চিলিকার নীল ঢেউয়ে ভেসে পৌঁছলাম মন্দিরে
চিলিকার নীল জলে পড়েছে আকাশের ছায়া।
মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেল বালিহাঁস। টুপটুপ ডুব দিচ্ছে পানকৌড়ি।
ভটভটিতে চড়ে দুলতে দুলতে চলছি কখনও শান্ত জলে, কখনও ঢেউ এর দোলায় ভেসে ভেসে। ঢেউ এক এক জায়গায় এতই ভীষণ যে মনে হচ্ছে, এই বুঝি ডুবল আমার সোনার তরী। আশপাশ দিয়ে রঙিন পাল তুলে চলেছে জেলে নৌকা। দূরে দূরে ছোট-বড় পাহাড় পা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চিলিকার নীল জলে। সে দিন মহাষষ্ঠী। শরতের আকাশ ঝলমল করছে।
ট্রেনে চড়ে সকাল বেলা নেমেছি ওড়িশার বালুগাঁও স্টেশনে। সেখান থেকে অটোয় পাঁচ কিমি দূরে বরকুল। চিলিকা হ্রদের ধারে ওড়িশা পর্যটন উন্নয়ন নিগমের (ওটিডিসি) অতিথিশালা ‘পান্থনিবাস’-এ ব্যাগপত্র রেখে সোজা হ্রদের ধারে। দরদাম করে শ’তিনেক টাকায় ভটভটি ভাড়া করেছি কালীযাই যাওয়ার জন্য। ওটিডিসি-র স্পিড বোট এবং শিকারাও মেলে। তবে দরটা একটু বেশি।
নীল জলে দুলতে দুলতেই এক সময় পৌঁছে গেলাম কালীযাই মন্দির। জলের মাঝে ছোট্ট একটা দ্বীপ, নারকেল গাছে ঘেরা। ওড়িশার বহু মন্দিরের চেনা শৈলীতেই হলুদ, সবুজ, নীল রঙ করা মন্দির। প্রবেশ দ্বারে বড়সড় একটা ঘোড়া। গর্ভগৃহে টিমটিম করে জ্বলা প্রদীপের আলোছায়ায় কালী ও যাই দেবীর মূর্তি দেখলে বেশ ভয়ই লাগে। কথিত আছে, মা লক্ষ্মীর দুই সহচরী জয়া ও বিজয়া এখানে যথাক্রমে কালী ও যাই নামে পূজিতা। বেরিয়ে এসে দাঁড়ালাম চাতালে। চারদিকে অথৈ জল যেন সমুদ্র। তার রং কোথাও নীল, কোথাও সবুজ, আবার কোথাও বা গেরুয়া। এখানে না এলে চিলিকার বিস্তৃতিটাই বোঝা যায় না।
দেশ তথা এশিয়ার বৃহত্তম, পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্ুদ্র সন্নিহিত উপহ্রদ। জল ঈষৎ লবণাক্ত। যার আয়তন গ্রীষ্মে ন’শো থেকে ভরা বর্ষায় প্রায় এগারোশো বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে বাড়া-কমা করে। গোটা ভারতীয় উপমহাদেশে পরিযায়ী পাখিদের বৃহত্তম শীতকালীন আশ্রয় চিলিকা। হ্রদের তিন দিকে ওড়িশার তিন জেলা পুরী, খুর্দা ও গঞ্জাম। জলে ভেসে থাকা ছোট ছোট দ্বীপগুলি তার প্রাণভ্রমরা। কী সুন্দর সুন্দর নাম তাদের হানিমুন, নগজকৃষ্ণপ্রাসাদ, রাজহংস, কালীযাই। এই সবে দ্বীপে ছড়ানো ১৩২টি গ্রামে প্রায় লাখখানেক পরিবার বাস করে। তারা মাছ ধরে, জাল বোনে, চিংড়ি চাষ করে। হ্রদ  ঘিরেই তাদের জীবনে সুখ-দুঃখ, আশা-ভরসা আবর্তিত হয়।
ছবি লেখক।
বালুগাঁওয়ে নেমে সোজাসুজি পৌঁছনো ছাড়াও চিলিকায় যাওয়া চলে পুরী বা গোপালপুর অন সি থেকেও। চিলিকা হ্রদ ঘিরে তিনটি মূল পর্যটন বিন্দু সাতপড়া, বরকুল ও রম্ভা। পুরী থেকে সবচেয়ে কাছে সাতপড়া। গোপালপুর থেকে কাছে রম্ভা। বরকুল এই দুয়ের মাঝে। যে কোনও দিক থেকেই যাওয়া চলে। থাকার ইচ্ছে না থাকলে দিনের দিন ঘুরে চলে আসাও যায়। পুরী থেকে বহু পর্যটক তা-ই যান। চিলিকায় গেলে মধ্যাহ্ন ভোজে বড় আকর্ষণ পেল্লায় সাইজের চিংড়ি বা কাঁকড়া। হ্রদের মাছও মেলে। আর বরকুলের আকর্ষণ কালীযাই মন্দির।
ফেরার সময় হল। ঝিরঝিরে হাওয়া বইছে। নোনা জলের ছিটে লাগছে চোখে-মুখে। আনমনে কেটে গিয়েছে সময়। শরতের বেলা শেষ হয়ে এল। সূর্য পাটে নেমেছে।
চিলিকার জলে আগুন লেগেছে। এ বার নোঙর তোলার পালা।

পুজো এক্সপ্রেস
আনন্দবাজার পত্রিকা,
এ ১০, ডক্টরস কলোনি, সিটি সেন্টার,
দুর্গাপুর - ৭১৩২১৬।

durgapuredit@abp.in
(লেখা নির্বাচনে সম্পাদকীয় বিভাগের বিবেচনাই চূড়ান্ত)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.