সম্পাদকীয় ১...
পারিবার অভ্যাস
রকার কেন চলচ্চিত্র উৎসব করিবে? প্রশ্নটি বামফ্রন্ট সরকারের আমলেও সত্য ছিল, বর্তমান আমলেও সত্য। কারণ প্রশ্নটি নীতিগত। চলচ্চিত্র বিনোদনের একটি মাধ্যম। বস্তুত, গণ-বিনোদনের, সেই ‘গণ’র আকার এবং প্রকার যাহাই হউক না কেন। চলচ্চিত্র প্রাথমিক শিক্ষা বা জনস্বাস্থ্য নয়, আবার বিজ্ঞান বা দর্শনও নয়। শহরের উচ্চবর্গীয় বাঙালি আপন মনে চলচ্চিত্রকে উচ্চ সংস্কৃতির যে মহিমা দিয়া থাকে, তাহা বাঙালির ভ্রান্তিবিলাসের অন্যতম নমুনামাত্র। চলচ্চিত্র উৎসব হইতেই পারে। শারদোৎসব বা অন্য যে কোনও উৎসবের মতোই। কিন্তু জনসাধারণের প্রদত্ত রাজস্ব ব্যয় করিয়া, সরকারি যন্ত্র এবং যন্ত্রীদের কাজে লাগাইয়া সেই বিনোদন উৎসব করিবার কোনও সুযুক্তি নাই। সরকার তো দুর্গাপূজা করে না! এই সহজ সত্যটি বামফ্রন্ট সরকার উপলব্ধি করে নাই বা করিতে চাহে নাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজন করিয়া প্রমাণ করিলেন, পশ্চিমবঙ্গে ‘পরিবর্তন’ আসে নাই। ইহা অপ্রিয় সত্য।
এবং অর্ধসত্য। সত্যের অন্য অর্ধটি ইহাই যে, পরিবর্তন আসিয়াছে। বস্তুত, ২০১১ চলচ্চিত্র উৎসবই সেই পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত তথা প্রমাণ। কলিকাতাবাসী এত কাল যে চলচ্চিত্র উৎসব দেখিয়া আসিয়াছেন, এ বারের অনুষ্ঠান তাহা হইতে ভিন্ন গোত্রের। উৎসবের মাত্রাটি লক্ষণীয় ভাবে প্রসারিত হইয়াছে, নন্দন হইতে নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে স্থানান্তর যাহার তাৎপর্যপূর্ণ প্রতীক। গণ-বিনোদনের উপযোগী স্থান হিসাবে দুইয়ের মধ্যে কোনও তুলনাই চলে না। অনুষ্ঠানের মঞ্চে যাঁহারা ছিলেন এবং বিশিষ্ট অভ্যাগতদের মধ্যে যাঁহাদের দেখা গিয়াছে, তাঁহাদের পরিচয়ও সেই একই সত্য উদ্ভাসিত। একটি ক্ষুদ্র, পরিচিত এবং অভ্যস্ত বৃত্তের মধ্যে সীমিত না থাকিয়া এই উৎসব একটি বৃহত্তর দুনিয়াকে শরিক করিয়া লইয়াছে, যাহা এক অর্থে ক্ষুদ্র হইতে বৃহৎ-এর দিকে উত্তরণ। ক্ষুদ্র বাঙালি যদি বৃহৎ হইতে না পারে, তবে তাহার অবক্ষয় চলিতেই থাকিবে, যেমন দীর্ঘ কাল যাবৎ চলিয়াছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই এই উত্তরণ আশাব্যঞ্জক।
উত্তরণ ঘটিয়াছে অনুষ্ঠানের আয়োজনেও। পশ্চিমবঙ্গে, বিশেষত সরকারি উদ্যোগে ও ব্যবস্থাপনায়, একটি উচ্চ মানের অনুষ্ঠান দক্ষতার সহিত আয়োজিত হইতেছে, এই দৃশ্য দেখিতে নাগরিকরা একেবারেই অভ্যস্ত নহেন। মামুলি, তুচ্ছতাসর্বস্ব, বক্তৃতাময়, অবিন্যস্ত, অযথা বিলম্বিত আয়োজনেই তাঁহাদের অভ্যাস হইয়াছে, ভাবনার দারিদ্র এবং দক্ষতার দৈন্যকে ‘বুদ্ধিজীবী’র ঝোলা ব্যাগ দিয়া ঢাকিবার, বস্তুত তাহা লইয়া গর্বের ভান করিবার ছলনাকেই তাঁহারা সজ্ঞানে কিংবা অগত্যা মানিয়া লইয়াছেন। এই চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সেই ছলনা হইতে মুক্ত ছিল। এক দিকে সমগ্র আয়োজনের দায়িত্ব দক্ষ ব্যবস্থাপকদের উপর ছাড়িয়া দেওয়ার বিচক্ষণতা এবং অন্য দিকে বিভিন্ন মহলের রাজনৈতিক বা অন্যবিধ হস্তক্ষেপ হইতে আয়োজনটিকে মুক্ত রাখিবার সদিচ্ছা এই দুইয়ের সমন্বয়েই আয়োজন সুপরিকল্পিত এবং সুসম্পন্ন হইয়াছে। ইহা কেবল চলচ্চিত্র উৎসবের পক্ষে শুভ নহে, পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে শুভ। সাফল্য অপেক্ষা সফল আর কিছু হইতে পারে না। কলিকাতা চলচ্চিত্র উৎসব ২০১১ দেখাইয়া দিয়াছে, পশ্চিমবঙ্গও পারে। ইহাতে রাজ্যের দ্বিবিধ মঙ্গল হইতে পারে। এক, যদি পশ্চিমবঙ্গের প্রতি দেশ ও দুনিয়ার নষ্ট ভরসা অন্তত এক আনা ফিরিয়া আসিবে। দুই, যদি পশ্চিমবঙ্গ আপন অন্তর্হিত আত্মবিশ্বাস অন্তত দুই আনা ফিরিয়া পায়। যাহা হইয়াছে, তাহা সূচনামাত্র। কিন্তু আপাতত সূচনাটুকু ভরসার। আশা করা যায়, পশ্চিমবঙ্গ ক্রমশ না-পারা হইতে পারিবার দিকে যাইবে। এবং যাত্রাপথে সরকারি আয়োজনে ফিল্মোৎসবের মতো অপ্রয়োজনীয় ঐতিহ্যগুলিকেও বিসর্জন দিবে। শুভেচ্ছা রহিল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.