|
|
|
|
মমতার ফুল, সোনালির সুর, জমজমাট বিধানসভা |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
জ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ড এবং মাওবাদীদের ‘মদত’ দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে যে দিন প্রবল চাপানউতোর রাজ্যের দুই যুযুধান রাজনৈতিক শিবিরে, সে দিনই ‘সৌজন্যে’র নজির দেখল বিধানসভা। মুখ্য ভূমিকায় ফের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিধায়ক হিসাবে বুধবারই শপথ নিলেন মমতা। সঙ্গে বসিরহাট (উত্তর) কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জয়ী তৃণমূলেরই এ টি এম (রনি) আবদুল্লা। দীর্ঘ সংসদীয় রাজনীতির জীবনে এই প্রথম বার বিধায়ক হয়েছেন মমতা। তার উপরে মুখ্যমন্ত্রী। স্বভাবতই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান ঘিরে সরগরম ছিল বিধানসভা। কিন্তু নেহাতই সাংবিধানিক কর্তব্য পালনের ‘আনুষ্ঠানিকতা’ ছাপিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিলেন তিনি নিজেই। বিধানসভার নৌসর আলি কক্ষে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বিধায়ক মমতাকে শপথ পাঠ করানোর পরে প্রথা মেনে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে পুষ্পস্তবক তুলে দিলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। ‘প্রথা’র বাইরে গিয়ে মমতা সেই পুষ্পস্তবকটিই সূর্যবাবুকে পাশে ডেকে তাঁর হাতে তুলে দিলেন! বললেন, “ভাল থাকবেন!” মঞ্চের অদূরে সামনের সারিতে ছিলেন আরও দুই প্রাক্তন মন্ত্রী সিপিএমের আনিসুর রহমান ও ডিএসপি-র প্রবোধ সিংহ। তাঁদের দু’জনকেও ডেকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। বাম বিধায়কেরা স্বভাবতই অভিভূত।
সচরাচর বিধায়কদের শপথ পাঠ করানো হয় একসঙ্গে লাইন দিয়ে, মামুলি ভঙ্গিতে। সেই দিক থেকে বসিরহাটের রনি ‘ভাগ্যবান’! মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে শপথ নিয়েছেন বলে তিনিও আলাদা ‘খাতির’ পেয়েছেন! ঘনিষ্ঠ মহলে সে কথা অস্বীকারও করেননি রনি। শপথ গ্রহণের পরেই ডেপুটি স্পিকার সোনালি গুহ বসিরহাট উত্তরের বিধায়কের হাতে পুষ্পস্তবক তুলে দিয়েছেন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন দুই মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং সুব্রত বক্সী। প্রসঙ্গত মমতা বিধায়ক হিসাবে শপথ নেওয়ার পরে স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূল পরিষদীয় দলনেত্রী তথা বিধানসভায় সরকারি পক্ষের নেত্রীর ‘দায়িত্ব’ পার্থবাবুর কাছ থেকে তাঁর হাতে চলে এল। পার্থবাবু এ দিন বলেছেন, “বিরোধী দল হিসাবে আমরা যে অসৌজন্য পেয়েছিলাম, মুখ্যমন্ত্রী সেই পথে না-গিয়ে সৌজন্য দেখাতে চান। সবাইকে নিয়ে চলতে চান।” |
|
শুভেচ্ছা: বিধায়ক পদে বুধবার শপথ নিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার সঙ্গে। ছবি: সুদীপ আচার্য |
শপথ অনুষ্ঠানের জন্য আলাদা করে আমন্ত্রণপত্র ছাপানো হয়নি। সব পরিষদীয় দলের কাছেই বিধানসভার সচিবালয়ের তরফে নোটিস পাঠানো হয়েছিল। আমন্ত্রণের ‘আনুষ্ঠানিকতা’ নিয়ে সূর্যবাবুরা অবশ্য কোনও প্রশ্ন তোলেননি। পাল্টা ‘সৌজন্য’ দেখিয়ে তাঁরাও অনুষ্ঠানের পরে বিধানসভার লবিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মিষ্টিমুখ করেছেন। শপথ অনুষ্ঠানের পরে স্পিকারের ঘরে বিধানসভার ‘এনটাইটেলমেন্ট’ কমিটির বৈঠক ছিল। কমিটিতে বিরোধী বাম শিবিরের নেতারা আগেই হাজির হয়েছিলেন। পরে বৈঠকে আসেন মুখ্যমন্ত্রীও। এসে ডেপুটি স্পিকারকে বলেন একটা গান গাইতে। ডেপুটি স্পিকার গেয়ে শোনান, ‘আমি অন্ধকারের যাত্রী, প্রভু আলোর দৃষ্টি দাও!’ কমিটির বাকি সদস্যদের অধিকাংশই বর্তমান বা প্রাক্তন মন্ত্রী। রুদ্ধবাক হয়েই তাঁরা সঙ্গীত ‘উপভোগ’ করেন! এ দিন ময়দানে গাঁধীমূর্তির পাদদেশে দুই তৃণমূল কর্মীর মরদেহে মালা দেওয়ার অনুষ্ঠানেও
গানে গলা মেলাতে দেখা গিয়েছিল মন্ত্রীদের। যা নিয়ে বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু বলেন, “মৃত্যু খুব দুঃখজনক।
কিন্তু কোথাও মৃত্যু হলেই মরদেহ কলকাতায় নিয়ে আসাটা খুব মানবিক বলে মনে হয় না। এটা পুনর্বিবেচনা করা হোক।”
গান শোনার পরে মূল্যসূচকের পরিবর্তন অনুযায়ী বিধায়কদের ভাতা বাড়ানো, এর আগে বৈঠকে যোগদানের ভাতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়ে অর্ডিন্যান্স আনা, ল্যাপটপ বা আইপ্যাড কেনার জন্য বিধায়কদের ৫০ হাজার করে টাকা দেওয়া, বাম পরিষদীয় দলের ঘরে সংবাদপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা এই সব প্রশ্ন নিয়ে বাকি বৈঠকে আলোচনা হয়। বিরোধী দলনেতা থাকাকালীন পার্থবাবু তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতার কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন, কিড স্ট্রিটে বিধায়ক আবাসে রেলের একটি বুকিং কাউন্টার খোলা হোক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা এ দিন বৈঠকে জানান, ওই প্রস্তাব বিবেচনা করার জন্য রেলকে আর্জি জানানো হবে। রেলের অফিসারদের একটি প্রতিনিধিদল আজ, বৃহস্পতিবারই কিড স্ট্রিটে পরিদর্শনে যাবেন। |
|
|
|
|
|