দু’মাসেই অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরার পথে ধোনিরা
ঠিক দু’মাসের ব্যবধান। ১৬ সেপ্টেম্বর কার্ডিফে ইংল্যান্ড সফর শেষ করে উঠলেন ধোনিরা। এই ওয়ান ডে-টাও তাঁরা হারলেন। ডাকওয়ার্থ-লুইস প্রক্রিয়ায় ছয় উইকেটে। সফরের স্কোরকার্ড লেখা হয়ে গিয়েছে ০-৮। বিপর্যস্ত টিম। বিপর্যস্ত অধিনায়ক।
১৬ নভেম্বর, ২০১১। সচিন তেন্ডুলকরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাইশ বছর পূর্তির কাছে এই দু’মাস পূর্তিটা কোনও উপলক্ষই নয়। কেউ হয়তো খেয়ালই করেনি। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটের চড়াই-উতরাইতে অবশ্যই স্থান করে নেওয়ার মতো ছবি যে, কত দ্রুত পাল্টে গিয়েছে সেই টিমের চার পাশের আবহ। অধিনায়ককে ঘিরে থাকা পরিমণ্ডল।
সে দিনের আক্রান্ত ধোনি আজ আবার আরাধ্য অধিনায়ক। ইডেনে শুধু নিজে সেঞ্চুরিই করেননি, শ্বশুরবাড়ির শহরে সিরিজ জয়ও নিশ্চিত করে ফেলেছেন। মাত্র দু’মাসে নিজের ক্রিকেট-পৃথিবী ফিরে পেয়ে কেমন লাগছে? মাঠ থেকে ফিরে হোটেলে ঢোকা ধোনি মজা করে বললেন, “আমার মনে হচ্ছে রিটায়ার করে ফেলি। এটাই তো সবথেকে ভাল সময়।” ইডেনে যে তাঁর ব্যাটিং গড় ১৮০-র উপর জানতেন না ভারত অধিনায়ক। শুনে যেন আরওই জোর পেয়ে গেলেন। “তা হলে? দেখেছেন তো এটাই রিটায়ার করার আদর্শ সময়।”
আলোয় ফেরানোর হাসি। বুধবার ইডেনে প্রজ্ঞান।
কার্ডিফে ম্যাচ হারা অধিনায়ককে এ রকম মুডে পাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই ছিল না। আজকের এই হাসিখুশি, ফুরফুরে মেজাজের পাশে ১৬ সেপ্টেম্বর রাতের ছবি রাখলে মনে হবে, যে কোনও একটা ঘটেনি। হয় ১৬ সেপ্টেম্বর ঘটেনি। নয়তো ১৬ নভেম্বর। যে কোনও একটা কল্পকাহিনি। তখন এমনকী ধোনির নেতৃত্ব-সংশয় তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আর আজ? জাতীয় নির্বাচকেরা যে ইডেন টেস্টের পর পর তৃতীয় টেস্টের দল নির্বাচনে বসছেন সেটা নিয়ে একমাত্র আকর্ষণের বিষয় যুবরাজ সিংহ। অধিনায়ককে নিয়ে প্রশ্ন ওঠা-উঠির সামান্য দৃশ্যপটও নেই।
আর শুধু কি ধোনি? সচিন তেন্ডুলকর কলকাতার শিল্পপতির দেওয়া পার্টিতে বেরিয়ে যাচ্ছেন গৌতম গম্ভীরকে নিয়ে। বীরেন্দ্র সহবাগ বেরিয়ে পড়ছেন ভিভিএস লক্ষ্মণকে নিয়ে। বলছেন, “চলো, একটা ভাল রেস্তোরাঁ আবিষ্কার করেছি। ডিনার করতে যাব।” দু’মাস আগে এঁরাও তো আক্রান্ত হয়েছিলেন। রাহুল দ্রাবিড় একমাত্র ব্যতিক্রম। সে দিনও বন্দিত হচ্ছিলেন। আজও হচ্ছেন। হোটেলের লবিতে তাঁকে ঘিরে ধরছে ক্রিকেটভক্তরা। অটোগ্রাফ নেবে বলে। ছবি তুলে রাখবে বলে।কোটলা থেকে ইডেন টেস্টে নিজের অপরিহার্যতা বোঝাতে ব্যর্থ যুবরাজ। নির্বাচনী বৈঠকে তাঁকে নিয়েই শুধু কথা উঠতে যাচ্ছে যে, আর একটা সুযোগ দেওয়া হবে? নাকি বিরাট কোহলিকে প্রথম এগারোয় আনার এটাই সঠিক সময়? কিন্তু নির্বাচকেরা কি খবর রাখেন, যুবরাজকে নিয়ে যদি শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ উঠে থাকে, তবে কোহলিকে নিয়ে এখনও উঠছে। এমনকী কলকাতাতেও তাঁর বিরুদ্ধে রিপোর্ট পুরো পরিষ্কার নয়।
