মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে ‘উৎসাহ’
তিন মাসে কাজ শেষ করাই চ্যালেঞ্জ, বলছেন ডিএম
মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পরে জেলায় প্রথমবার তিনি আসছেন। মুখোমুখি হতে হবে তাঁর। ফলে কিছুটা উৎকণ্ঠায় ছিলেন পুরুলিয়ার প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। মুখ্যমন্ত্রী কী বলবেন, কপালে সমালোচনা জুটবে কি না, ভাবনা ছিল সে-সব নিয়েও। কিন্তু শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহজ-সরল কথাবার্তায় নিমেষেই উধাও হয়ে গেল সব ‘অস্বস্তি’ বা ‘উদ্বেগ’। ব্লক, মহকুমা ও জেলা প্রশাসনের ছোট-বড়-মাঝারি অফিসারেরা মেনে নিচ্ছেন, দিনের শেষে তাঁরা পেলেন কাজ করার নতুন ‘উদ্যম’।
প্রশাসনের কাজকর্মে গতানুগতিকতার অচলায়তন ভেঙে সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুত কাজ করানোর মুখ্যমন্ত্রীর প্রয়াস যে ‘সফল’, তা স্পষ্ট জেলা প্রশাসনের কর্তা ও বিভিন্ন দফতরের পদস্থ আধিকারিকদের কথাতেই। পুরুলিয়ার জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর ওই বৈঠক আমাদের কাছে প্রেরণা। উনি নির্দিষ্ট কিছু কর্মসূচি ও দায়িত্ব আমাদের দিয়েছেন। বলেছেন, তিন মাস পরে আবার জেলায় আসবেন। ওই সময়ের মধ্যে কাজগুলি শেষ করাই এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ।”শুক্রবার পুরুলিয়ার সার্কিট হাউসে জেলার সমস্ত বিডিও, মহকুমাশাসক, প্রশাসনের পদস্থ কর্তা ও বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের আট ও কেন্দ্রের তিন মন্ত্রী, ১৮টি দফতরের সচিব। ছিলেন মুখ্যসচিব সমর ঘোষ। ওই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী যেমন এক দিকে সরকারি প্রকল্পগুলি রূপায়ণে জেলা প্রশাসন কী কাজ করছে, তা বিশদে জানতে চেয়েছেন, অন্য দিকে তেমনই রাজ্য প্রশাসনের ‘প্রধান’ হিসাবে আধিকারিকদের নিজের দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করেছেন।
অফিসারেরা যে উৎসাহিত হয়েছে, তা ছোট্ট উদাহরণেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। ওই বৈঠকের পরেই শনিবার ছুটির দিন হলেও দিনভর ব্লকে কাজ করে কেটেছে জয়পুর ব্লকের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বিডিও মেঘনা পালের। তিনি বলেন, “কিছু দিন আগেই কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি বৈঠক হয়েছিল আমাদের। তবে জেলায় এমন সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হওয়াটা সব সময়েই কাজে উৎসাহ জোগায়। মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে আমাদের উপরে আস্থা রেখেছেন, তা আমাদের কাজ করতে বাড়তি মনোবল জোগাবে।”
কাজের সময় বাড়ানোর যে নির্দেশ মমতা দিয়েছেন, তাকেও স্বাগত জানাচ্ছে প্রশাসনিক মহল। বৈঠক চলাকালীন মমতা বলেন, “আমি নিজে দিনে ১৭ ঘণ্টা কাজ করি। মুখ্যসচিব রবিরাবরও অফিস করেন। আপনারাই বা পারবেন না কেন?” অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) হৃষিকেশ মুদির কথায়, “এক সঙ্গে এত জনমন্ত্রী ও সচিবদের নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করছেন মুখ্যমন্ত্রী, এটা বিরল ঘটনা। মুখ্যমন্ত্রী কাজ করার ক্ষেত্রে যে উদাহরণ দিয়েছেন, তা অবশ্যই শিক্ষণীয়। যে ভাবে আন্তরিকতার সঙ্গে উনি আলোচনা করেছেন, উৎসাহ দিয়েছে আমাদের, তাতে কাজ করার মানসিকতা বাড়বে সবার।”
বস্তুত, পুরুলিয়া প্রত্যন্ত ও মাওবাদী প্রভাবিত হিসাবে পরিচিত হওয়ায় এখানে কাজ করার ক্ষেত্রে যে প্রশাসনিক আধিকারিকেরা ‘মানসিক চাপে’ থাকেন, সে বিষয়েও ওয়াকিবহাল মুখ্যমন্ত্রী। আর সেই চাপ কাটাতে তাঁর দাওয়াই, “মাওবাদীদের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই, মনে রাখবেন, পুরুলিয়া যেমন ‘চ্যালেঞ্জিং পোস্টিং’, তেমনই ‘প্রাইজ পোস্টিং’। এই প্রত্যন্ত এলাকায় যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের কাজের মূল্যায়ন করে প্রাপ্য পুরস্কার দেওয়া হবে।” এই প্রেক্ষিতেই দু’বছর ধরে জঙ্গলমহলের অন্যতম ব্লক বরাবাজারের দায়িত্ব সামলানো বিডিও দেবজিৎ বসু বলেন, “এই ব্লকে কাজ করার, উন্নয়ন করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তা ফের মনে করিয়ে দিলেন। শুক্রবারের বৈঠক আমাদের কাজে বাড়তি অনুপ্রেরণা ও উদ্যম জোগাবে।” আবার মুখ্যমন্ত্রী-সহ এত জন মন্ত্রী ও সচিবকে প্রথমবার সামনাসামনি পাওয়া সম্পূর্ণ ‘অন্য রকমের অভিজ্ঞতা’ বলে জানালেও জেলা খাদ্য নিয়ামক সুনয়কুমার গোস্বামীর আক্ষেপ, “আরও বেশি সময় পেলে ভাল হত। আমাদের সমস্যা ও কর্মসূচি নিয়ে কিছুটা বিশদে আলোচনা করা যেত।”
শুধু প্রশাসন নয়, মুখ্যমন্ত্রীর ‘আন্তরিকতা’ ছুঁয়ে গিয়েছে পুলিশকেও। শুক্রবার বিকেলে পুরুলিয়া ছেড়ে তাঁর কনভয় যখন বাঁকুড়ার দিকে যাচ্ছে, তখন বাঁকুড়া সীমান্তে মোতায়েন থাকা জেলা পুলিশের এক সাব-ইনস্পেক্টরকে গাড়ির কাছে ডেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের অভিনন্দন জানাই। খুব ভাল কাজ করেছেন। সাবধানে ফিরবেন।” ওই সাব-ইনস্পেক্টর বললেন, “খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আমাকে আমার কাজের জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছেন। সাবধানে ফিরতে বলছেন। ভাবা যায়? আমার চাকরিজীবনে এই ধরনের অভিজ্ঞতা আগে হয়নি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.