অরূপ খুনে আটক কৃষ্ণনগরের তৃণমূল কাউন্সিলর
তারাপীঠে পুজো দিয়ে ফেরার পথে মঙ্গলবার বিকেলে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়েছিলেন কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তারই তদন্তে নেমে বীরভূম জেলা পুলিশ কৃষ্ণনগর পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর দেবানন্দ শর্মা ওরফে বাবুসোনাকে আটক করেছে। মঙ্গলবারই গভীর রাতে দেবানন্দবাবুর বাড়ি থেকেই তাঁকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। আটক করা হয় ওই ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা নীতিশ দাসকেও।এর আগে রাজেশ সামন্ত নামে আরও
অরূপ
এক যুবককে তারাপীঠ স্টেশন থেকেই আটক করেছিল পুলিশ। বুধবার রাত পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে, বীরভূমের মাড়গ্রাম থানায় দেবানন্দ-সহ অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে ওই খুনের পিছনে জড়িত থাকার অভিযোগে বুধবার নদিয়ার করিমপুরের বাসিন্দা পায়েল মণ্ডল নামে এক তরুণীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রামপুরহাট আদলত তাকে ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। দেবানন্দের বাবা দিলীপ শর্মাও কৃষ্ণনগর পুরসভার দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর। গত পুর নির্বাচনে তিনি ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূলের টিকিটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। দিলীপবাবু নদিয়া জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদকও। এলাকায় তাঁর প্রভাবও সংশয়াতীত। অরূপ খুনে দলীয় কাউন্সিলর গ্রেফতার হওয়ায় জেলা তৃণমূল স্পষ্টতই কিছুটা অস্বস্তিতে। জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি যুব কল্যাণমন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস অবস্য দাবি করেন, “ওই খুনের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। আমাদের কাউন্সিলর ওই খুনের ঘটনায় আদৌ জড়িত কিনা তা পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। আইন তার নিজের পথেই চলবে।”অরূপের বাবা গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষ্ণনগর স্টেশন সংলগ্ন অঙ্গনাপাড়া এলাকার প্রভাবশালী সিপিএম নেতা। তিনি ভাতজাংলা পঞ্চায়েতের সদস্য। এলাকায় তাঁরও যথেষ্ট প্রতিপত্তি রয়েছে। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক বিভেদ থাকলেও গৌতমবাবুর সঙ্গে দিলীপ শর্মা এবং তার অনুগামীদের সম্পর্ক যথেষ্ট বাল ছিল বলেই জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। গৌতমবাবু নিজেও বলেন, “দেবানন্দের সঙ্গে আমার ছেলের তো সুসম্পর্ক ছিল। ও কীভাবে ওই খুনের ঘটনায় জড়িয়ে গেল বুঝতেই পারছি না। তবে আমার বিশ্বাস, দেবানন্দের বাবা, দিলীপ-দা বিষয়টি কিছুই জানতেন না।”
কৃষ্ণনগরে অরূপের শোকার্ত পরিবার। ছবি তুলেছেন সুদীপ ভট্টাচার্য
দিলীপবাবুর কথায়, “আমার ছেলে কোনও ভাবেই ওই ঘটনায় জড়িত নয়। আমাকে দুর্বল করার জন্য তাকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে।” কারা চক্রান্ত করতে পারে? দিলীপবাবু বলেন, “যারা আমার জনপ্রিয়তা সহ্য করতে পারছিল না, তারাই চক্রান্ত করেছে।”
