বিনোদন: সমাপ্তি-মঞ্চে সৌমিত্রও
‘জনতার উৎসব’ যাবে আরও
বড় আঙিনায়, অঙ্গীকার মমতার

ঞ্চে বসা, কোট-প্যান্ট পরা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে উত্তরীয় পরিয়েই থামলেন না তিনি।
বক্তৃতার শুরুতেই ‘শ্রদ্ধেয় সৌমিত্রদা’র কথা বললেন। জানালেন, আগামী বছর থেকে শুধু নন্দন-রবীন্দ্রসদনে আটকে থাকবে না চলচ্চিত্র উৎসব। সিনেমাপ্রেমী জনগণের জন্য নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম, নজরুল মঞ্চের মতো জায়গায় সাত দিন ধরে দেখানো হবে উৎসবের ছবি। “ভিড়ের চাপে অনেকে টিকিট না-পেয়ে ফিরে গিয়েছেন, সামনের বছর যাতে এ জাতীয় ঘটনা না-ঘটে, সে জন্যই এমন ভাবনা চলছে।” বললেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ ভাবেই আগামী বছর ‘জনতার উৎসব’কে আরও বড় পরিসরে পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার করলেন তিনি। ‘জনতার উৎসব’ই ছিল তাঁর সরকারের প্রথম চলচ্চিত্র উৎসবের লক্ষ্য। যে কারণে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে মমতা নন্দন থেকে সরিয়ে নেতাজি ইন্ডোরে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই লক্ষ্য সফল হওয়ার পরে বৃহস্পতিবার উৎসবের সমাপ্তি ঘটল আরও বৃহত্তর পরিসরের প্রতিশ্রুতিতে।
এবং সমাপ্তি অনুষ্ঠানে তিনি নন্দনে এলেন পাহাড়-তরাই থেকে জঙ্গলমহল সকলকে সঙ্গী করে।
অবশেষে পাশাপাশি। নন্দনে চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে সৌমিত্র। ছবি: অশোক মজুমদার
ময়দানের উল্টো দিকে রবীন্দ্রসদন-নন্দনের টিকিট-কাউন্টার লাগোয়া গেট দিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢুকছেন তিনি। সামনে কাটোয়ার রণ-পা নৃত্য। আর একটু এগিয়ে কালিম্পংয়ের ‘স্নো লায়ন নাচ।’ কোথাও কোচবিহারের রাজবাংশীদের ‘বৈরাতী নৃত্য’, কোথাও আবার মাদল-ধামসা নিয়ে ঝাড়গ্রাম থেকে আসা সাঁওতালি শিল্পীদের নাচ।
লোকনৃত্যের আসরে যদি পাহাড় থেকে জঙ্গলমহল, নন্দনের মঞ্চেও এ দিন ‘অল ইনক্লুসিভ’ ঘটনা!
সিনেমা থেকে নাটক থেকে গান থেকে কবিতা সকলে হাজির! সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, গৌতম ঘোষ, প্রভাত রায়, অপর্ণা সেন, বিভাস চক্রবর্তী কে নেই? শতাব্দী রায় উদ্বোধনে আসতে পারেননি, এ দিন তিনিও সাত তাড়াতাড়ি ‘প্যাক আপ’ করে নন্দনের মঞ্চে! প্রতুল মুখোপাধ্যায় খোলা গলায় গাইলেন তাঁর সেই বিখ্যাত গান, ‘আমি বাংলায় গান গাই।’ “সংস্কৃতির সব দিক এখানে মিলেছে, সবাই মিলে এই বাংলায় একটা সাংস্কৃতিক পরিবার।” বলছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ও এ দিন ‘অভিনেতাদের পরিবার’-এর কথাই বললেন। “রঞ্জিত (মল্লিক), প্রসেনজিৎ আমাকে বারংবার বলেছিল, আপনি না-থাকলে অভিনেতাদের পরিবারটা কিন্তু উৎসবে সম্পূর্ণ হবে না। ফলে সমাপ্তি অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আমি আনন্দিত।” তাঁর হাতে টালিগঞ্জের কলাকুশলীদের জন্য ২ লক্ষ ২৭ হাজার টাকার চেক তুলে দিলেন রঞ্জিত মল্লিক।
চলচ্চিত্র উৎসবের প্রাক্তন ও বর্তমান চেয়ারম্যান এ দিন পাশাপাশি। সৌমিত্রের পাশের চেয়ারটাই মুখ্যমন্ত্রীর। কিন্তু মমতা তো চেয়ারে বসেন না! মাঝে এক বার চলে গেলেন মঞ্চের পিছনে। একটু পরে মঞ্চে থাকা বিশিষ্ট লোকদের গলায় উত্তরীয় পরিয়ে দেবেন তিনি, তাড়া হয়ে পড়ে-থাকা সেই উত্তরীয়ের ভাঁজ খোলায় তথ্য-সংস্কৃতিসচিব নন্দিনী চক্রবর্তীর সঙ্গে হাতও লাগান মুখ্যমন্ত্রী।
এ ভাবেই সমাপ্তি অনুষ্ঠানের প্রতিটি ক্ষেত্রে মমতা ‘পার্সোনাল টাচ’ দিয়ে দিয়েছেন। দর্শকদের চেয়ারের সামনে এসে হাত জোড় করে অভিনন্দন জানিয়েছেন, তারই মধ্যে অভিনেতা পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়কে বলেছেন, “আমি তো সিরিয়াল দেখি।” সময় পান কখন? গল্পে-গল্পে জানালেন, সব কাজ সারার পরে রাত দেড়টা-দু’টোয় মাঝে-মাঝে টিভির রিমোট টেপেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষিতে তৈরি ‘গেরিলা’ ছবির পরিচালক নাসিরুদ্দিন ইউসুফকে বললেন, “একটি মুজিবরের থেকে হাজার মুজিবরের কণ্ঠ... ও পারের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরাও এখানে গাইতাম।”
তিস্তার জল নিয়ে শেখ হাসিনা এ দিন আশ্বস্ত হতেই পারেন।
তবে ব্যাকস্টেজে সবচেয়ে বেশি ‘স্মৃতির লগ্নি’ রাখা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর অন্যতম প্রিয় ছবি ‘তিন ভুবনের পারে’র নায়কের জন্যই। মুখ্যমন্ত্রী নন্দনে পৌঁছে গিয়েছেন, সৌমিত্র তখনও আসেননি। নাটকের রিহার্সাল থেকে বেরিয়ে মাঝরাস্তায় তিনি যানজটে। মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু অপেক্ষায় “উনি আসুন, এক সঙ্গেই ঢুকব।” সমাপ্তিসন্ধ্যায় আর্টিস্ট ফোরামের নাচ-গানের অনুষ্ঠান বসে দেখেছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সংস্পর্শই এই উৎসবের মূল সুর। স্মারকগ্রন্থে তাঁর অভিভাষণের নীচেই নীল কালিতে বাংলায় লেখা ‘সুস্বাগতম, কলকাতা।’ পাশে ইংরেজিতে পদবিবিহীন সই, ‘মমতা।’ এক দিকে প্রথাগত ছাপা অক্ষরের বাইরে কলমে সইয়ের ব্যক্তিগত স্পর্শ, অন্য দিকে পদবি না লেখার আত্মবিশ্বাস।
দুইয়ের যোগফল তিনি জানেন। আর সে জন্যই ‘জনতার উৎসব’কে আরও বৃহত্তর আঙিনায় নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.