টিকে থাকছেন বিমানও
দিল্লিতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তের ফলে পশ্চিমবঙ্গে দলের রাজ্য সম্পাদক পদে বিমান বসুর টিকে থাকা এক রকম নিশ্চিত হয়ে গেল।
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমের বিপর্যয়ের পর থেকে দলের রাজ্য সম্পাদক পদে বিমান বসুর মেয়াদ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। কারণ হারের পর্যালোচনায় সরকারের কাজ ও রাজনৈতিক লাইনের পাশাপাশি সাংগঠনিক ত্রুটিবিচ্যুতির দিকেও আঙুল উঠেছিল। স্বাভাবিক ভাবেই সংগঠনের প্রধান হিসেবে বিমান বসুর ব্যর্থতার দিকেই আঙুল ওঠে। পাশাপাশি রাজ্য সম্পাদক পদ থেকে বিমানকে সরানোর জন্য দলের অভ্যন্তরেও ‘অভিযান’ শুরু হয়েছিল। বিশেষত বিমানবাবুর বিভিন্ন বেফাঁস মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় তাঁর জায়গায় নতুন কাউকে রাজ্য সম্পাদক পদে তুলে আনার দাবি ক্রমশ জোরদার হতে থাকে। আসন্ন পার্টি কংগ্রেসকে সামনে রেখে জেলা সম্পাদকরাও সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন।
কিন্তু আজ কেন্দ্রীয় কমিটিতে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাতে বিমান বসুর ফের রাজ্য সম্পাদক পদে নির্বাচন সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ যে জেলা সম্পাদকরা বিমানবাবুর বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেরই অস্তিত্ব এখন সঙ্কটে পড়ে গিয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনা, কলকাতা, পশ্চিম মেদিনীপুর, নদিয়া, হুগলি, পুরুলিয়া থেকে শুরু করে দার্জিলিং পর্যন্ত অনেক জেলার সম্পাদকই তিন দফার বেশি ওই পদে রয়েছেন। পার্টি কংগ্রেসের প্রক্রিয়ায় জেলা সম্মেলনে এখন তাঁদের সরানোর দাবিই আগে উঠবে।
উল্টো দিকে বিমান বসুর সে দিক থেকে কোনও সঙ্কটই নেই। কারণ অনিল বিশ্বাসের মৃত্যুর পর ২০০৬-এর এপ্রিলে তিনি রাজ্য সম্পাদকের পদে বসেন। ২০০৮-এ পার্টি কংগ্রেসের আগে ফের ওই পদে নির্বাচিত হন। দলীয় সংবিধান সংশোধনী চূড়ান্ত হওয়ার পর যদি ঠিক হয়, ২০০৬ থেকে ২০০৮ সালের পার্টি কংগ্রেস পর্যন্ত সময়কে একটি পূর্ণ মেয়াদ হিসেবে ধরা হবে, তা হলেও বিমানবাবুর দু’টি মেয়াদ শেষ হচ্ছে। কাজেই আরও এক বার তাঁর রাজ্য সম্পাদকের পদে বসতে অসুবিধা নেই।
দলের রাজ্য সম্পাদক পদে নতুন কাউকে তুলে আনার জন্য বেশ কিছু দিন ধরেই সিপিএমের বিভিন্ন স্তরে দাবি উঠছিল। দাবি উঠেছিল, কখনও গৌতম দেবের নাম উঠেছে জোরালো ভাবে। আবার এমন যুক্তিও শোনা গিয়েছে, নিরুপম সেন রাজ্য সম্পাদক হিসেবে ভালই কাজ করবেন। শোনা গিয়েছে বর্ধমানের কৃষক নেতা মদন ঘোষের নামও। কিন্তু সিপিএমেরই একটা অংশ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারের শিল্পায়নে ব্যর্থতার জন্য নিরুপম সেনের ঘাড়ে দায় চাপাতে সক্রিয় হয়েছে। আবার বিধানসভা নির্বাচনের আগে গৌতম দেবের মমতা-বিরোধী চড়া সুরের প্রচারও যে ব্যর্থ হয়েছে, তা-ও দলের কাছে স্পষ্ট। ফলে অনেকটাই সমস্যামুক্ত ছিলেন বিমানবাবু। পাশাপাশি, শারীরিক অসুস্থতার জন্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পলিটব্যুরোর বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন না বলে সূর্যকান্ত মিশ্রকে পলিটব্যুরোতে নিয়ে আসার দাবি উঠলেও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু দলের কাছে মোটেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাননি। দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনেও বুদ্ধদেবই মূল দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁকে প্রচারেও নামানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে বুদ্ধদেব, বিমান দু’জনেই নিজ নিজ পদে থেকে যাবেন বলে ইঙ্গিত মিলছে।
লোকসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের পরে নির্বাচনী ফলাফল পর্যালোচনা করতে গিয়ে পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে রাজ্য নেতৃত্বের কার্যত ‘যুদ্ধ’ শুরু হয়েছিল। বিপর্যয়ের জন্য রাজ্য নেতাদের একটা বড় অংশই দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের দিকে আঙুল তোলেন। সে সময় তাঁকে পদ থেকে সরানোর দাবিও ওঠে। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে যে হেতু সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে রাজ্য নেতাদের ঘনিষ্ঠতা বেশি, তাই জাতীয় স্তরে ইয়েচুরিকে নিয়ে আসার দাবিও উঠতে থাকে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর থেকে রাজ্য কমিটির বৈঠকে নিয়মিত উপস্থিত থেকেছেন কারাট। দলের নেতাদের ক্ষোভ শুনেছেন, তাঁদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন, নিজের বক্তব্য স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্য নেতৃত্বের ক্ষোভ প্রশমিত করার সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু বিমান-বুদ্ধের বিরুদ্ধে জেলাওয়াড়ি বিদ্রোহকেও নিশ্চিহ্ন করতে সক্রিয় হয়েছেন কারাট।
তবে বিমান বসুকে নিয়ে দল কিছুটা বিড়ম্বনায় রয়েছে। তাঁর অসতর্ক মন্তব্য নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যেমন তাঁকে সতর্ক থাকতে বলেছে, তেমন বিমান বসু নিজেও ‘ব্যথিত’। প্রকাশ কারাটও বলেছেন, বিমানবাবু নিজেই যে হেতু দুঃখপ্রকাশ করেছেন, তাই দলের কাছে এই বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছে। দলের মধ্যে বিমান বসুকে যাঁরা জানেন, তাঁদের বক্তব্য, তিনি সাদামাটা মানুষ বলেই এমন ‘ভুল’ হয়ে যায়। কিন্তু বিমানবাবু পরিশ্রম করেন, পার্টি অফিসেই থাকেন। অনেক নেতারই বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী সমাজকে বিমানবাবু যে ভাবে হাতের তালুর মতো চেনেন, তা সত্যিই বিস্ময়কর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.