্লকের জন্য ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দ ছিল প্রায় ৪ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। খরচ হয়েছে ৩ কোটি ২৩ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। তৃতীয় রাজ্য অর্থ কমিশন বরাদ্দ করেছিল ৪ কোটি ২৬ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা। খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৩৭ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকা। এ ছাড়াও সংসদ ভিত্তিক গ্রামোন্নয়ন কমিটির জন্য আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির পাওয়া বহু টাকা খরচ না হয়ে পড়ে আছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। ২০০৯-১০ এবং ২০১০-১১ আর্থিক বছরে এই বাবদ প্রায় ১ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা অব্যবহৃত। এই খাতেই খানাকুল ১ পঞ্চায়েত সমিতিতে ২০১০-১১ আর্থিক বছরে সংসদগুলির জন্য পাওয়া গিয়েছিল ১২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। খরচ হয়েছে মাত্র ৫ লক্ষ ৯০ হাজার। খানাকুল ২, গোঘাট ১, গোঘাট ২ এবং পুড়শুড়া ব্লকে খরচ করা যায়নি যথাক্রমে ১১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা, ৮ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, ৯ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা। অন্য দিকে, একশো দিনের কাজের প্রকল্পেও ২৩ কোটি টাকার মধ্যে খরচ হয়নি সাড়ে ৭ কোটি।
পঞ্চায়েত সমিতিগুলি থেকে পাওয়া কাজের হিসেবও কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ আছে। আরামবাগ মহকুমায় সব পঞ্চায়েত সমিতি ও পঞ্চায়েতই বামশাসিত। তৃণমূলের অভিযোগ, এই টাকার মধ্যে একটা বড় অংশ নয়ছয় করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশও একই মত পোষণ করেন। তাঁদের বক্তব্য, ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেটে যতটা দেখানো হয়, বাস্তবে তার ৮০ শতাংশ কাজ হয়নি, এমন উদাহরণও আছে।
এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, পঞ্চায়েতের উন্নয়নের কাজ গতি পায়নি। যার মূল কারণ হিসাবে রাজনৈতিক অশান্তিকেই দায়ী করেছেন বেশির ভাগ পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির প্রধান, সভাপতিরা। অভিযোগের আঙুল স্বভাবতই তৃণমূলের দিকে। তৃণমূূল নেতৃত্ব বরাবরই বলে আসছেন, তাঁদের দিক থেকে সহযোগিতার অভাব নেই। রাজ্যে তৃণমূল সরকারকে বিব্রত করতেই কাজ করছেন না প্রধান, সভাপতিরা। নিজেরা আগের জমানায় এত দুর্নীতি করেছেন, গ্রামের মানুষের রোষের মুখে পড়তে হবে মনে করে নিজেরাই কাজে আসতে ভয় পাচ্ছেন।
এই চাপানউতোর চলবেই। এ দিকে, প্রধান ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরা অনেকে প্রশাসনের ভূমিকারও সমালোচনা করেছেন। ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকদের একাংশও মেনে নিচ্ছেন সে কথা। তাঁদের বক্তব্য, পঞ্চায়েতগুলিতে কর্মীর সংখ্যা খুবই কম। বহু গুরুত্বপূর্ণ পদ ফাঁকা। কাজে গতি আনতে প্রশিক্ষণ দরকার কিছু ক্ষেত্রে। সে সব করা হয়নি। কর্মদক্ষতা পর্যালোচনারও ব্যবস্থা নেই। নিয়মিত অডিট করতে পারলে দুর্নীতি অনেকটা কমানো যেত। কিন্তু তেমন কোনও পদক্ষেপ প্রশাসনের তরফেও করা হয়নি। কোনও প্রকল্পেরই উপযুক্ত প্রচার নেই বলেও মনে করেন প্রশাসনের এই কর্তারা। মানুষ নিজেদের অধিকার সম্বন্ধেও সচেতন নন।
রাজনৈতিক পালাবদলের পরে মানুষের ক্ষোভ গিয়ে পড়ছে পঞ্চায়েতগুলির উপরে। দুর্নীতির অভিযোগ বহু কাল ধরেই আছে। কিন্তু পরিষেবা না পেয়ে মানুষ এখন তিতিবিরক্ত। নূন্যতম পরিষেবাগুলি অমিল। পানীয় জল সরবরাহ, জনস্বাস্থ্য, সাক্ষরতা, সড়ক যোগাযোগ, দরিদ্র মানুষের আবাসন, সেচ, নিকাশি, ক্রীড়া সমস্ত ক্ষেত্রেই পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজও স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। বন্যার পরে পানীয় জলের কল সারানোর কাজও হয়নি খানাকুল ২ ব্লকের ২৪টি পঞ্চায়েত এলাকায়। বার্ধক্যভাতা, বিধবা ভাতা পাচ্ছেন না অনেকে। বহু পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতিতে এখনও সদস্যেরা কাজে আসছেন না। কিন্তু বিষয়টি তাঁরা লিখিত ভাবে না জানানোয় সমস্যা আরও জটিল হয়েছে বলে মনে করেন বিডিওরা। তাঁদের প্রশ্ন, রাজনৈতিক সমস্যা, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব হয় তো দীর্ঘস্থায়ী হবে না, কিন্তু তারপরেও কি পঞ্চায়েতের স্বাভাবিক উন্নয়নমূলক কাজকর্ম গতি পাবে? কর্মী নিয়োগ না হলে কাজের গতি শ্লথ হতে বাধ্য। আরামবাগের প্রতিটি ব্লকে অনুমোদিত কর্মীর সংখ্যা ৪৫। কিন্তু বাস্তবে আছেন ২২-২৩ জন করে। এই পরিস্থিতির উন্নতি না হলে পরিস্থিতি শুধরাবে না বলে মনে করেন বিডিওরা। জেলাশাসক শ্রীপ্রিয়া রঙ্গরাজন বলেন, “আরামবাগ মহকুমার পঞ্চায়েতের জন্য চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগের বিশেষ ব্যবস্থা হবে।” |
|
|
|
|
|