পেনশনে বিদেশি
লগ্নিতে সায় কেন্দ্রের
র্থিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি কার্যকর করার পথে আরও এক ধাপ। অবশেষে পেনশন তহবিল পরিচালনাকারী সংস্থায় ২৬ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন করল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। এর পর আগামী ২২ নভেম্বর থেকে শুরু সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে এই পেনশন সংস্কার (পিএফআরডিএ) বিলটি পেশ করা হবে। সেখানে পাশ হয়ে তা আইনে পরিণত হলে দেশের বিভিন্ন পেনশন তহবিল পরিচালনাকারী সংস্থায় ২৬ শতাংশ পর্যন্ত মালিকানা হাতে নিতে পারবে বিদেশি সংস্থাগুলি।
বিমা শিল্পে বিদেশি লগ্নির দরজা খুলে দেওয়ার পর থেকেই পেনশন তহবিল-সহ সমগ্র আর্থিক ক্ষেত্রের সংস্কারে বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানানোর কথা বারবারই বলে এসেছে কেন্দ্র। কিন্তু গত ছ’বছর ধরে (সংসদে প্রথম এই সংক্রান্ত বিল পেশ হয় ২০০৫ সালে) মূলত বামেদের বিরোধিতার জেরে সেই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়নি। তাই এ বার মন্ত্রিসভায় এই প্রস্তাব পাশ হওয়া আর্থিক সংস্কারের অন্যতম বড় মাইলফলক বলে অনেকের ধারণা।
প্রত্যাশিত ভাবেই এ দিনও পেনশন ক্ষেত্র সংস্কারের এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছেন বামেরা। বিজেপি অবশ্য নীতিগত ভাবে সংস্কারের বিরোধী নয়। কিন্তু এ বিষয়ে যশবন্ত সিনহার নেতৃত্বাধীন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ না-মানায় কেন্দ্রের সমালোচনা করেছে তারা।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়েছিলেন যে, দেশের আর্থিক উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করতে কেন্দ্রকে এমন কিছু পদক্ষেপ করতে হবে, যা কারও কারও পছন্দ না-ও হতে পারে। তিনি এ কথা বলার দিন দুয়েকের মধ্যেই বুধবার দেশের পেনশন ক্ষেত্রের দরজা বিদেশি পুঁজির জন্য খুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।
কোথায় বদল
• তহবিল বাড়বে।
• পেনশন প্রকল্পে লগ্নির আয়ও আকর্ষণীয় হবে।
• বিমা শিল্পের মতো এখানেও প্রতিযোগিতা বাড়বে।
• ব্যবসার বহর বাড়বে শেয়ার বাজার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলির।
পেনশন তহবিল পরিচালনায় বিদেশি সংস্থা পা রাখলে কী সুবিধা হবে পেনশন প্রকল্প গ্রাহকদের?
