অবস্থা বুঝে সাহায্য
কিংফিশারের হাল যাচাই করে দেখবে স্টেট ব্যাঙ্ক
ঙ্কটাপন্ন কিংফিশার এয়ারলাইন্স-কে আরও অর্থ সাহায্য করার আগে তাদের আর্থিক অবস্থা খতিয়ে দেখতে চায় স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই)। সেই লক্ষ্যে কাল, মঙ্গলবার বিমানসংস্থাটির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন এসবিআই-কর্তৃপক্ষ। অন্য যে সব ব্যাঙ্ক কিংফিশারকে ঋণ দিয়েছে, বৈঠকে থাকবেন তাদের প্রতিনিধিরাও।
রবিবার কলকাতায় বণিকসভা ‘অ্যাসোচ্যাম’-এর সভার ফাঁকে স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান প্রতীপ চৌধুরী বলেন, “কিংফিশারের ব্যবসার হাল ঠিক থাকলে ঋণ দিতে আপত্তি নেই। কিন্তু আরও ঋণ দেওয়া বা চালু ঋণ পুনর্গঠনের আগে ওদের আর্থিক হাল খতিয়ে দেখতে চাই। সংস্থার কতগুলো বিমান রয়েছে, সেগুলোর অবস্থা কী, বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও বিমানবন্দরের খরচ কত সব দেখা হবে।”
এসবিআইয়ের শীর্ষ কর্তা জানান, তাঁদের ব্যাঙ্ক ইতিমধ্যে কিংফিশারকে দেড় হাজার কোটি টাকা ঋণ জুগিয়েছে। কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য শুধু ঋণ পেলেই হবে না। সংস্থার আর্থিক ভিত্তিও মজবুত করতে হবে। কিংফিশার এয়ারলাইন্সের শেয়ার মূলধন বাবদ আরও ৮০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার কথা ছিল। তার মধ্যে সংস্থা বন্দোবস্ত করেছে চারশো কোটির। বাকিটার সংস্থান তাদেরই করতে হবে বলে এ দিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন প্রতীপবাবু।
উল্লেখ্য, এসবিআইয়ের নেতৃত্বে ১৩টি ব্যাঙ্ককে নিয়ে গঠিত কনসর্র্টিয়াম কিংফিশারকে মোট ৭৭০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল। ঋণ পুনর্গঠনের আগে সংস্থার আর্থিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে আরও বিশদে তথ্য চায় তারা। ব্যাঙ্কগুলোর সঙ্গে শুক্রবার এক দফা বৈঠকও করেছেন কিংফিশার এয়ারলাইন্সের কর্তৃপক্ষ।
আর্থিক অনটনের জেরে সম্প্রতি ‘লোকসানে’ চলা বিভিন্ন রুটে উড়ান বাতিল করে বিতর্কে জড়িয়েছে কিংফিশার এয়ারলাইন্স। এ পর্যন্ত আড়াইশো উড়ান বাতিল হয়েছে। এর জন্য কেন্দ্র এবং রাজ্যের ‘করের বোঝা’কেই দায়ী করেছেন কিংফিশারের কর্ণধার বিজয় মাল্য। প্রশ্ন তুলেছেন, লোকসানে চলা রুটেও উড়ান-পরিষেবা চালু রাখতে হবে কেন? সংস্থার দাবি: ২০১০-’১১ অর্থবর্ষে তাদের ১০২৭ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। মোট ঋণের বহর গিয়ে ঠেকেছে ৭০৫৭ কোটিতে।
এ হেন ‘সঙ্কট’ থেকে কিংফিশারকে উদ্ধার করতে তাদের ‘পাশে দাঁড়ানোর’ ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও বিমানমন্ত্রী ভায়লার রবি। রবির কথায় আভাস মিলেছিল যে, সরাসরি আর্থিক ত্রাণ প্রকল্পের পরিবর্তে কিংফিশারের পরিত্রাণে এগিয়ে আসার জন্য ব্যাঙ্কগুলোকে অনুরোধ করতে পারে কেন্দ্র। যদিও ‘প্রতিযোগিতামূলক বাজার অর্থনীতি’তে বেসরকারি সংস্থাকে বাঁচাতে সরকারি সহায়তার বিরোধিতা করেছেন বাজাজ অটো’র কর্ণধার রাহুল বজাজ। তাঁর কথায়, “যদি এটা মুক্ত বাজার অর্থনীতি হয়, তা হলে যারা টিকতে পারবে না, তাদের সরে যেতেই হবে।” কিংফিশারের জন্য সরকারি আর্থিক ত্রাণ প্রকল্পের বিরোধিতা করেছে বিজেপি, সিপিএম’ও।