রবিচন্দ্রন অশ্বিন এবং প্রজ্ঞান ওঝার স্পিন-রথ চালু থাকায় হরভজনের অপেক্ষা বাড়ছে। এমনিতে তৃতীয় টেস্টের দল নির্বাচনটা বিরাট কোনও ব্যাপার হতে যাচ্ছে না। দুই নির্বাচক মোহিন্দর অমরনাথ এবং সুরেন্দ্র ভাবের আসার কথা ছিল বুধবার রাতে। তাঁরা কলকাতায় আসা বাতিল করে দিলেন। বরং জমাটি হতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া সফরের দল নির্বাচন। সেখানে হরভজনকে ফেরানো হবে কি না সেটাই দেখার।
নাগালে সচিন। তাই কাজের ফাঁকে সই শিকার র্যাফ জওয়ানের।
আর দু’মাস আগে যিনি ছিলেন ০-৮ হেরে আসা অধিনায়ক তিনি এখন ৮-০ করার দিকে এগোচ্ছেন। ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে এক দিনের সিরিজে ৫-০ হারিয়েছেন। আর এ যা ওয়েস্ট ইন্ডিজ টিম, ৩-০ টেস্ট সিরিজ না জিতলেই অঘটন হবে। ইডেনে ২-০ করে ফেলার মণ্ডপসজ্জা তৈরি। নিজেরা ৬৩১-৭ তুলে ডিক্লেয়ার করে দেওয়ার পর এ দিন মাত্র ১৫৩ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংস সাবাড় করে দিলেন ধোনির বোলাররা।
কী রকম খেলল ওয়েস্ট ইন্ডিজ? একটা হিসেবই যথেষ্ট। তাদের প্রথম ইনিংস স্থায়ী হয়েছে মাত্র ৪৮ ওভার। আর ভারতীয় ইনিংসে দেবেন্দ্র বিশুই বল করেছেন ৪৫ ওভার। সকালে সদ্য বিবাহিত অশ্বিনই প্রতিপক্ষের ঘাড় মটকে দিলেন। যখন মাত্র ৪ রানে তিনি এলবিডব্লিউ করে দিলেন শিবনারায়ণ চন্দ্রপলকে। রিকি পন্টিং ছাড়া অস্ট্রেলিয়া চলতে পারে। মাইকেল ক্লার্ক আছেন। সচিন তেন্ডুলকর ছাড়া ভারত চলতে পারে। রাহুল দ্রাবিড় আছেন। ভিভিএস লক্ষ্মণ আছেন। বীরেন্দ্র সহবাগ আছেন। কিন্তু চন্দ্রপলকে ছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট চলার রাস্তা নেই। হরভজনের জন্য এর পর আতঙ্কের ছবি তৈরি করে রাখলেন দুই ভারতীয় স্পিনার। প্রজ্ঞান ওঝা নিলেন চার উইকেট। অশ্বিন দুই।
ফলো অন করে দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে স্পিনের বিরুদ্ধে এই কাঁপাকাপিটা দেখাননি ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানরা। তখন বেশি ভয়ঙ্কর দেখাল উমেশ যাদবকে। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্র্যাক্টিসে সচিনের মাথায় মেরেছিলেন। নিয়মিত ভাবে ঘণ্টায় একশো চল্লিশ কিলোমিটারের উপর গতিবেগে বল করে যাচ্ছেন। বহু দিন পর এ রকম এক জন গতিসম্পন্ন ফাস্ট বোলার দেখে ভারতীয় ক্রিকেটমহল উত্তেজিত। সঞ্জয় মঞ্জরেকর সমানে টুইট করে যাচ্ছেন। ধোনি পর্যন্ত মানছেন, ধারাবাহিক ভাবে ভাল পেসে বল করে যাচ্ছে যাদব।