জঁ লুক গোদারের সাম্প্রতিক ছবিই হোক বা ভেনিসে সদ্য পুরস্কারজয়ী ‘ফাউস্ট’। কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে যে এই সব ছবি দেখানো সম্ভব হচ্ছে, তার পিছনে রয়েছে একটি বিশেষ প্রযুক্তি।
এই প্রথম কলকাতায় এল ডিসিপি (ডিজিটাল সিনেমা প্যাকেজিং) প্রোজেকশন ব্যবস্থা। এটি একটি আধুনিক ডিজিটাল পদ্ধতি। ভারতে এর আগে মুম্বই এবং গোয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এই পদ্ধতি ব্যবহার হয়েছে। আজ, বুধবার কলকাতায় এই প্রথম গোদারের ‘ফিল্ম সোশ্যালিজম’ দেখানো হবে ডিসিপি প্রযুক্তির সাহায্যে। উৎসবের সমাপ্তি-ছবি আলেকজান্দার সকুরভের ‘ফাউস্ট’ও ডিসিপি-তেই দেখা যাবে। ডিসিপি ছাড়া এই ছবিগুলো দেখানো সম্ভবই হত না। কারণ, এদের প্রিন্ট পাওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। ফিল্মোৎসবের প্রযুক্তিবিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক দেবানন্দ সেনগুপ্তের কথায়, “বলতে পারেন, ডিসিপি-র মধ্য দিয়ে আমরা লং প্লেয়িং ডিস্ক থেকে আইপডে পৌঁছলাম।” |
এ বারের উৎসব শুরু হয়েছিল একটি চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামকে ছবি দেখানোর উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছিলেন পরিচালক গৌতম ঘোষ এবং শব্দযন্ত্রী অনুপ মুখোপাধ্যায়। সেই চ্যালেঞ্জটা সসম্মানে উতরে যাওয়ার পরে এখন চলছে দ্বিতীয় পর্ব। ডিজিটাল পদ্ধতিতে উন্নত গুণমানে ছবি দেখানোর চ্যালেঞ্জ। এ বার আগের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক ছবি ডিজিবিটা, এইচডি ক্যাম, ব্লুরে-র মতো আধুনিক ফর্ম্যাটে দেখানো হচ্ছে। এই তালিকাতেই সর্বশেষ সংযোজন ডিসিপি। দেবানন্দ জানালেন, এই প্রযুক্তিতে ছবিটি হাতে আসে বিশেষ ধরনের হার্ডডিস্কে। ডিসিপি-তে ছবি দেখানোর জন্য আদর্শ হল, অত্যাধুনিক টু-কে প্রোজেক্টর। কলকাতায় প্রথম বার এই প্রোজেক্টর মুম্বই থেকে ভাড়া করে আনা হয়েছে। প্রযুক্তি বিষয়ক কমিটির চেয়ারপার্সন গৌতম বললেন, “কাজের ক্ষেত্রে যথেষ্ট স্বাধীনতা পেয়েছি। ডিসিপি আনা না গেলে গোদার বা সকুরভের ছবি দেখানো যেত না।” অনুপ বলছেন, “সরকার সর্বতো ভাবে সাহায্য করেছে। নইলে এটা হত না।”
পৃথিবীর বড় বড় উৎসবগুলিতে এখন ডিসিপি-রই রমরমা। গৌতম বললেন, “সাত বছর আগেই ভেনিসে দলাই লামাকে নিয়ে আমার ছবি ডিসিপি-তে দেখানো হয়েছিল। কিন্তু কলকাতায় ডিসিপি এই প্রথম এল। আসতেই হত। প্রিন্ট তো ক্রমশ অবলুপ্তির দিকেই এগোচ্ছে।” কেন? গৌতম এবং দেবানন্দ এক বাক্যে জানালেন, কারণটা মূলত আর্থিক। ক্যানবন্দি রিল আনা-নেওয়ার খরচ আর একটা ডিস্ক আনা-নেওয়ার খরচে স্বাভাবিক ভাবেই আকাশ-পাতাল তফাৎ। ছবি তৈরিতেও সেলুলয়েড অনেক ব্যয়বহুল। এখন তাই বহু পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবিও শু্যট করা হচ্ছে ডিজিটাল ক্যামেরায়। অথবা সেলুলয়েডে শু্যট করার পরে ‘রাশ’টা ডিজিটাল মাধ্যমে বদলে নেওয়া হচ্ছে। সম্পাদনা এবং শব্দ সংযোজনার কাজটা হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে। ছবি মুক্তির সময় কিছু সেলুলয়েড প্রিন্ট বাজারে ছাড়া হচ্ছে। বাদবাকি অধিকাংশ প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখানো হচ্ছে ডিজিটাল মাধ্যমে। গৌতম বললেন, “আমার ‘মনের মানুষ’ এখানে ৬২টা হলে মুক্তি পেয়েছিল। তার মধ্যে মাত্র ৬টা ছিল সেলুলয়েড প্রিন্ট। সর্বত্রই এক দশা। কলকাতার মতো উৎসবে টাটকা ছবি আনতে হলে প্রিন্টোর উপরে ভরসা করলে চলবে না।”
অর্থাৎ পৃথিবীর তাবড় উৎসবে এখন যে ধরনের ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে, সেই মাপকাঠিকেই ছোঁয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে কলকাতা। গৌতম বললেন, “প্রযুক্তি পরিকাঠামো আরও উন্নত করতে হবে। একটা ডিসিপি প্রোজেক্টর পাকাপাকি ভাবে আনানোর কথা ভাবছি আমরা।” |