স্কুলের মাঠ থেকে উদ্ধার হল এক তৃণমূল কর্মীর দেহ। পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার সকালে গাইঘাটার সুটিয়ায় মেলা দেহটি কমলেশ ঘোষ (৩২) ওরফে কমলের। তিনি পেশায় অটোচালক। খুনের প্রতিবাদে এ দিন সকাল ৮টা
থেকে গোবরডাঙা-গোপালপুর সড়ক অবরোধ করেন অটোচালকেরা। পুলিশ দেহ উদ্ধার করতে গেলে বাধা দেওয়া হয়। ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়ে অবরোধ তোলে পুলিশ। এই খুনে ‘সিপিএম-আশ্রিত’ দুষ্কৃতীরা যুক্ত বলে অভিযোগ রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা গাইঘাটার প্রাক্তন বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের। অভিযোগ অস্বীকার করেছে সিপিএম। |
খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সত্যজিৎ বিশ্বাস নামে স্থানীয় এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য জানান, তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, কমলেশকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে।
সুটিয়া বাজারে বাড়ি কমলেশের। পুলিশ সূত্রের খবর, তদন্তে তারা জানতে পেরেছে, শনিবার রাতে কমলেশের বাড়িতে কেউ ছিলেন না। বছর আটেকের ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে কমলেশের স্ত্রী সুদীপ্তা শনিবারই গিয়েছিলেন স্বরূপনগরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ দুই যুবকের সঙ্গে মোটরবাইকে চড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন কমলেশ। এ দিন ভোর ৬টা নাগাদ কাছেই সুটিয়া বারাসত পল্লি উন্নয়ন বিদ্যাপীঠের মাঠে পড়ে থাকতে দেখা যায় তাঁর দেহ। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, নিহতের গলায় কালো দাগ ছিল। কমলেশের বাবা দুর্গাপদ ঘোষ খুনের অভিযোগ করেন থানায়। তবে নির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাননি। এ দিন নিহতের স্ত্রী সুদীপ্তা বলেন, “কারও সঙ্গে আমার স্বামীর শত্রুতা ছিল না। কারা ওঁকে মারল, তার বিচার চাই।”
|
কমলেশ ঘোষ। |
যদিও এ দিন কমলেশের বাড়িতে গিয়ে জ্যোতিপ্রিয়বাবু দাবি করেন, “কমলেশ দলের সক্রিয় কর্মী এবং শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। সিপিএম চক্রান্ত করে নিজেদের আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দিয়ে ওঁকে খুন করিয়েছে। আমি বিধায়ক থাকাকালীন এলাকায় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য কমেছিল। ইদানীং আবার শুরু হয়েছে।” জ্যোতিপ্রিয়বাবু ছাড়াও মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর এবং তৃণমূলের কয়েকজন নেতাও যান নিহতের বাড়িতে। ঘটনাটিকে ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেন মঞ্জুল। পক্ষান্তরে তৃণমূলের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন সিপিএমের গাইঘাটা পূর্ব লোকাল কমিটির সম্পাদক রমেন আঢ্য। তাঁর বক্তব্য, “যিনি মারা গিয়েছেন, তাঁর নামও জানি না। আমাদের দলের নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।”
কয়েক বছর আগে দুষ্কৃতীদের রমরমা ছিল সুটিয়ায়। একাধিক গণধর্ষণ, খুনের ঘটনা ঘটে। ইদানীং কয়েকজন দুষ্কৃতী জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ফের এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের। দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করতে এক সময়ে ওই এলাকায় তৈরি হয়েছিল ‘প্রতিবাদী মঞ্চ’। সেই মঞ্চের সভাপতি ননীগোপাল পোদ্দারও গুলিবিদ্ধ হন কয়েক মাস আগে। মঞ্চের সম্পাদক বরুণ বিশ্বাস বলেন, “মানুষ আতঙ্কিত। মস্তানদের তাণ্ডব ফের বাড়ছে। পুলিশ-প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি খারাপ হবে।”
|