পূর্বতন সরকারি প্যানেলের আইনজীবীরা কেস ডায়েরি ফেরৎ না দেওয়ায় আলিপুর আদালতের কয়েক হাজার বিচার আটকে রয়েছে। সম্প্রতি আদালত সূত্রে এ কথা জানা গিয়েছে। এই সব মামলার অধিকাংশই খুন বা খুনের চেষ্টা, আত্মহত্যায় প্ররোচনা, সশস্ত্র ডাকাতি, ধর্ষণ, ছেলে বা মেয়ে অপহরণ, মেয়ে পাচারের মতো অপরাধের বলে খবর। পাবলিক প্রসিকিউটর অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকার বদলের আগে পূর্বতন সরকারি প্যানেলে যে-সব আইনজীবী ছিলেন তাঁদের অনেকের হাতে এখনও রয়ে গিয়েছে হাজার দেড়েক কেস ডায়েরি। এর বাইরে আরও হাজার খানেক কেস ডায়েরি রয়েছে, যেগুলি নিম্ন আদালতে নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু উচ্চ আদালতে আপিল করতে গেলে সেগুলির প্রয়োজন পড়বে বলে পিপি অফিসের দাবি। তাদের হিসেব অনুযায়ী, প্রায় আড়াই হাজার কেস ডায়েরি এখনও জমা পড়েনি।
কেস ডায়েরি কী?
বিচার চালাতে গেলে তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের মামলা সংশ্লিষ্ট যাবতীয় তথ্য-সম্বলিত কাগজপত্রকেই কেস ডায়েরি বলে। তদন্ত চলাকালীন যাবতীয় নথি এর মধ্যে থাকে। সরকারের তরফে গুরুত্বপূর্ণ নথি ওই কেস ডায়েরি। সরকার পক্ষের হয়ে আইনজীবীরা মামলা পরিচালনা করার সময় এই কেস ডায়েরিই তাঁদের একমাত্র সম্বল। আদালতে সাক্ষ্য নেওয়ার সময় কেস ডায়রিকেই হাতিয়ার করে তাঁদের এগোতে হয়। আদালত সূত্রের দাবি, কেস ডায়েরি না মেলায় বিচারের কাজই এগোতে পারছে না।
সরকার বদলের পর এই অফিসে কেস ডায়েরি বন্টনের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটার শিবনাথ অধিকারী জানান, বহু তাগাদা দিয়ে তাঁরা মাত্র হাজার দেড়েক কেস ডায়েরি হাতে পেয়েছেন। কিন্তু বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে তাঁরা মামলা করতে গিয়ে দেখেন, ওই মামলাগুলি অনেক আগেই নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছে। শিবনাথবাবুদের হিসেব অনুযায়ী, ১৮ জন সরকারি আইনজীবী একটিও কেস ডায়েরি ফেরৎ দেননি। আর অল্প কয়েকটি কেস ডায়েরি ফেরৎ দিয়েছেন এমন আইনজীবীর সংখ্যাও কম নয়।
নতুন পাবলিক প্রসিকিটার শ্যামাদাস গঙ্গোপাধ্যায় জানান যেহেতু জেলা শাসকের অনুমোদন সাপেক্ষে সরকারি আইনজীবী নিয়োগ হন, তাই তাঁদের কাছ থেকে কেস ডায়েরি ফেরৎ নিয়ে আসার দায়িত্ব তাঁরই। বিষয়টি গোচরে আনতে পুলিশ সুপারকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে মাত্র। যদিও কেস ডায়েরি উদ্ধারে পুলিশ সুপারের কোনও ভূমিকা নেই।
কেস ডায়েরি ফেরৎ আনার ব্যাপারে জেলাশাসক নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, “কেস ডায়েরি ফেরৎ না-পাওয়ার কথা শুনেছি। তবে আগের সরকারি আইনজীবীদের সেগুলি ফেরৎ দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।” কেস ডায়েরিতো সরকারি সম্পত্তি। তাই তা ফেরৎ না দিলে আইনের রাস্তা নেওয়া হবে। তা ছাড়া, ওই আইনজীবীদের বিলের টাকা আটকে রাখার কথাও ভাবা হচ্ছে বলে জেলাশাসক জানান।
আগের সরকারি আইনজীবীদের কেস ডায়েরি আটকে রাখার বিষয়ে পূর্বতন পিপি সুশীল চক্রবর্তী জানান, তিনি আগের সরকারি আইনজীবীদের কেস ডায়েরি ফেরৎ দিতে বলেছেন। সরকার যখন বদল হয়েছে আর কেস ডায়েরি ধরে রাখা সমীচিন নয় বলেও তিনি মনে করেন। |