২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করে শেষ পর্যন্ত কর্মবিরতি তুললেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তাররা।
শুক্রবার তাঁরা ঘোষণা করেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি তুলবেন না। সরকারের অন্য কোনও প্রতিনিধির সঙ্গে কথাও বলবেন না। কিন্তু শনিবার সেই অবস্থান থেকে সরে এসে রাত ৮টা নাগাদ কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার কথা জানিয়ে দিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁরা জানান, মরণাপন্ন রোগীদের কথা চিন্তা করেই তাঁরা সিদ্ধান্ত পাল্টেছেন। তবে দাবিগুলি লিখিত ভাবে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কর্মবিরতি উঠে যাওয়ার ঘটনাকে স্বাগত জানিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র বলেন, “সরকারের সঙ্গে সব রকম সহযোগিতা করার কথা বলেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। কলকাতা পুলিশকেও ধন্যবাদ। কারণ, তারা দ্রুত ফাঁড়ির ইনচার্জকে সরিয়ে দিয়েছেন।” কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্বাস্থ্যসচিব বলেন, “হাসপাতালের নিরাপত্তা বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে যাতে ভবিষ্যতে ডাক্তারদের হেনস্থা না হতে হয়।”
|
তখনও চিকিৎসার অপেক্ষায় —নিজস্ব চিত্র |
হাসপাতালে নিরাপত্তা এবং ইমার্জেন্সিতে যথেষ্ট পরিমাণ ওষুধ ও চিকিৎসার অন্যান্য সামগ্রী দেওয়ার দাবিতে গত তিন দিন ধরে কর্মবিরতি পালন করছিলেন ন্যাশনালের জুনিয়র ডাক্তারেরা। কিন্তু জেলা সফর থেকে ফিরে মুখ্যমন্ত্রী আদৌ তাঁদের সঙ্গে দেখা করবেন কি না, সেই বিষয়ে শুক্রবার থেকেই সংশয় দেখা দিয়েছিল। তাঁদের অনেকেই মনে করছিলেন, দাবি-দাওয়া যতই সঙ্গত হোক, রোগীদের অসুবিধা হওয়ায় এই ধরনের আন্দোলনে জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে পারে রাজ্য সরকার। সেই আশঙ্কা থেকে এ দিন সকালেই কিছু জুনিয়র ডাক্তার কর্মবিরতি ভেঙে হাসপাতালের ডিউটিতে যোগ দেন। আন্দোলনের সুর কেটে গিয়েছিল তখনই।
সরকারের এক মুখপাত্র জানান, রাজ্য প্রথম থেকেই ঠিক করেছিল ন্যাশনালের সমস্যা প্রশাসনিক ভাবে দেখা হবে। এবং ডাক্তারদের দাবি মেনে মুখ্যমন্ত্রীর যে হাসপাতালে যাওয়ার সম্ভাবনা বা প্রশ্নই নেই, সেই বার্তাও সন্ধ্যেবেলায় পৌঁছে যায় জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে। আর তার পরেই তাঁরা কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এর আগে এ দিন সকালে হাসপাতালের কাজ সচল রাখতে অন্য হাসপাতাল থেকে ১২ জন মেডিক্যাল অফিসার আনার পাশাপাশি দফায় দফায় জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠক করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যেরা। বার বার খবর আসে কর্মবিরতি উঠে যাচ্ছে।