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ টিমেও যে তরুণ প্রতিভা নেই, তা নয়। আদ্রিয়ান বারাথকে স্বীকৃতি দিয়ে গিয়েছেন স্বয়ং ব্রায়ান লারা। বলেছিলেন, আমি চলে যাচ্ছি। কিন্তু এই ছেলেটা থাকল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। এ হেন বারাথ দ্বিতীয় ইনিংসে ৬২ করে গেলেন। কিন্তু ৬২-তে আর কী করে ব্রায়ান লারার মুখরক্ষা করবেন তিনি? আর এক জন ডারেন ব্র্যাভো। লারার সঙ্গে অসম্ভব মিল। হাঁটাচলায়। স্টান্সে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। লারার মতো রান-মেশিন হওয়ার কোনও চিহ্ন নেই। সেই মনোমোহিনী আকর্ষণ তো দূর অস্ত্। না হলে এ দিন যা দর্শক ছিল, বৃহস্পতিবার থেকে সল্ট লেকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে ‘দাদা’-কে দেখতে মনে হয় তার চেয়ে বেশি ভিড় হবে। লারা ইডেনে ব্যাট করলে এ রকম ফাঁকা থাকত?
যাই হোক, হিসেবটা হচ্ছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংসে অনেক উন্নতি ঘটিয়ে ১৯৫-৩ তুলেও ২৮৩ রানে পিছিয়ে। একমাত্র ভয়ের কারণ হচ্ছে চন্দ্রপল এখনও আছেন। কিন্তু তাতেও চতুর্থ দিন পেরিয়ে পঞ্চম দিন পর্যন্ত ম্যাচ যাচ্ছে, এমন আশাবাদীর দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। ভারতীয় শিবিরেও এমন কারও দেখা পাওয়া যাচ্ছে না, যিনি এই আতঙ্ক দেখছেন। বরং হোটেলে দেখলাম, ম্যাচ বৃহস্পতিবার শেষ করে বাড়ি যাওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে।

প্রথম ইনিংস
ভারত: ৬৩১-৭ ডিঃ
ওয়েস্ট ইন্ডিজ (আগের দিন ৩৪-২)
কার্ক এডওয়ার্ডস এলবিডব্লিউ প্রজ্ঞান ১৬
ব্র্যাভো বো উমেশ ৩০
চন্দ্রপল এলবিডব্লিউ অশ্বিন ৪
স্যামুয়েলস বো উমেশ ২৫
বাও এলবিডব্লিউ প্রজ্ঞান ১৩
স্যামি ক ধোনি বো প্রজ্ঞান ১৮
রোচ রান আউট ২
ফিডেল এডওয়ার্ডস এলবিডব্লিউ প্রজ্ঞান ১৬
বিশু নঃআঃ ৮
অতিরিক্ত
মোট ১৫৩।
পতন: ৩, ৩০, ৪২, ৪৬, ৯২, ৯৯, ১২০, ১২৯, ১২৯।
বোলিং: প্রজ্ঞান ২২-৫-৬৪-৪, উমেশ ৭-১-২৩-৩,
অশ্বিন ১৪-৩-৪৯-২, ইশান্ত ৫-২-১৪-০।
দ্বিতীয় ইনিংস
ওয়েস্ট ইন্ডিজ
বারাথ ক লক্ষ্মণ বো ইশান্ত ৬২
ব্রাথওয়েট ক ধোনি বো উমেশ ৯
কার্ক এডওয়ার্ডস এলবিডব্লিউ ইশান্ত ৬০
ব্র্যাভো ব্যাটিং ৩৮
চন্দ্রপল ব্যাটিং ২১
অতিরিক্ত
মোট ১৯৫-৩।
পতন: ২৩, ১১৬, ১৬১।
বোলিং: উমেশ ১০-১-৩৬-১, ইশান্ত ১৪-৩-৪১-২, প্রজ্ঞান ১১-৩-৩৭-০,
অশ্বিন ২০-১-৫১-০, যুবরাজ ৩-০-১৪-০, সহবাগ ৪-০-১২-০।
ছবি: উৎপল সরকার।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.