পিচ উঠে গিয়ে তলার পাথর আলগা হয়ে গিয়েছে। গাড়ি চলাচলের সময় চাকায় লেগে সেই পাথর ছিটকে জখম হচ্ছেন কেউ কেউ। ভাঙছে রাস্তার পাশে দোকানের কাচ। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত থেকে বসিরহাট পযর্ন্ত টাকি রোডের প্রায় পুরোটারই এমন দূরবস্থা। নিত্য এই রাস্তায় প্রচুর যানবাহনের চাপ থাকলেও বেহাল রাস্তা সারানোর ব্যাপারে প্রশাসনের কোনও উদ্যোগই নেই।
ওই রাস্তায় নিত্য যাতায়াত করা স্কুল-কলেজ, অফিস যাত্রীদের অভিযোগ, রাস্তার সারানোর দাবি জানিয়ে অবরোধ, বিক্ষোভ হলে নাম কা ওয়াস্তে মাঝে মধ্যে রাস্তার গর্ত বোজাতে তাপ্পি দেওয়া হয়। কিন্তু পাকাপাকি ভাবে রাস্তা মেরামতির দিকে কখনওই নজর দেয় না প্রশাসন। এবড়ো-খেবড়ো রাস্তায় চলতে চলতে ক্ষতি হচ্ছে গাড়ির যন্ত্রাংশের। ধুলোয় ঢেকে যাচ্ছে রাস্তার ধারের দোকানপাট। ধুলোর দাপট এতটাই যে দিনের বেলাতেও আলো জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। কলকাতা থেকে বসিরহাট যাওয়ার অন্যতম প্রধান সড়কের এমন শোচনীয় দশায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। রাস্তা সারানোর জন্য বার বার বিক্ষোভ, প্রতিবাদ জানিয়েও কোনও কাজ না হওয়ায় ওই রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে বাস শ্রমিক ইউনিয়ন। রাস্তার শোচনীয় অবস্থা নিয়ে ক্ষুব্ধ অটো এবং ট্রেকার চালকেরাও। এই অবস্থায় আচমকা ওই রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে চরম ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন যাত্রীরা। |
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে উপযুক্ত মেরামতির অভাবে বসিরহাটের ইটিন্ডা থেকে বেড়াচাঁপা হয়ে বারাসাত পর্যন্ত ৪৭ কিলোমিটার টাকি রোডের অবস্থা বেহাল। জায়গায় জায়গায় পিচ ও পাথর উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে প্রবল সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে গোলাবাড়ি, কার্তিকপুর, দেগঙ্গা, বেড়াচাঁপা, স্বরূপনগর, ধান্যকুড়িয়া, খোলাপোতা, হরিশপুর, ত্রিমোহিনী-সহ এক বড় অংশে রাস্তার হাল খুবই শোচনীয়। অসমান রাস্তায় গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। বর্ষার সময়ে দু’একবার ইট দিয়ে রাস্তার গর্ত বোজানোর চেষ্টা করা হলেও প্রশাসনের এই উদ্যোগ যাত্রী এবং রাস্তার দু’পাশের বাসিন্দাদের কাছে ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিমাত্রায় ভারী যানবাহন চলায় ইট গুঁড়ো হয়ে ধুলোয় পরিণত হয়েছে। গাড়ি চলাচলের সময় সেই ধুলো উড়ে চারপাশ ঢেকে যাচ্ছে। ধুলোর চোটে সামনে কিছু দেখা না যাওয়ায় মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। বর্তমানে রাস্তার যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে সবচেয়ে বেগ পেতে হচ্ছে রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছনোর ক্ষেত্রে। এবড়ো-খেবড়ো রাস্তায় গাড়িতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় রোগীর অবস্থা আরও সঙ্গীন হয়ে পড়ছে। শুধু এলাকার মানুষ বা ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী নিত্যযাত্রীরাই নন, মন্ত্রী, বিধায়ক-সহ বিভিন্ন ভিআইপি-দেরও টাকি রোড ব্যবহার করতে হয়। এত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা হওয়া সত্ত্বেও টাকি রোডের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার নিয়ে প্রশাসনের সে ভাবে কোনও উদ্যোগ চোখে না পড়ায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দা থেকে যাত্রী সকলেই।
গাড়িচালকদের দাবি, একে জ্বালানির দাম বাড়ছে। তার উপর খারাপ রাস্তার কারণে প্রায়ই যন্ত্রপাতি খারাপ হয়ে যাওয়ায় তা কিনতে হচ্ছে। এই অবস্থায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। বাস শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগে এই রাস্তায় ৪৩টি বাস চলত। রাস্তার বেহাল দশার কারণে তা কমে ২৩টিতে ঠেকেছে। বসরিহাট বাস-লরি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহন বসু বলেন, “আগে বারাসত যেতে এক ঘণ্টা কুড়ি মিনিট সময় লাগত। এখন খারাপ রাস্তার জন্য পৌনে তিন ঘণ্টা সময় লাগছে। গাড়ির যন্ত্রপাতিরও ক্ষতি হচ্ছে। এ ভাবে ত দিনের দিন চলতে পারে না। ভালভাবে রাস্তা মেরামত করা না হলে আমরা গাড়ি চালানো বন্ধ করতে বাধ্য হব।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বারাসাত থেকে বসিরহাটের ত্রিমোহিনী পর্যন্ত টাকি রোডটি পূর্ত দফতরের দু’টি ডিভিশনের মধ্যে ভাগ করা। ওই রাস্তার পূর্ণাঙ্গ ও স্থায়ী সংস্কারের জন্য কয়েক কোটি টাকা দরকার। এই মুহূর্তে টাকা না থাকায় রাস্তা সারানো যাচ্ছে না। ত্রিমোহিনী থেকে বেড়াচাঁপা পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার রাস্তা বসিরহাট পূর্ত দফতরের অধীন। ওই দফতর সূত্রে জানানো হয়, রাস্তাটি ভাগ ভাগ করে মেরামতির কাজ কাজ করার জন্য টেন্ডার ডাকা হয়েছে। ধান্যকুড়িয়া থেকে মাটিয়া গামছাহাটা পর্যন্ত এক কিলোমটার রাস্তা ভালভাবে মেরামতির জন্য ইতিমধ্যে ১১ লক্ষ টাকার টেন্ডারের কাজ শেষ। কিছুদিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে। গামছাহাটা থেকে খোলাপোতা বিডিও অফিস পর্যন্ত রাস্তার খানাখন্দ বোজানোর জন্য ৮ লক্ষ টাকার টেন্ডারের কাজ চলছে। বেড়াচাঁপা থেকে বিবিপুর পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার রাস্তার পুরোপুরি সংস্কারের জন্য ৫১ লক্ষ টাকার টেন্ডারে কাজ চলছে। তবে আপাতত তাপ্পি দেওয়ার জন্য ৪ লক্ষ টাকা খরচ করে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। পূর্ত দফতরের বসিরহাট ডিভিশনের সহকারি বাস্তুকার তপন নস্কর বলেন, “রাস্তার গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে পাকাপাকি সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” |