চুল কেটে সেলুন থেকে বাড়ি ফেরার পথে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে জখম হল এক স্কুলছাত্র। রবিবার দুপুরে বর্ধমানের বড়নীলপুরের ঘটনা। স্কুলে শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে এই সংঘর্ষে ওই ছাত্র ছাড়া আরও কয়েক জন জখম হন। পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “আহতদের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। ডিএসপি (সদর) ঘটনাস্থলে গিয়েছেন।” তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, “ঘটনার খোঁজ নিয়ে অভিযুক্ত দুই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বড়নীলপুরের আচার্য দুর্গাপ্রসন্ন বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক সুজিত চৌধুরী জানান, স্কুলে শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি নির্বাচনের জন্য ৪ নভেম্বর মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। শুভঙ্কর চক্রবর্তী নামে এক জন তৃণমূল কর্মী আগেই মনোনয়ন জমা দেন। তাই শিক্ষক, সরকারি প্রতিনিধি-সহ সংশ্লিষ্ট সকলে এক সঙ্গে বসে শুভঙ্করবাবুকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ঘোষণা করার কথা। সুজিতবাবু বলেন, “কিন্তু এ দিন তৃণমূল নেতা পরেশ সরকার আমাকে ফোন করে বলেন, তিনি এক জনকে পাঠাচ্ছেন। তাঁকে যেন আমি মনোনয়ন জমা দেওয়ার সুযোগ করে দিই। তারিখ পেরিয়ে গিয়েছে জানানো সত্ত্বেও তিনি তা মানতে চাননি। তাঁর লোক স্কুলে আসতেই গোলমাল শুরু হয়।” প্রধান শিক্ষক জানান, যেহেতু এ দিন ভোটাভুটির ব্যাপার ছিল না, তাই তিনি পুলিশি নিরাপত্তা চাননি। কিন্তু বোমা-গুলির শব্দ পেয়েই থানায় ফোন করেন। |
দুপুর আড়াইটে নাগাদ ওই বোমাবাজি চলার সময়ে এক বন্ধুর সঙ্গে সেলুন থেকে বাড়ি ফিরছিল স্থানীয় বাসিন্দা, বর্ধমান বিদ্যার্থী বয়েজ স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সৌমেন সাহা। জখম হয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি ওই ছাত্র জানায়, আচার্য দুর্গাপ্রসন্ন বিদ্যামন্দিরে কাছে প্রচুর ভিড় দেখে সে দাঁড়িয়ে পড়ে। আচমকা মুখে কালো কাপড় বাঁধা কয়েক জন লোক আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা নিয়ে ছোটাছুটি করছে দেখে সে পালাতে যায়। পিছনে প্রচণ্ড শব্দে বোমা ফাটতে থাকে। চারিদির ধোঁয়ার অন্ধকার হয়ে যায়। বন্ধু এগিয়ে গিয়েছে দেখে তাড়াতাড়ি পালানোর চেষ্টা করার সময়েই মাথার বাঁ দিকে কিছু এসে বিঁধে যায় বলে জানায় সে। রক্তাক্ত অবস্থায় সৌমেনকে হাসপাতলে নিয়ে যান স্থানীয় মানুষজন। শহরের তৃণমূল নেতা খোকন দাস জানান, আহত ছাত্রকে এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। তবে তার মাথায় গুলি না বোমার টুকরো, কী ঢুকেছে তা বলতে পারেননি চিকিৎসকেরা। পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় দুই মহিলা-সহ অন্তত চার জন জখম হয়েছেন।
আগেই মনোনয়ন জমা দেওয়া শুভঙ্করবাবু বলেন, “স্কুলের শিক্ষানুরাগী হতে গিয়ে যে প্রাণ সংশয় হবে, তা স্বপ্নেও ভাবিনি। পরেশবাবুর অনুগামীরা এই বোমা ও গুলি চালায়। কোনও রকমে প্রাণে বেঁচেছি।” জেলা তৃণমূল মহিলা সেলের নেত্রী শঙ্করী দে-র আবার অভিযোগ, “আমাদের সদস্যদের শ্লীলতাহানিও করা হয়েছে। হামলাকারীরা আগে সিপিএম করত। এখন তৃণমূলে ভিড়েছে। দলের উচিত, তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া।” তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল নেতা পরেশবাবুর পাল্টা দাবি, “শিক্ষানুরাগী পদের জন্য অন্য এক জন আমার প্রার্থী ছিলেন। তাঁকে চাপ দিয়ে কিছু লোক মনোনয়ন তুলতে বাধ্য করায় অনেকে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তার জেরে এমন ঘটে থাকতে পারে। আমি কাউকে মনোনয়ন জমা দিতে পাঠাইনি। আমাকে হেয় করতে একটা চক্রান্ত হচ্ছে।” তবে তিনি বলেন, “আমার লোকজন ঘটনার সঙ্গে জড়িত কি না আমার ঠিক জানা নেই। কেউ তো আর গোলমাল করার আগে আমার অনুমতি নিয়ে যায় না।” পুলিশ সুপার বলেন, “ঘটনায় জড়িত কয়েক জনের নাম জানা গিয়েছে। শীঘ্রই তাদের গ্রেফতার করা হবে।” |