|
|
|
|
সরব সিপিএম |
জ্ঞানেশ্বরী ঘটিয়েছিল মাওবাদীরাই: মুখ্যমন্ত্রী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
জ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ডে কারা দায়ী, সেই বিতর্কে ফের উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি।
বিতর্কের সূত্রপাত স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যকে ঘিরে। গাঁধীমূর্তির পাদদেশে বুধবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা মাওবাদীরাই ঘটিয়েছিল। কলকাতা-সহ ৮১টি পুরসভার ভোটের ঠিক আগে ২৮ মে, ২০১০ (মমতা তখন রেলমন্ত্রী) পশ্চিম মেদিনীপুরের সরডিহার কাছে লাইনচ্যুত জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসকে উল্টো দিক থেকে আসা একটি মালগাড়ি ধাক্কা মারলে ১৬০ জনেরও বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছিল। ‘মমতাপন্থী’ বিশিষ্ট জনেরা তখন অভিযোগ করেছিলেন, পুরভোটের আগে সিপিএমের ‘অন্তর্ঘাতে’র ফলেই জ্ঞানেশ্বরী লাইনচ্যুত হয়েছে। পরবর্তী কালে তৃণমূলও বারেবারেই ওই ঘটনার জন্য সিপিএমের দিকে আঙুল তুলেছে। রেলমন্ত্রী মমতার আমলের ওই ঘটনার জন্য এখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা মাওবাদীদের দায়ী করায় প্রত্যাশিত ভাবেই সিপিএম তাঁর ‘অবস্থান বদল’কে আক্রমণ করেছে। দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট থেকে শুরু করে রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু এবং বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, সকলেই এই নিয়ে সরব হয়েছেন।
ঘটনাপ্রবাহ দেখে মমতাও একটি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে তাঁর মন্তব্যের ‘ব্যাখ্যা’ দিয়ে বলেছেন, বিশিষ্টদের যে ‘সন্দেহ’ হয়েছিল, তা তাঁর মনেও আছে। গ্রামের মানুষের কাছে তিনি শুনেছিলেন যে, যৌথ ভাবে চক্রান্ত হয়েছিল। মাওবাদীদের দিয়ে ওটা করানো হয়েছে। তবে তাঁর কাছে এখনও ওই মর্মে কোনও ‘তথ্যপ্রমাণ’ নেই বলেই সেই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারছেন না। জ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ডে বিচার প্রক্রিয়া চলছে। তার দিকে নজর রাখার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। কারা মাওবাদীদের দিয়ে জ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ড ঘটিয়েছিল, সেই প্রশ্ন তুলে সিপিএমের দিকে ইঙ্গিতও করেন।
এ দিন দুপুরে মেয়ো রোডে পুরুলিয়ায় মাওবাদীদের হাতে নিহত দুই তৃণমূল কর্মীর মরদেহে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে মমতা বলেন, “জ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ডে মাওবাদীদের হাতে ১৬০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলেন। দুর্ঘটনা ঘটিয়ে যে এরা ১৬০ জনেরও বেশি লোককে মেরে ফেলেছিল, আজ প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে সে সত্য।”
সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিক্রিয়া শুরু হয় বাম শিবিরে। পুরভোটের ঠিক আগের দিন প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে (যে সম্মেলন শেষ পর্যন্ত ভণ্ডুল হয়ে গিয়েছিল) যাঁরা জ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ডের জন্য সিপিএম-কে দায়ী করেছিলেন, সেই শুভাপ্রসন্ন, যোগেন চৌধুরী, সমীর আইচের মতো বিশিষ্টদের একাংশ এ দিন ব্যাখ্যা দেন, সেই সময়ে ওই ঘটনা থেকে যে ‘যুক্তিযুক্ত’ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব ছিল, তা-ই তাঁরা করেছিলেন।
পরে প্রশ্নের উত্তরে অনেকটা বিশিষ্টদের এই ‘ব্যাখ্যা’ই মমতা নিজেও পেশ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “সিবিআই-কে এই দুর্ঘটনার তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছিল। তদন্তকারী অফিসারেরা প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট ও চার্জশিট আদালতে জমা দিয়েছেন। তাতে প্রমাণিত, মাওবাদীরা এই ঘটনায় জড়িত ছিল। চার্জশিটে মাওবাদীদের কথা উল্লেখ করা রয়েছে।” তাঁর আরও বক্তব্য, “বিষয়টি বিচারাধীন। এর মধ্যে আর কারও চক্রান্ত রয়েছে কি না, তা তো আদালতে মামলার শুনানির সময় জানা যাবে। তবে রাজ্যের নাগরিক হিসেবে আমার মনে আরও কিছু সন্দেহ রয়েছে।” একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “মাওবাদীরা যে ওই ঘটনায় জড়িত ছিল, এটা তদন্তকারী দল প্রমাণ করেছে। আমি প্রমাণ করিনি!”
রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সিপিএম অবশ্য দাবি করেছে, মুখ্যমন্ত্রীকে ‘প্রকাশ্যে ক্ষমা’ চাইতে হবে। বিরোধী দলনেতা সূযর্বাবুর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী ভুল বুঝতে পেরেছেন, বলব না। বলব, তিনি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে, জ্ঞানেশ্বরীর ঘটনা মাওবাদীদের জন্য হয়েছিল। বাধ্য হয়েছেন এই কারণে যে, তাঁর রাজ্য পুলিশই ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত এক জনকে (জনগণের কমিটির নেতা অসিত মাহাতো) গ্রেফতার করেছে। দেরিতে হলেও মুখ্যমন্ত্রী বাধ্য হয়েছেন সত্য স্বীকার করতে!” একই সঙ্গে সূর্যবাবুর কটাক্ষ, “তবে মাওবাদী সমস্যা সমাধানে মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছা আছে, তা বলতে পারছি না। তা থাকলে আগে যা বলেছিলেন, সিপিএম করেছে বলে যে মিথ্যা প্রচার অভিযান চালানো হয়েছিল, সে সবের জন্য ওঁর প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত!”
একই ভাবে আলিমুদ্দিনে বিমানবাবু বলেন, সিপিএমের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে মমতা ‘নির্বাচনী বৈতরণী’ পার হয়ে গিয়েছেন এবং এখন মুখ্যমন্ত্রী হয়ে অন্য কথা বলছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক কারাট অবশ্য এ দিন কলকাতায় বলেছেন, “আমরা জানি, মাওবাদীদের প্রতি নির্দিষ্ট একটি অবস্থান (কিছুটা নরম, এই অর্থে) ছিল তৃণমূলের। তারা এখন সরকারে এসেছে। যদি মাওবাদী সম্পর্কে তাদের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে থাকে, তা হলে তাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।” |
|
|
|
|
|