জেলার ৯টি ব্লকের ২৫২টি মৌজার ৩ লক্ষাধিক মানুষ দু’মাস ধরে বন্যায় জলবন্দি ছিলেন। বন্যার জলে জেলার ১৯ হাজার হেক্টর জমির ২৭ কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছিল। বন্যার জলের তোড়ে বাঁধ ভেঙে ক্ষতি হয়েছে ২ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। বন্যার জলে প্রায় ৩০ হাজার মাটির বাড়ি ভেঙে যায়। জেলা প্রশাসন থেকে বন্যায় ক্ষতিপূরণের টাকা চেয়ে চিঠি পাঠানোর দু’মাস পরেও এখন পর্যন্ত রাজ্য সরকার ক্ষতিপূরণের টাকা না-পাঠানোয় ক্ষুব্ধ জেলার বাসিন্দারা। মালদহের জেলাশাসক অচর্না বলেন, “এ বছর বন্যায় জেলায় কৃষি, সেচ ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেই তালিকা অনেকদিন আগেই সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। এখনও কোনও টাকা পাইনি।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমন্ডলী সদস্য কৃষক সভার জেলা সম্পাদক বিশ্বনাথ ঘোষের অভিযোগ, রাজ্য সরকার মালদহের ওই ব্লকগুলিকে বন্যা কবলিত বলে ঘোষণা করেনি। কয়েক লক্ষ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, “বহু কৃষক মহাজনের থেকে সুদে টাকা ধার নিয়েছিলেন। বন্যার জলে জমির সমস্ত ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তাঁরা পথে বসেছেন। সরকার থেকে কিছু সাহায্য পেলে ওই কৃষকরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারতেন। মহাজনের টাকা মেটাতেই অনেকে ভিন রাজ্যে দিনমজুরির কাজে গিয়েছেন।” জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক দেবপ্রিয় সাহা বলেন, “বন্যায় ক্ষতিপূরণের টাকা না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। ক্ষতিপূরণের টাকা দ্রুত পাঠানোর জন্য কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানানো হবে। রাজ্য সরকার দ্রুত টাকা না-পাঠালে বানভাসিদের বিক্ষোভে জেলার আইনশৃঙ্খলা অবনতি হতে পারে। প্রশাসনকেই তার দায় নিতে হবে।” জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর বন্যায় জেলার রতুয়া-১, ২, হরিশ্চন্দ্রপুর-২, মানিকচক, কালিয়াচক-২ ও ৩ নম্বর ব্লক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জেলা কৃষি দফতরের উপ অধিকর্তা সজল ঘোষ বলেন, “বন্যায় ১৯ হাজার হেক্টর জমির আউস, পাট, আখ, সবজি, আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফসলের ক্ষতির রিপোর্ট জেলাশাসকের পাশাপাশি রাজ্যের কৃষি অধিকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।” জেলা সেচ দফতরের নিবার্হী বাস্তুকার সুব্রত মজুমদার বলেন, “বন্যায় গঙ্গার জলের তোড়ে ভুতনির বাঁধের তিন কিলোমিটার ভেঙে গিয়েছে। পঞ্চানন্দপুরের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। মহানন্দা বাঁধের ৪-৫ জায়গা বসে গিয়েছে। বামনগোলার বাঁশিপাড়ার কাছে পূণর্ভবার বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে বন্যায় বাঁধের ২ কোটি ৩০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। অক্টোবর মাসেই ওই টাকা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। একটি টাকাও পাইনি।” ডিসেম্বর মাসে কাজ শুরু করলে বাঁধের কাজ বর্ষার আগেই শেষ করা যাবে। না-হলে বর্ষায় পরিস্থিতি গুরুতর হবে বলে মনে করছেন জেলার সেচ কতার্রা।” |