দিলীপবাবুর ঘনিষ্ঠদের দাবি, কৃষ্ণনগর শহরে ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ চলছে। দিলীপবাবুদের তারই জেরে খুনের ঘটনায় দেবানন্দের নাম জুড়ে দিয়ে তাকে ফাঁসানো হল। এছাড়া মৃত অরূপের সঙ্গে দিলীপবাবুদের সুসম্পর্কের কথা সকলেরই জানা।
দিলীপবাবুর অভিযোগের তির স্থানীয় সমাজবিরোদী পরিতোষ দত্তের দিকে। তার সঙ্গে গৌতমবাবুর দীর্ঘ দিনের বিবাদ। বছর দুয়েক আগে বেলডাঙা হাটের মাঝেই পরিতোষকে খুনের চেষ্টা করা হয়। ওই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল ওঠে গৌতমবাবু ও অরূপের দিকে। আদালতে আত্মসমর্থন করে বাবা-ছেলে দু-জনেই অবশ্য মুক্তি পেয়ে গিয়েছিলেন। ওই ঘটনার বছর খানেক পরে খুন হয়েছিলেন সুব্রত মণ্ডল নামে গৌতমবাবুর ঘনিষ্ট এক অনুগামী। পুলসের সন্দেহ সে কাজ ছিল ফেরার পরিতোষের।
আটক নীতিশ দাস, দেবানন্দ শর্মা ও রাজেশ সামন্ত। ছবি তুলেছেন সব্যসাচী ইসলাম।
গৌতমবাবু বলেন, “পরীর উপরে হামলার ঘটনায় আমাদের ফাঁসানো হয়েছিল। এবার তারই জেরে আমার ছেলেক খুন করল। এর মধ্যে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।” ওই খুনের ঘটনায় পরী দত্ত ও দেবানন্দ শর্মার নাম একই সঙ্গে জুড়ে যাওয়ায় কিছুটা হলেও অবাক জেলার পুলিশ কর্তারা।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, এ কাজও পরিতোষের দলবলের। বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার নিশাত পারভেজ জানান, ওই ঘটনায় রাজেশ সামন্ত নামে ওই যুবককে সুপারি কিলার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। রাজেশ বরাহনগরের নওয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা হলেও কৃষ্ণনগরে মামারবাড়িতে থাকত। তাকে সুপারি কিলার হিসেবে ব্যবহার করেছিল কৃষ্ণনগরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পরিতোষ দত্ত-ই। অরূপের জামাইবাবু কৃষ্ণনগরের ভাতজাংলার বাসিন্দা মৃণাল পাল বলেন, “সন্দেহে পরিতোষ দত্ত লোক লাগিয়ে শ্যালককে খুন করেছে।” তিনিই পরতোষ দত্ত-সহ বাবুসোনা শর্মা, নীতিশ দাস-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পায়েলের সঙ্গে পরিতোষের বন্ধুত্ব আছে। পুলিশের দাবি, জেরায় পায়েল স্বীকার করেছে, পরিতোষই অরূপবাবুকে খুন করার পরিকল্পনা করছিল। আলাপ জমানোর জন্য সম্প্রতি ওই তরুণীকে অরূপের ফোন নম্বর দেয় পরিতোষ। সেই সূত্রে পরিতোষকে অরূপের সমস্ত খবর দিত পায়েল। মঙ্গলবার কয়েক জন বন্ধু নিয়ে অরূপ তরাপীঠে আসছে সেই খবর দিয়েছিল পায়েলই। সেই মতো রাজেশকে ঠিক করে রেখেছিল পরিতোষ। অরূপ পাড়ার চার ছেলেকে নিয়ে স্থানীয় বুবাই সরকারের গাড়িতে তারাপীঠে আসে। সঙ্গে বুবাইও ছিল। বহরমপুর থেকে ওই গাড়িতে ওঠে পায়েল। তার পরে সন্ধ্যায় তারাপীঠে দ্বারকা সেতুর উপরে খুনের ঘটনা ঘটে। বুবাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকায় পুলিশ অবশ্য তাকে গ্রেফতার করেনি।
গৌতমবাবু বলেন, “পরীর উপরে হামলার ঘটনায় আমাদের ফাঁসানো হয়েছিল। এবার তারই জেরে আমার ছেলেক খুন করল। এর মধ্যে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।” ওই খুনের ঘটনায় পরী দত্ত ও দেবানন্দ শর্মার নাম একই সঙ্গে জুড়ে যাওয়ায় কিছুটা হলেও অবাক জেলার পুলিশ কর্তারা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.