চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১...
বিষয় ও আঙ্গিকে দেশীয় ঐতিহ্যের সন্ধান পাওয়া যায়
রুণ শিল্পী তন্ময় রায় সম্প্রতি তাঁর ছবির প্রথম একক প্রদর্শনী করলেন কেমোল্ড আর্ট গ্যালারিতে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি সমাজবিজ্ঞানের স্নাতক। ছবি আঁকার ক্ষেত্রে কোনও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও ছেলেবেলা থেকেই ছবির প্রতি আকর্ষণ। সেই ভালবাসা থেকে নিজের তাগিদেই প্রকরণ রপ্ত করেছেন। কোনও শিল্পশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঁচ বা সাত বছরের যে নিবিড় অনুশীলন তার মধ্য দিয়ে এক জন উদীয়মান শিল্পী চিত্রের প্রচলিত প্রকরণ ও আঙ্গিকের সঙ্গে যেমন পরিচিত হন, তেমনই শিল্প ইতিহাস ও বিবর্তনের সঙ্গেও তাঁর কিছু পরিচয় ঘটে। এ ছাড়াও সেখানে তাঁকে শিখতে হয় শিল্পকলার সাংগঠনিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নানা জটিলতার কিছু কিছু রূপরেখা। এই প্রাথমিক জ্ঞান নিয়ে তিনি যখন তাঁর নিজের সৃজনের ক্ষেত্রে আসেন, তখন তাঁকে সেই ভিত্তির উপর নিজস্ব পরিসর তৈরি করতে হয়। প্রচলিত রূপরীতির বাইরে নিজস্ব প্রকাশভঙ্গি সন্ধান করতে হয়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অনেক সময় তাঁকে সাহায্য করে, আবার প্রতিবন্ধকতারও সৃষ্টি করে। প্রচলিত পথ থেকে তিনি কিছুতেই বেরোতে পারেন না। এই দুটি দিকের সঙ্গে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে করতে এক জন শিল্পী নিজেকে তৈরি করেন। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা যে অনিবার্য বা অপরিহার্য, তা কখনওই নয়। অনেক মহৎ প্রতিভার আবির্ভাব ঘটেছে, যাঁদের কোনও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। আবার সেই অভাব শিল্পীর প্রকাশকে সংকুচিত করেছে, এ রকম দৃষ্টান্তেরও অভাব নেই।
সেই অভাবকে তন্ময় নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে রূপান্তরিত করতে চেষ্টা করেছেন। তিনি নিজস্ব এক প্রকাশভঙ্গির সন্ধান করেছেন। তাঁর তারুণ্যজনিত অভিজ্ঞতার অভাবের কারণেই এখনও পরিপূর্ণ সাফল্য অর্জন করতে পারেননি। কিন্তু তাঁর প্রয়াস প্রশংসনীয়। ক্যানভাসের উপর অ্যাক্রিলিক রঙে তিনি ১৬টি ছবি এঁকেছেন। কয়েকটি পৌরাণিক বিষয় অবলম্বনে করা এবং রোমান্টিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রাধান্য। ছবির বিষয়ে ও আঙ্গিকে তিনি দেশীয় ঐতিহ্যের সন্ধান করেছেন।
প্রথম ছবিটি অনামা। একটি নীলাভ বালক বাঁশি বাজাচ্ছে। পাশে একটি ময়ূর ডানা মেলে রয়েছে। ময়ূরের পেখমের পাশে ছেলেটির উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে যে রচনাবন্ধ গড়ে উঠেছে, তা যথেষ্ট কল্পনাদীপ্ত। ‘ইউনিভার্সাল মাদার’ শীর্ষক ছবিটিতে বর্গাকার চিত্রপটে অলঙ্করণময় নীলাভ প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে থাকা এক নারীর উপস্থাপনা। তাঁর বাঁ কাঁধের উপর একটি পাখি বসে আছে। বাস্তব ও স্বপ্নের এক সুষম সমন্বয় ঘটাতে চেষ্টা করেছেন।
শিল্পী: তন্ময় রায়
এই ছবির যে রচনাবন্ধ বা কম্পোজিশন, সেটা খুবই সরল ও বহু ব্যবহৃত। রৈখিক বিন্যাসে অতিরিক্ত সচেতনতা থেকে কিছুটা যান্ত্রিক আড়ষ্টতা এসেছে, যা অবয়বে খানিকটা কাঠিন্য এনেছে। যে কারণে আপাত পেলবতা সত্ত্বেও ছবিটি গভীর কোনও অভিঘাত তৈরি করে না। শিল্পীর প্রকাশের সীমাবদ্ধতা এখানেই। ‘দ্য টিউন অব লাভ’ ছবিতে একটি নীল বালক বাঁশি বাজাচ্ছে। কৃষ্ণের অনুষঙ্গ এসেছে এখানে। ‘ট্রাইবাল উওম্যান’ ছবিতে উপস্থাপিত হয়েছে এক আদিবাসী রমণীর মুখ। ‘দ্য ফেস উইথ মাস্ক’ একটি আদিবাসী পুরুষের মুখ। তার দু’পাশে দু’টি মুখোশ স্থাপিত। ‘প্লেজার অব ডাস্ক’ ছবিতে সন্ধ্যা হয়ে আসার দৃশ্য। তার মধ্যে পদ্মকুঁড়ি হাতে একটি কিশোরের উপস্থাপনা। ‘লর্ড কৃষ্ণ’ ছবিতেও কৃষ্ণের প্রতিমাকল্পের পাশে একটি ময়ূর।
আমাদের চিত্রকলার আধুনিকতার একটা পর্যায়ে জাতীয় ঐতিহ্যের সন্ধান গুরুত্বপূর্ণ অভিঘাত সৃষ্টি করেছিল। বিংশ শতকের প্রথম তিনটি দশক জুড়ে নানা দিক থেকে এই সন্ধান চলেছে। এই সন্ধানকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। ধ্রুপদী রূপরীতি, আদিমতা ও লৌকিক। আদিমতার নানা অভিব্যক্তি আজও আমাদের ছবিতে নানা ভাবে কাজ করে। তন্ময় রায় তাঁর ছবিতে কালচেতনা সম্পৃক্ত বাস্তবতা থেকে দূরে গিয়ে তিনি স্বপ্নিল আদর্শায়িত এক রোমান্টিক চেতনাকে অভিব্যক্ত করতে চেয়েছেন। এই আঙ্গিকে গভীরতর নান্দনিক সংহতি আনতে গেলে যে অভিজ্ঞতা ও প্রকরণদক্ষতা প্রয়োজন, তা তাঁর নেই। সেই অভাব তাঁর ছবিতে কিছু সীমাবদ্ধতা এনেছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.