সরকারের থেকে আর্থিক সহায়তার কথা অস্বীকার করলেও কিংফিশারের সিইও সঞ্জয় অগ্রবাল আগেই বলেন, বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে সংস্থা যে ঋণ নিয়েছে, তার ঊধ্বর্র্সীমা বাড়ানোর আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা। যদিও এ প্রসঙ্গে এখনই মন্তব্য করতে নারাজ আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক। তবে মুম্বইয়ে এ দিন ব্যাঙ্কের শীর্ষ কর্তা চন্দা কোছার জানান, কিংফিশারকে তাঁরা চারশো কোটি টাকার ঋণ দিয়েছেন। “অঙ্কটা খুব একটা বড় নয়, এবং বকেয়াও নেই।” বলেন তিনি।
কিংফিশারের উড়ান বাতিলকে ঘিরে সামনে এসেছে আরও কয়েকটা বিষয়। যেমন, করের বোঝা ও লোকসানের প্রেক্ষিতে দেশীয় বিমানসংস্থাতেও প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার দাবি তুলেছে অ্যাসোচ্যাম। তাদের মতে, বিমানসংস্থায় আর্থিক মূলধন জোগাতে এটাই একমাত্র রাস্তা। তাদের বক্তব্য, করের বিষয়টি নতুন করে দেখার পাশাপাশি নয়া বিমান-নীতি প্রণয়নও জরুরি।
তবে কোনও নির্দিষ্ট বিমানসংস্থা শুধু নয়, বিমান পরিষেবা ক্ষেত্রেই বিদেশি লগ্নির সম্পূর্ণ বিরোধী সিপিএম। দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের বক্তব্য, সে ক্ষেত্রে পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি বিদেশি বিমান-পরিষেবার হাতে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিমানমন্ত্রী অবশ্য জানান এ নিয়ে এক দিনে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। তাঁর মন্তব্য, “প্রস্তাব আসতে পারে। তখন ভাবা হবে।”
এই বিতর্কের মাঝে সাধারণ বিমানযাত্রী বা পর্যটন সংস্থাগুলো পড়েছে বিপাকে। এমনিতেই কিংফিশারের উড়ান বাতিল হওয়ায় যাত্রীদের সমস্যার অন্ত নেই। উপরন্তু অন্য বিমানসংস্থার ভাড়া চড়চড় করে বাড়ছে। বিভিন্ন পর্যটন সংস্থার অভিযোগ, কোনও কোনও মেট্রো শহরের রুটে ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। ফলে যাত্রীরা ভ্রমণ-পরিকল্পনা বাতিল করছেন, মার খাচ্ছে পর্যটন ব্যবসা। বোয়িং ইন্ডিয়া-র প্রেসিডেন্ট দীনেশ এ কেসকর অবশ্য সার্বিক ভাবে দেশের বিমানভাড়া বৃদ্ধিরই দাবি তুলেছেন। তাঁর যুক্তি: বিমানসংস্থাগুলোকে এখন টিকিটপিছু দৈনিক গড়ে ৯০০ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনতে হয়। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ভাড়া পুনর্বিবেচনার সময় এসেছে বলে মনে করছেন তিনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.