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর ফলে ভারতের ‘লোভনীয়’ বাজারে পা রাখবে বিশ্বের অগ্রণী পেনশন তহবিল পরিচালনাকারী সংস্থাগুলি। তাদের ঝুলিতে শুধু লগ্নির অর্থই থাকবে না। সঙ্গে থাকবে ওই ধরনের তহবিলপরিচালনার বিশেষ দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার বিপুল সম্ভার। আসবেন দক্ষ তহবিল পরিচালকরা। যার ফলে, এই ক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন হবে তিনটি। এক, দ্রুত অনেকটাই বড় হবে তহবিলের আকার। ফলে পেনশন প্রকল্পে লগ্নি করে আরও আকর্ষণীয় অঙ্ক আয় করতে পারবেন গ্রাহকেরা। এর পরে লগ্নি সংক্রান্ত চালু বাধ্যবাধকতা যদি সরকার শিথিল করে, তা হলে ওই বিনিয়োগ অনেকটা ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।
দুই, সংস্থাগুলির মধ্যে গ্রাহক ধরার প্রতিযোগিতা বাড়বে। তার সূত্র ধরে বাজারে আসবে নিত্যনতুন প্রকল্প। ঠিক যেমনটা হয়েছে ব্যাঙ্ক ও বিমা শিল্পে।
আর তিন, ব্যবসার বহর বাড়বে শেয়ার বাজার ও মিউচুয়াল ফান্ডগুলির। কারণ, এর পর সরকারি বিধিনিষেধ কাটলে আয় বাড়াতে এই দুই ক্ষেত্রে আরও বেশি করে লগ্নি করবে পেনশন তহবিল পরিচালনাকারী সংস্থাগুলি।
সংস্কারের পথে এ দিন যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তার সুফল ঘরে তুলতে হলে অবশ্য তহবিলের টাকা বিনিয়োগের বিষয়ে অনেক বিধিনিষেধ সরিয়ে নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে। তাঁদের দাবি, এই সব বাধা না সরালে কঠিন হবে বিদেশি বিনিয়োগ টানা। সেই তিমিরে থাকবেন গ্রাহকরাও। এ প্রসঙ্গে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্তা বলেন, “এখন প্রভিডেন্ট ফান্ডের মতো পেনশন তহবিলের টাকা বিনিয়োগেও সরকারি নির্দেশিকা মানতে হয়। যেমন, তহবিলের সিংহভাগই লগ্নি করতে হয় সরকারি ঋণপত্র বা উঁচু রেটিংযুক্ত বন্ডে। শেয়ার বাজারে খাটানো যায় সামান্য অংশই।” ফলে আয়ও তুলনায় কম হয়। সে কথা জানিয়ে তাঁর বক্তব্য, “এই নিয়ম বদলানো জরুরি।” যদিও এর ফলে ঝুঁকি বাড়বে বলে অনেকের আশঙ্কা।
তবে ভবিষ্যতে সরকার যে পেনশন ক্ষেত্রে আরও সংস্কারের পথ খোলা রাখছে, অন্তত একটি ইঙ্গিতে তা স্পষ্ট। তা হল, এখনকার মতো ২৬ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি লগ্নিতে সায় দিলেও, ভবিষ্যতে এই ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোর পথ খোলা রেখেছে কেন্দ্র। যে কারণে, এ বিষয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ সত্ত্বেও বিলে ঊর্ধ্বসীমার কথা উল্লেখ করা হয়নি। যাতে আইন সংশোধনের পরিবর্তে স্রেফ বিশেষ সরকারি নির্দেশ (এগ্জিকিউটিভ অর্ডার) জারি করেই তা বাড়ানোর রাস্তা খোলা থাকে।
এই নিয়েই এ দিন কেন্দ্রের সমালোচনা করেছেন বিজেপি মুখপাত্র রাজীবপ্রতাপ রুডি। একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, সরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ডে যে হারে সুদ পাওয়া যায়, অন্তত সেই হারে গ্রাহকদের ন্যূনতম আয় সুনিশ্চিত করার সুপারিশ করেছিল কমিটি। কিন্তু বিলে তা অগ্রাহ্য করেছে কেন্দ্র। পেনশন প্রকল্প থেকে গ্রাহকদের বেরিয়ে আসার বিষয়টিকে কঠিন করা হয়েছে এই বিলে। অনেকে বলছেন, এ ক্ষেত্রেও কমিটির সুপারিশ মানেনি কেন্দ্র।
পেনশন ক্ষেত্র সংস্কারের এই উদ্যোগকে অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবেই সব থেকে চাঁছাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেছে বামেরা। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাট বলেন, “আমরা এর সম্পূর্ণ বিরোধিতা করব। এটা শ্রমিক শ্রেণির উপর আঘাত। তাঁদের সারা জীবনের সঞ্চয় দেশি-বিদেশি সাট্টাবাজদের হাতে তুলে দিচ্ছে সরকার।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.