কর্মবিরতি উঠে যাওয়ার পরে প্রশ্ন উঠেছে, জুনিয়র ডাক্তারদের দাবিদাওয়া নিয়ে এ বার কী পদক্ষেপ করবে রাজ্য? কারণ, গত কয়েক দিন ধরেই জুনিয়র ডাক্তারেরা অভিযোগ জানাচ্ছিলেন, হাসপাতালে গজ-ব্যান্ডেজ, তুলো, স্পিরিট ইত্যাদি সব কিছুরই অভাব রয়েছে। ইমার্জেন্সিতে আহত বা অসুস্থ রোগী এলে দ্রুত চিকিৎসার পরিবর্তে রোগীর সঙ্গীদের সেই সব কিনতে পাঠাতে হয়। স্বভাবতই রোগীর আত্মীয়দের যাবতীয় রোষ গিয়ে পড়ে সামনে থাকা জুনিয়র চিকিৎসকদের উপর।
তাঁরা অভিযোগ করেন, সামান্য রক্তচাপ মাপার যন্ত্রেরও অভাব রয়েছে হাসপাতালে। ইমার্জেন্সিতে রাতবিরেতে সেই যন্ত্র পেতেও সমস্যা হয়। সমস্যা হয় অক্সিজেন পেতেও। রক্ত নেওয়ার সময় ‘টোর্নিকেট’ নামে একটা জিনিস দিয়ে হাত বেঁধে নিতে হয়। তার অভাবে রক্তমাখা ছেঁড়া গ্লাভস দিয়ে হাত বেঁধে অনেক চিকিৎসক রক্ত নেন। তার জন্যও একাধিক বার জনরোষে পড়তে হয়েছে তাঁদের। অভিযোগ, গুরুতর রোগী এলে ইমার্জেন্সিতে রেসিডেন্সিয়াল মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও)দের খুঁজে পাওয়া যায় না। এই ব্যাপারে ন্যাশনালের অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, “জুনিয়র ডাক্তারেরা আমাদের ভালবাসার সম্পদ। ওঁরা কর্মবিরতি তুলে নেওয়ায় আমরা নিশ্চিন্ত হলাম। পাশাপাশি ওঁদের দাবিদাওয়া স্ট্যান্ডিং কমিটির সঙ্গে আমরাও শুনেছি। সেগুলি পূরণের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।” তিনি বলেন, “এত বড় পরিকাঠামো চালাতে কখনও-কখনও বোঝাপড়ার অভাব হয়ে যায়। ভবিষ্যতে ইমার্জেন্সিতে যাতে কোনও অসুবিধা না-হয় সেই চেষ্টা করা হবে।”
|
ছাত্রীর প্রতি দুর্ব্যবহার, উত্তাল হাসপাতাল
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
নার্সিং কলেজের এক ছাত্রীর প্রতি দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদে উত্তাল হল রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতাল। হাসপাতালের নার্সিং কলেজের এক ছাত্রী অসুস্থতার পরে গতকাল কাজে যোগ দিতে এলে, কলেজের ভাইস-প্রিন্সিপ্যাল তাঁর সঙ্গে দুব্যর্বহার করেন বলে অভিযোগ। ওই ছাত্রী নোংরা জামাকাপড় পরে ছিলেন বলে তাঁর জামাকাপড় ছিঁড়ে দেওয়া হয়। নগ্ন করে গোটা কলেজে ঘোরানোর হুমকিও দেওয়া হয়। প্রতিবাদে কাল রাত থেকেই বিক্ষোভে বসেন নাসির্ং কলেজের ছাত্রীরা। এই কলেজের অধিকাংশ ছাত্রীই পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণের রাজ্যগুলি থেকে দিল্লিতে পড়াশোনা করতে এসেছেন। আজ দুপুর পর্যন্ত তাঁদের বিক্ষোভ চললেও, কলেজ কর্তৃপক্ষ তাতে কান দেয়নি। শেষে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেত্রী বাণী ত্রিপাঠী কলেজে যান। তাঁর নেতৃত্বে ছাত্রীরা মিছিল করে সংসদ মার্গ থানায় এসে অভিযোগ জানান। প্রথমে পুলিশ অভিযোগ নিতে রাজি না হলেও শেষ পর্যন্ত ছাত্রীদের বিক্ষোভের মুখে অভিযোগ নেওয়া হয়। কলেজের ভাইস-প্রিন্সিপ্যালের পাশাপাশি হোস্টেলের মেট্রন ও সুপারিটেন্ডেন্টের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। নাসির্ং কলেজ বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, নিয়ম মাফিক তদন্ত চলবে। |